বিদ্যার্থীদের বেশি শ্রম দিয়ে পঠন-পাঠন করা দরকার। কোনও সংস্থায় যুক্ত হলে বিদ্যায় বিস্তৃতি ঘটবে। কর্মপ্রার্থীরা ... বিশদ
রিললাইফের আশালতাদেবী কিন্তু এতটা কঠোর সিদ্ধান্ত নেননি। ছেলে-বউমার সংসারে তিনি যে অবাঞ্ছিত, গলগ্রহ — সেটা ধীরে ধীরে তাদের বুঝতে পারছিলেন আশালতা। এ নিয়ে কোনও রকম অশান্তির পথে না গিয়ে একদিন প্রাতঃভ্রমণের সঙ্গী, বৃদ্ধ বয়সের ‘বন্ধু’ মণিময়ের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে ওঠেন তিনি। সঙ্গে নিয়ে যান তাঁর স্বামীর বাড়ির দলিলটি। অরুণিমা দে প্রযোজিত ও পরিচালিত তুমি ও তুমি কাহিনীচিত্রটি কিন্তু নারীর আপোসহীনতার কথাই বলে। অরুণিমা তাঁর কাহিনীতে আশালতাকে হতাশায় ভরিয়ে তুলে আত্মহত্যার পথে টেনে নিয়ে যাননি। বরং তিনি বলতে চেয়েছেন মেয়েরাও কোনও অংশে কম নয়। অথচ জন্মের পর থেকে মায়েরাই তাঁর কন্যা সন্তানদের হীনমন্য করে তোলেন। এটা করো না, ওটা করতে নেই, সেটা ছেলেদের ব্যাপার, তুমি রান্নাবাটি খেলো, পড়াশোনার সঙ্গে ঘরকন্যা করতে শেখো ইত্যাদি। অরুণিমার মতে,‘মায়েদের স্মার্ট হতে হবে। শুরু থেকে শেখাতে হবে মেয়েরাও পুরুষের সমকক্ষ। তারা পুরুষদের অনুকম্পার পাত্র নয়।’
সম্প্রতি বাইপাসের ধারে একটি স্টুডিওতে ছবির গুরুত্বপূর্ণ কিছু দৃশ্যের শ্যুটিং হয়ে গেল। স্পটে গিয়ে জানা গেল, প্রৌঢ় আশালতার মর্নিংওয়াকের প্রায় সমবয়স্ক ও সমমনস্ক বন্ধু ‘মণিময়’ ওরফে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় অসুস্থতা বোধ করায় নিজের অংশটুকুর তড়িঘড়ি শ্যুটিং সেরে বাড়ি চলে গিয়েছেন। ‘শট’ দিচ্ছেন একা ‘আশালতা’ লিলি চক্রবর্তী। শ্যুটিং-এর ফাঁকে, স্বল্প অবসরে তিনি মনে করিয়ে দিলেন, ‘মনে রাখা দরকার ওদেরও বয়স হবে। আজ তোমরা বাবা-মায়ের সঙ্গে যে ব্যবহার করছ, একদিন তোমার ছেলেমেয়েরাও তোমার সঙ্গে একই ব্যবহার করতে পারে। সেটা বুঝে তোমরা সেই রকমভাবে চলো।’ এই বিষয়ে কী বলছে আজকের প্রজন্মের নারী? আশালতার বউমা ‘সুজাতা’ চরিত্রে অভিনয় করছেন মৌসুমী দাস। তাঁর স্বীকারোক্তি, ‘জীবন এখন অনেক ফাস্ট হয়ে গিয়েছে। তাই আমাদের বউমা বা ছেলেদের সঙ্গে তাল রাখতে পারছেন না প্রবীন প্রজন্ম। এটা যেমন সত্যি, তেমন এটাও ঠিক, আমরা এখন নিজেদেরকে নিয়ে ভাবতেই বেশি ব্যস্ত। সেইজন্য বাবা-মায়েদের আশা প্রত্যাশার সূক্ষ্ম অনুভূতিগুলো হয়তো ঠিক অনুভব করতে পারছি না। এই আত্মকেন্দ্রিকতা, নিউক্লিয়ার হয়ে থাকার বাসনার মোহে আমাদের বাবা-মায়েদের ভালো রাখার দায়িত্বের কথাটাও অনেক সময়ে ভুলে যাচ্ছি। ফলে একটা বিরাট দূরত্ব তৈরি হচ্ছে। সেটা ঠিক নয়।’
আশালতার গল্পটি ছবির শেষ অংশ। তিনটি গল্প নিয়ে তৈরি হচ্ছে ‘তুমি ও তুমি’। জীবনের তিনটি স্তর। প্রথম স্তর, একটি কন্যার জন্ম থেকে কৈশোর পর্যন্ত, মেয়েদের বিবাহিত জীবন নিয়ে ছবির পরবর্তী স্তর এবং শেষে বার্ধক্য। প্রথমে বাবা-মায়ের স্নেহ-শাসনে, তারপরে স্বামীর, অন্তিমে ছেলে-বউমার অধীনে। একটি মেয়ের গোটা জীবনটাই কেন পরের মুখাপেক্ষী হয়ে কাটবে, সেটাই প্রশ্ন অরুণিমার। তাই তিনি তাঁর প্রথম বড় ছবির বিষয় হিসেবে নারী শক্তির উজ্জীবনের কাহিনীই ভেবেছেন। প্রথমে ‘গুঞ্জনের গল্প’, তারপর ‘সিঁদুরের গল্প’, সব শেষে ‘আশালতা-মণিময়ের গল্প’। একজন অ্যাকাডেমি পুরস্কার প্রাপ্ত লেখিকার কলমে দর্শক গল্পগুলো পর্দায় প্রতিফলিত হতে দেখবেন। কাহিনী বিন্যাস, চিত্রনাট্য ও সংলাপ লিখেছেন শঙ্কর দাশগুপ্ত। তিনি এই ছবির সৃজনশীল উপদেষ্টাও। প্রধান উপদেষ্টা আশিস মিত্র। ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর সোমনাথ শর্মা। ক্যামেরায় আছেন সন্দীপ সেন। সঙ্গীতে সন্দীপ সিংহ। তিনটি গল্পে অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী, অনুরাধা রায়, রজত গঙ্গোপাধ্যায়, অর্পিতা দত্তচৌধুরী, রূপকথা দাশগুপ্ত প্রমুখ। ডিজি ম্যাক্স নিবেদিত ছবিটি মুক্তি পেতে পারে পুজোর সময়।