উপস্থিত বুদ্ধি ও সময়োচিত সিদ্ধান্তে শত্রুদমন ও কর্মে সাফল্য। ব্যবসায় গোলযোগ। প্রিয়জনের শরীর-স্বাস্থ্যে অবনতি। উচ্চশিক্ষায় ... বিশদ
এই ছবিতে ভিঞ্চিদা নামেই আপনার পরিচিতি। কিন্তু চরিত্রটার আসল নামটা কী বলুন তো?
এই রে! (একটু ভেবে) না মনে পড়ছে না (হাসি)।
আচ্ছা তাহলে ভিঞ্চিদা নাম কেন?
লিওনার্দো ভিঞ্চি বলেছিলেন শিল্পই বিজ্ঞান আর বিজ্ঞানই শিল্প। চরিত্রটা মেকআপ শিল্পী ও লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির ভক্ত। সেই থেকেই ভিঞ্চিদা।
ছবির গল্পের মূল ভাবনা আপনার। আইডিয়াটা কীভাবে আসে?
লেখার সঙ্গে আমি বহুদিন জড়িয়ে রয়েছি। ‘জিও কাকা’ বা ‘চকলেট’ ছবির গল্পও আমার লেখা। আমি দেখেছি সারা পৃথিবীতে মেকআপ আর্টিস্ট নিয়ে কোনও ছবি তৈরি হয়নি। প্রচলিত ধারণা, কালোকে সাদা করা বা খারাপকে সুন্দর করাই মেকআপ আর্টিস্টের একমাত্র কাজ! অভিনেতার সবথেকে বিশ্বাসযোগ্য মানুষ কিন্তু একজন মেকআপ আর্টিস্ট। এই গল্পটাও অনেকদিন মাথায় ছিল। ধীরে ধীরে পূর্ণতা পায়।
টলিউডের কোনও নির্দিষ্ট মেকআপ আর্টিস্ট কি এই ছবির অনুপ্রেরণা?
একজন নয়। যাঁদের কাজ দেখে আমি বড় হয়েছি সেরকম অনেকেই রয়েছেন। যেমন ধরুন দেবীপ্রসাদ হালদার বা সোমনাথ কুণ্ডু। দেখুন পারফর্মার রিপিট করেন, শিল্পী জন্ম দেন। একটা ঘটনা মনে পড়ছে। ‘ব্যোমকেশ পর্ব’ ছবিতে ব্লাস্টে আমার শরীর পুড়ে যাওয়ার কথা। প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে প্রস্থেটিক মেকআপ করেছিল সোমনাথ। কিন্তু সেই মেকআপটা এতটাই বিভৎস হয়ে উঠল যে সেন্সর বোর্ডের কথা মাথায় রেখে পরিচালক দূর থেকে শট নিতে বাধ্য হলেন। অভিযোগ করেনি, কিন্তু শটের পরে সোমনাথকে বলতে শুনেছিলাম ‘যখন দেখানোই যাবে না তখন ভাবতে বলল কেন কে জানে!’ ওর চোখে তখন জল।
বুঝলাম। কিন্তু নিজের লেখা থ্রিলার তো নিজেই পরিচালনা করতে পারতেন?
আমি তো পরিচালক নই। সৃজিত সফল থ্রিলার বানিয়ে নিজেকে বারবার প্রমাণ করেছে। লেখার পর মনে হচ্ছিল গল্পটা আর একটু ভালো হতে পারত। অনেকের সঙ্গেই কথা বলেছিলাম। কিন্তু শিল্প এবং রক্ত একটা গল্পে মিশে রয়েছে সেটা ফুটিয়ে তোলার জন্য সৃজিত ছাড়া আর কোনও বিকল্প পরিচালক ছিল না। ছবির প্রয়োজনে সৃজিত কিছু রদবদল করেছে। কাহিনীকার হিসেবে আমাদের দু’জনেরই নাম রয়েছে।
ভিঞ্চিদা চরিত্রে আপনাকে বেছে নেওয়ার সিদ্ধান্তটাও কি সৃজিতের?
হ্যাঁ সৃজিতের।
‘চ্যাপলিন’ এর পর অনেকজল গড়িয়েছে। অনেকদিন পর আপনি আবার ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্র, পার্শ্বচরিত্র নয়। কী বলবেন?
সেদিক থেকে আমি অনেকের থেকে ভাগ্যবান। কারণ এই দীর্ঘসময় বিভিন্ন স্বাদের চরিত্র করতে পেরেছি। গর্ব করে বলতে পারি এই মুহূর্তে যে কতিপয় অভিনেতার উপর প্রযোজক বা পরিচালকরা বিশ্বাস করেন এবং দর্শক মেনে নেন তাঁদের মধ্যে আমি একজন। কে থাকবে কে থাকবে না, সেটা দর্শকই নির্ধারণ করেন।
ইন্ডাস্ট্রিতে এতগুলো বছর কাটালেন। নানা স্বাদের চরিত্র। কখনও কি মনে হয়েছে যে টলিউড আপনাকে যথাযথভাবে ব্যবহার করেনি?
দেখুন পরিশ্রম করতে আমি ভয় পাই না। কিন্তু ধরুন পুষ্টিকর খাবার যেটা অম্বল তৈরি করবে না সেটা কিনে ফ্রিজে রেখে দিলে তো আমার কিছু করার নেই! আশপাশে যাঁদের নিয়ে লাফালাফি হচ্ছে সেটা তাঁদের ভাগ্য। আমি বিষয়টাকে এইভাবেই দেখতে চাই। না হলে আজকে রাজেশের (শর্মা) মতো অভিনেতাকে মুম্বই চলে যেতে হয়!
আর আপনার হিন্দি ছবি?
দেখুন যখন নাসিরুদ্দিন শাহ বা বিদ্যা বালনের মতো অভিনেত্রী প্রকাশ্যে বাংলা ছবিতে অভিনয়ের জন্য আমার প্রশংসা করেন তখন কার না ভালো লাগে বলুন তো। ভালো অফার পেলে নিশ্চয়ই হিন্দি ছবি করব।
ইন্ডাস্ট্রিতে তো এটাও বলা হয় যে যত খারাপ অবস্থাই হোক না কেন রাজ চক্রবর্তী ও সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের দরজা রুদ্রনীলের জন্য সবসময় খোলা। এটা কী বন্ধুত্বর খাতিরে নাকি স্বজনপোষণ?
ইন্ডাস্ট্রিতে দু রকমের বন্ধুত্ব তৈরি হয়। ইমোশনাল এবং পেশাদারি। রাজের সঙ্গে আমার ইমোশনাল বন্ধুত্ব। আমরা প্রায় একসঙ্গে কেরিয়ার শুরু করেছিলাম। ঝগড়া হয়, কথা বন্ধ হয়। আবার কথা শুরু হয়। সৃজিতের সঙ্গেও ঠিক তেমনই। কৌশিকদার সঙ্গেও তাই।
কেরিয়ারের এই সময় দাঁড়িয়ে নিজেকে কীভাবে দেখছেন?
পায়ের নীচের জমি খুবই শক্ত। আসলে সময়ের সঙ্গে মানুষ একটা ফ্যাশনকে গ্রহণ করেন, আবার সময় হয়ে গেলে সেটাকে বর্জন করেন। সেখানে দাঁড়িয়ে বলতে পারি দর্শক আমাকে এখনও তাঁতের শাড়ির মতো গুছিয়ে তুলে রেখেছেন।
নাটক থেকে আপনার যাত্রা শুরু। ফিরতে ইচ্ছে করে না?
ইচ্ছে তো করেই। কিন্তু তার আগে বাস্তবকে বুঝতে হবে। বাঁচতে গেলে নূন্যতম আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য প্রয়োজন। দুঃখের কথা আজকে বাংলা থিয়েটার সেটা আমাকে দেয় না। এর মধ্যে তো কোনও অন্যায় নেই।
শ্রীকান্ত মোহতা গ্রেপ্তার হওয়ার পর আপনার ফেসবুক পোস্ট নিয়েও তো কম জল ঘোলা হয়নি।
আমার বক্তব্য সহজ। তিনি কিন্তু শুধুই প্রযোজক ছিলেন না। পরিচালক বাবা হলে প্রযোজক মায়ের মতো। ওঁর মতো শিল্প ও বাণিজ্যকে মিশিয়ে দেওয়ার মতো মেধাসম্পন্ন মানুষ আজকে ইন্ডাস্ট্রিতে প্রায় নেই বলেলেই চলে। আজকে এটুকু জানি যে মানুষ যাঁদের শ্রীকান্তের প্রতিপক্ষ হিসেবে জানে সেই প্রযোজকরা আজকে সবথেকে বেশি শ্রীকান্তকে মিস করছেন।
অনেকেই জানতে চান যে রুদ্রনীল ঘোষ কবে বিয়ে করবেন?
ইন্টারেস্টিং প্রশ্ন। কিছুদিন পর পর মনে হয় বিয়েটা এবারে করেই ফেলি। তারপর যাকেই পছন্দ করলাম দেখা যায়, হয় তার বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে অথবা আমাকে এতটাই জাপটে ধরার চেষ্টা করল যে আমার দম আটকে আসছে (হাসি)। আসলে আমি সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটু স্বাধীনতা পছন্দ করি।
কিন্তু নতুন প্রজন্মর সঙ্গে সোশ্যাল নেটওয়ার্কই হোক বা সাক্ষাতে আপনি খুব ভালো যোগাযোগ রাখেন বলে শোনা যায়। আপনাকে অনেকে খুবই পছন্দ করেন।
আমি জানি তাঁরা আমার অভিনয় পছন্দ করেন। সেটা বাদ দিলে তো আমি সাধারণ মানুষ। কারণ জানি যেদিন রাতে সানগ্লাস পড়ে ঘুরে বেড়াব সেদিন তাঁদের ভালোবাসা হারাবো! আর আমি সেটা করতে চাই না।
অভিনন্দন দত্ত