উপস্থিত বুদ্ধি ও সময়োচিত সিদ্ধান্তে শত্রুদমন ও কর্মে সাফল্য। ব্যবসায় গোলযোগ। প্রিয়জনের শরীর-স্বাস্থ্যে অবনতি। উচ্চশিক্ষায় ... বিশদ
ক্যামেরা জায়গা বদল করবে। সেই অবসরে রাজা জানালেন, ছবির নাম ‘হারানো প্রাপ্তি’। মূলত প্রেমের ছবি। তবে, প্রেমের পরতে পরতে থাকছে থ্রিলারের উত্তেজনা। ব্যাপারটা কেমন? রাজার ভাষায়, ‘মৈনাক থাকে বিদেশে। সেখানেই চাকরি করে সে। ছুটি নিয়ে কলকাতায় আসে। এই শহরেই থাকে তার প্রেমিকা নম্রতা। একটি ছোট ঘটনা আচমকা বদলে দেয় মৈনাকের জীবন। একদিন শহরের একটি নির্জন পথ থেকে মৈনাক একজন ধর্ষিত নারীকে উদ্ধার করে। জানতে পারে মেয়েটির নাম মায়া। স্বাভাবিক কৌতূহলেই সে মায়ার সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়তে থাকে। জানতে পারে মায়া একটি ভয়ঙ্কর নারী পাচারকারী চক্রের জালে ফেঁসে গিয়েছে।’ এমন একটি গল্প নিয়ে (কাহিনী-চিত্রনাট্য পদ্মনাভ দাশগুপ্ত) ছবি তৈরির উদ্দেশ্যও একইসঙ্গে ব্যাখ্যা করলেন পরিচালক। বললেন, ‘প্রায় প্রতিদিনই খবরের কাগজে, সোশ্যাল মিডিয়াতে, বিভিন্ন নিউজ চ্যানেলে নানাভাবে নারী লাঞ্ছনার কাহিনী দেখি বা পড়ি। এবং ভুলেও যাই। কিন্তু একটু তলিয়ে দেখলেই বোঝা যাবে, অধিকাংশ ঘটনার পেছনে রয়েছে কোনও না কোনও দুষ্টচক্র। নারী পাচার যে কোনও সাধারণ ঘটনা নয়, সমাজের একটা মারাত্মক ক্ষত সেটা আমি চোখে আঙুল দিয়ে দেখাতে চাই।’ ছবির নায়ক কীভাবে এমনই এক চক্রের পিছনে ধাওয়া করে গোটা সমস্যার সমাধান করে এবং তার মধ্যে থেকে কীভাবে প্রকৃত ভালোবাসা খুঁজে পায়, সেটাই ‘হারানো প্রাপ্তির’ মূল উপজীব্য।
কে এই মায়া? মৈনাকের কৌতূহল ক্রমশ বাড়ছে। তাকে ধাওয়া করতে করতে সে এসে পৌঁছেছে গঙ্গার পাড়ে বসা একটি বাজারে। দূর থেকে মায়াকে দেখতে পায় মৈনাক। থমকে যায় সে। এই কি সেই মায়া, যাকে রাস্তা থেকে উদ্ধার করেছিল সে? ঠিক মেলাতে পারে না মৈনাক। তাহলে কি মায়া কোনও রহস্যময়ী? — এই অংশটুকুই নানা কোণ থেকে ক্যামেরাবন্দি করে লাঞ্চ ব্রেক দিলেন পরিচালক। শটে মৈনাক নেই। মায়ার অংশগুলিই ‘টেক’ করা হল শুধু।
শট দিয়ে রোদে ঝলসানো লাল মুখ নিয়ে ঘাট সংলগ্ন চাতালের ছায়ায় পাখার পাশে চেয়ার টেনে বসলেন তনুশ্রী চক্রবর্তী। মায়া চরিত্রে অভিনয় করছেন তিনি। জল খেয়ে একটু জিরিয়ে নিয়ে মায়া ওরফে তনুশ্রী বললেন, ‘দুর্ভাগ্য যে রোজই কোনও না কোনও মেয়ে চিরদিনের জন্য নিখোঁজ হয়ে যাচ্ছে। আমরা কিচ্ছু করতে পারছি না। মায়া তেমনই এক মেয়ের গল্প। গ্রাম থেকে এসেছিল চাকরির খোঁজে। প্রতারিত হয় এবং তাকে পাচার করে দেওয়া হয়।’ চরিত্রটা ফুটিয়ে তোলার জন্য কতটা পর্যবেক্ষণের মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে? উত্তরে তনুশ্রী বললেন,‘এই ধরনের চ্যালেঞ্জিং রোল আমি এই প্রথম করছি। আসলে পাচারচক্রের হাত থেকে উদ্ধার পাওয়া কয়েকজন মেয়ের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হয়েছিল আমার। সেই অভিজ্ঞতাটাই আমি কাজে লাগিয়েছি।’ এই ছবি ঘিরে অনেকগুলি ‘প্রথম’ আছে তনুশ্রীর কেরিয়ারে।
যেমন, এই প্রথম তিনি রাজা চন্দর সঙ্গে কাজ করছেন। দুই, এই প্রথম তিনি পুরোপুরি বাণিজ্যিক ছবিতে অভিনয় করছেন। এবং তিন, এই প্রথম তিনি সোহমের সঙ্গে বড় পর্দায় অভিনয় করছেন। যদিও ছবির ক্ষেত্রে কমার্শিয়াল-প্যারালাল এমন বিভাজনে একেবারেই বিশ্বাসী নন তনুশ্রী। ‘হারানো প্রাপ্তি’কে তো কোনওভাবেই মূল বাণিজ্যিক ধারার ছবি বলতে নারাজ নায়িকা। কারণ, তনুশ্রীর মতে, ‘এটা একেবারে মৌলিক গল্প। খুবই বাস্তবধর্মী ছবি।’ খুঁতখুঁতে নায়িকার এমন একটি চরিত্রে অভিনয় করতে রাজি হওয়ার পিছনে অন্যতম কারণ, ‘রাজাদা’।
রাজা চন্দর সঙ্গে এই নিয়ে ছ’নম্বর ছবি হয়ে গেল সোহমের। পায়েল সরকারের (নম্রতা) সঙ্গে এর আগে একাধিকবার জুটি বেঁধে কাজ করলেও তনুশ্রীর সঙ্গে প্রথম অভিনয় করছেন সোহম। ‘তনুশ্রী খুব ভালো অভিনেত্রী’ সহ নায়িকাকে এক বাক্যে সার্টিফিকেট দেন বাংলা ছবির পোড়খাওয়া অভিনেতা-নায়ক। ‘হারানো প্রাপ্তি’তে ‘হিরো’ মৈনাক চরিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে সোহমের বার্তা, ‘এমন দুর্ভাগ্যজনক ঘটনার খবর প্রায়ই আমরা দেখছি, পড়ছি। সমাজকে সাবধানে থাকতে হবে। সজাগ থাকতে হবে। একইসঙ্গে যাঁরা এভাবে অত্যাচারিত হচ্ছেন, তাঁদেরকে অবজ্ঞার চোখে না দেখে, তাঁদের পাশে এসে দাঁড়াতে হবে।’ এদিন পায়েলের কোনও শট না থাকলেও ছিলেন উদয়প্রতাপ সিং (আসলাম) ও আয়ুষী তালুকদার (জাহিদা)। এছাড়াও একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে আছেন সৌরভ দাস। ছবির গান ও কিছু দৃশ্যের শ্যুটিং হতে পারে লন্ডনে। সুর করেছেন ডাব্বু।
ছবি: ভাস্কর মুখোপাধ্যায়