পারিবারিক সম্পত্তি সংক্রান্ত আইনি কর্মে ব্যস্ততা। ব্যবসা সম্প্রসারণে অতিরিক্ত অর্থ বিনিয়োগের পরিকল্পনা। ... বিশদ
হোয়াইট হাউস দেখেছিল রিপাবলিকান দলের আর এক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে। রিয়েলিটি শোর অভিনেতা। কেউ কেউ কৌতুক করে বলতেন, রেগ্যানের মতো ট্রাম্পও হয়তো ভেবেছেন, তিনি এখন টিভির রিয়েলিটি শোতে প্রেসিডেন্টের ভূমিকায় অভিনয় করছেন। হোয়াইট হাউসে ঢোকার মাত্র দু’দিনের মাথায় তাঁকে শুনতে হয়েছিল স্লোগান, ‘এই প্রেসিডেন্ট আমাদের নয়।’ সর্বত্র প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল—‘ভয়ে আর হিংসায় কুঁকড়ে থাকা এই আমেরিকা আমার নয়।’
মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প যেদিন শপথ নিয়েছিলেন, সেই ২০ জানুয়ারি, ২০১৭ তারিখেই অবশিষ্ট পৃথিবীর জন্য নিজেদের দরজা-জানালা বন্ধ করে দেওয়ার তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছিল আমেরিকা। বিশ্বায়নের বিপরীত দিশায় রাষ্ট্রটির এক নতুন যাত্রার সূচনা হয়েছিল। দশকের পর দশক ধরে গোটা বিশ্বকে আপন করে নিয়েছে যে আমেরিকা, সেই দেশে ধর্মীয় বিভাজনের আমদানি করেছিলেন ট্রাম্প। মেক্সিকো সীমান্তে শুধু নয়, দুনিয়াজুড়েই সবচেয়ে বড় প্রাচীর তুলতে চেয়েছিলেন। সেই প্রাচীর বিভাজনের, যেখানে আমেরিকা এবং আমেরিকার নাগরিকই এক ও একমাত্র অগ্রাধিকার। বিশ্বায়নের শ্রেষ্ঠ ধারক এবং বাহক হয়ে গোটা বিশ্বের পথপ্রদর্শক যে আমেরিকা, সে কি আচমকা সম্পূর্ণ বিপ্রতীপ দিশায় দৌড়তে পারবে? ট্রাম্প বলেছিলেন, পারবে। পারতেই হবে। ডিগ্লোবালাইজেশন চর্চায় উদ্বেল ছিল আমেরিকা। চারদিকে তখন প্রশ্ন একটাই, কী হবে, কী হবে?
ডিগ্লোবালাইজেশন শুধু বাজার ঠিক করে দিচ্ছে না। দিচ্ছে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, কিংবা গণভোটের মতো মানুষের সম্মিলিত রায়ও। যেমন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের নির্বাচন। ডিগ্লোবালাইজেশন কতটা ধাক্কা দিতে পারে তা বোঝার জন্য বিশ্বপুঁজি তখন নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে জল মাপছে। আর ট্রাম্প? ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেন’ স্লোগান দিয়ে হোয়াইট হাউসের দৌড় শুরু করেছেন।
মার্কিন রাজনীতিতে ট্রাম্পের আবির্ভাব একজন সফল ব্যবসায়ী হিসেবে। দেশের অর্থনীতিকে ঠিক পথে ফেরাতে নিজেকেই সবচেয়ে যোগ্য লোক হিসেবে প্রচার করেছিলেন প্রকাশ্যে। কিন্তু নিউ ইয়র্ক টাইমস ফাঁস করেছিল, অর্থনীতি পুনর্গঠন ও ব্যবসার কেন্দ্র হিসেবে আমেরিকাকে প্রতিষ্ঠা করার লড়াইয়ের স্বঘোষিত সেনাপতি ট্রাম্প নিজেই কর ফাঁকি দিয়েছিলেন। বছরের পর বছর।
রিয়েলিটি শো ‘দ্য অ্যাপ্রেনটিস’-এ পান থেকে চুন খসলেই বিচারক ট্রাম্প বলে উঠতেন, ‘ইউ আর ফায়ারড’। তা নিঃসন্দেহে কঠোর প্রশাসক হিসেবে তাঁর একটি ভাবমূর্তি তৈরি করেছিল। সমর্থকদের কাছেও নিজেকে সেভাবেই একজন ‘লৌহমানব’ হিসেবে তুলে ধরেছেন তিনি। তাই বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন শহরে হিংসা ছড়িয়ে পড়লে ট্রাম্প অনায়াসে বলতে পারেন সেনা মোতায়েনের কথা। তাঁর শাসনকালে বিশ্বের কাছে মাথা নিচু হয়েছিল আমেরিকার। এই সত্যে কোনও বিভ্রান্তি নেই। উত্তর কোরিয়াকে উস্কে দেওয়া কিংবা একতরফাভাবে জেরুজালেমকে ইজরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার মধ্য দিয়ে ট্রাম্প প্রমাণ করেছিলেন, সামরিক ব্যয় কমানোর কোনও ইচ্ছাই তাঁর ছিল না। যথেচ্ছ সামরিক ব্যয়, নেট নিউট্রালিটির অবসান, মাত্রাতিরিক্ত মুনাফার করমুক্তি পুঁজিবাদী বাজারে সঙ্কট পর্যন্ত ডেকে এনেছিল। ট্রাম্পের লাগামহীন, নিয়ম-ছাড়া শাসন দেখে আশঙ্কিত হয়েছিলেন বহু আমেরিকান। তার ফল মিলেছিল প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দ্বিতীয় দফার ভোটের রেজাল্টে। হোয়াইট হাউস চলে যায় জো বাইডেনের দখলে। সেই পরাজয়ও মানতে চাননি ট্রাম্প।
চার বছরের দুঃস্বপ্নের শেষ পর্বে তিন ঘণ্টার জন্য ক্যাপিটল হিল দখল করেছিল ট্রাম্পের অনুগামীরা। আমেরিকার গণতন্ত্রের স্পন্দিত হৃদয়ে তারা তুলে ধরল ‘কনফেডারেট’ পতাকা— উনিশ শতকে দাসপ্রথা বিলোপ করে কৃষ্ণাঙ্গ ক্রীতদাসদের মুক্তি দেওয়ার বিরোধিতা করা রাজ্যগুলির নিশান।
মনোবিদ তথা ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভাইঝি মেরি-র বিতর্কিত বই ‘টু মাচ অ্যান্ড নেভার এনাফ: হাউ মাই ফ্যামিলি ক্রিয়েটেড দ্য ওয়ার্ল্ডস মোস্ট ডেঞ্জারাস ম্যান’-এ বর্ণনা করেছেন, কী ভাবে ডোনাল্ডের বাবা ফ্রেড ট্রাম্প সিনিয়র তৈরি করেছেন বিশ্বের ভয়ানকতম মানুষটিকে! মেরি লিখছেন, ‘ডোনাল্ডের প্রয়োজন বিভাজন। এটাই তাঁর বাঁচার একমাত্র পথ।’
তাই আজও অধিকাংশ আমেরিকান মনে করেন, ট্রাম্পের জেতা মানে আমেরিকার পরাজয়!