পারিবারিক সম্পত্তি সংক্রান্ত আইনি কর্মে ব্যস্ততা। ব্যবসা সম্প্রসারণে অতিরিক্ত অর্থ বিনিয়োগের পরিকল্পনা। ... বিশদ
রোকাফন্দা অঞ্চলে ১২ হাজার বাসিন্দার ২০ শতাংশ মরক্কান বংশোদ্ভূত। লামিনের বাবা মুনির নাসরাউই তাঁদেরই একজন। আর মা গিনির বংশোদ্ভূত। তরুণ প্রতিভার কাছে আমন্ত্রণ এসেছিল মরক্কোর জাতীয় দলের জার্সি গায়ে চাপানোর। কিন্তু লামিনে বাবার নয় নিজের জন্মভূমি, স্পেনকেই বেছে নেয়। ভাগ্যিস, সেদিন মরক্কোর কোচ ওয়ালিদ রেগরাগির ডাকে সাড়া দেয়নি তরুণ তুর্কি। নয়তো এবার ইউরোয় লামিনে ম্যাজিক থেকে বঞ্চিত থাকত গোটা বিশ্ব। স্পেনও হয়তো রবিবার ফাইনাল খেলত না। কারণ, সেমি-ফাইনালে ১৬ বছরের এই বিস্ময়-বালকই যে তফাত্ গড়ে দিয়েছে। ফ্রান্সের কাছে গোল খেয়ে স্প্যানিশ আর্মাডা যখন ডুবতে বসেছিল, লামিনেই ত্রাতা হয়ে এগিয়ে আসে। বক্সের বাইরে থেকে তার বাঁ পায়ের সোয়ার্ভিং শট দ্বিতীয় পোস্টের কোণে লেগে জালে জড়াতেই লড়াইয়ে ফেরে লুইস ডে লা ফুয়েন্তের দল। ফাইনালেও লামিনে জাদুর অপেক্ষায় থাকবে জাভি-ইনিয়েস্তাদের দেশ।
টাইম মেশিনে একটু পিছনে ফেরা যাক। ২০০৭ সালে বার্সেলোনার মাঠ ক্যাম্প ন্যুতে এক ফটোসেশনের আয়োজন করেছে ইউনিসেফ। চ্যারিটির অংশ হিসেবে কয়েকটি পরিবারের শিশুদের সঙ্গে ছবি তুলবেন বার্সা ফুটবলাররা। কাকতালীয়ভাবে লায়োনেল মেসি এসে দাঁড়ালেন রোকাফন্দার সেই মরক্কান-গিনি দম্পতির সামনে। সামনে নায়ককে দেখে সদ্যোজাতও বোধহয় তখন মুচকি হাসছিল। আর মননে বিড়বিড় করেছে, ‘এ তো হওয়ারই ছিল!’ মেসি সেদিন মাস ছয়েকের ছোট্ট লামিনেকে প্লাস্টিকের বড় গামলায় স্নান করান। ওই ব্যাপ্টিজমের মতো! খ্রিস্টধর্মে পাদরি যেমন বাচ্চাদের স্নান করিয়ে ঈশ্বরের সন্তান হিসেবে গ্রহণ করেন। সেদিন বোধহয় মেসিও নিজের ঈশ্বরপ্রদত্ত প্রতিভা লামিনেকে প্রদান করেছিলেন। তাই তো লিওর মতো এ স্প্যানিশ তরুণের বাঁ পা’ও হীরের ছুরি।
সেই ঘটনার পর ছেলেকে ফুটবলার বানানোর সংকল্প করে ফেলেন মুনির। আর স্থানীয় ক্লাবে নজর কাড়ার সুবাদে মাত্র ছ’বছর বয়সেই লামিনে পৌঁছে যায় লা মাসিয়ায়। নিজের বয়সি বাচ্চাদের থেকে তখনই সে অনেক বেশি প্রতিভাবান। তাই অল্প সময়ের মধ্যে অ্যাকাডেমির কোচ ডেভিড স্যাঞ্চেজের নজরে চলে আসে লামিনে। ১-৩-২-১ ফর্মেশনে শুরুর দিকে তাকে স্ট্রাইকারের পজিশনে পরখ করে নেন কোচ। লা মাসিয়ায় প্রথম পাঁচ বছর বাচ্চাদের সেভেন সাইড ফুটবল খেলানো হয়। ১২ বছর বয়সে লামিনে প্রথমবার ইলেভেন সাইড মাঠে আসে। করোনা মহামারীর কারণে এই পর্বে বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগ হয়নি। তবু ম্যানেজমেন্ট লামিনেকে সরাসরি ‘ক্যাডেট-এ’ এবং পরে সরাসরি ‘জুভেনাইল এ’ দলে প্রোমোট করে। এমন ঝুঁকি তো লিও মেসির ক্ষেত্রেও নেওয়া হয়নি। লা মাসিয়ায় কোচেরা লামিনে ইয়ামালকে ‘লামিনে জিনিয়াল’ বলতেন। সে কথা দেখতে দেখতে পৌঁছে যায় তত্কালীন বার্সেলোনা কোচ জাভির কানেও। তিনি ছেলেটিকে টিমের সঙ্গে অনুশীলনে ডাকেন। প্রথম দিনেই ইয়ামালকে দেখে মেসির কথা মনে পড়ে যায় স্প্যানিশ বসের। তিনি এক সাক্ষাত্কারে বলছিলেন, ‘লামিনের মধ্যে মেসির ছোঁয়া রয়েছে। এই ছেলেটির বাঁ পাও সোনায় বাঁধানো। তবে মেসির সঙ্গে যাদের তুলনা করা হয়েছে, প্রত্যেকেই হারিয়ে গিয়েছে। তাই সেই পথে আমি হাঁটব না। বরং লামিনেকে আরও পরিণত ফুটবলার হিসেবে গড়ে তুলব।’
২০২৩ সালের ১৯ এপ্রিল লা লিগায় রিয়াল বেতিসের বিরুদ্ধে অভিষেক হয় ইয়ামালের। ১৫ বছর ৯ মাস ১৬ দিন বয়সে। পরিবর্ত হিসেবে নেমে বার্সার ইতিহাসের কনিষ্ঠতম খেলোয়াড়ের রেকর্ডও গড়ে। কাতালন ক্লাবটি মেসির অভিষেকের জন্য ১৮ বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করেছিল! কিন্তু ইয়ামাল... ওসুমানে ডেম্বেলে ক্লাব ছাড়ার পর থেকেই প্রথম একাদশের নিয়মিত সদস্য।
লামিনের জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার গল্পটাও বেশ রোমাঞ্চকর। গত বছর সেপ্টেম্বরে ইউরোর বাছাই পর্বের ম্যাচ খেলতে জর্জিয়া উড়ে যায় লুই ডে লা ফুয়েন্তে-ব্রিগেড। কিন্তু এক অজানা কারণে খেলার বুট ছাড়াই ফুটবলারদের বিমানে তুলেছিল স্প্যানিশ ফেডারেশন। অগত্যা জর্জিয়ায় প্রথম অনুশীলন সেশন স্যান্ডল পরেই সারতে হয় পেড্রি-গাবিদের। আর সেখানেই হাল্কা চোট লাগে মার্কো আসেন্সিও ও ড্যানি ওলমোর। জর্জিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচে তাঁদের প্রথমার্ধেই তুলে নিতে বাধ্য হন কোচ ফুয়েন্তে। পরিবর্ত হিসেবে মাঠে নামানো হয় নিকো উইলিয়ামস ও লামিনে ইয়ামালকে। আর অভিষেক ম্যাচেই সুপার-সাব হিসেবে গোল করে নিজের জাত চেনায় ১৫ বছরের লামিনে। নিকো উইলিয়ামসও স্কোরশিটে নাম তোলেন। সেদিন ওলমো-আসেন্সিওর চোটটা শাপে বর হয়েছিল। কোচ ফুয়েন্তেও ইউরোর জন্য টিমের দুই উইঙ্গারকে খুঁজে পেয়ে যান।
লামিনের স্কুলজীবনের শেষ বছর চলছে। বইপত্র সঙ্গে নিয়েই জার্মানিতে গিয়েছেন তিনি। ইউরোর পরই ফাইনাল পরীক্ষা। তবে তার আগে ফুটবল পরীক্ষায় ১০০ শতাংশ নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ ইয়ামাল। স্প্যানিশ তরুণের প্রতিভায় মুগ্ধ গোটা ফুটবল বিশ্ব!