কর্মপ্রার্থীদের ধৈর্য্য ধরতে হবে। প্রেম-প্রণয়ে আগ্রহ বাড়বে। নিকটস্থানীয় কারও প্রতি আকর্ষণ বাড়বে। পুরোনো কোনও বন্ধুর ... বিশদ
ছেলেবেলা থেকেই কি ফ্যাশন ডিজাইনার হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন?
না। আমি পাইলট হওয়ার স্বপ্ন দেখতাম। সায়েন্স নিয়ে আমি পড়াশুনা করেছি। ইনফর্মেশন টেকনোলজি নিয়ে এমএসসি পড়া শুরু করলেও পরে অসমাপ্ত থেকে যায়। কারণ তখন আমি এনআইএফটি থেকে ক্লোদিং প্রোডাকশন টেকনোলজি নিয়ে পড়াশুনা করি। সেখান থেকে পাশ করে এনআইএফডি থেকে ফ্যাশন ডিজাইনিং নিয়ে পাশ করে ডব্লুএসসি থেকে মিক্স মিডিয়া ফর টেক্সটাইল—টেক্সটাইল ডিজাইনিং নিয়ে পাশ করি। হস্তশিল্পে মা ডিসট্রিক স্কুল চ্যাম্পিয়ন ছিলেন। বলতে পারেন মায়ের স্বপ্ন পূরণ করতেই ডিজাইনিংকে পেশা হিসেবে নিয়েছি। আমি ছেলেবেলা থেকে খুব আঁকতে ভালোবাসতাম। যখন স্কুল লেভেলে ছিলাম তখন থেকেই ক্রমশ ডিজাইনিং ব্যাপারটা আমার মধ্যে ডেভেলপ করতে শুরু করে। আমার মাসিরও শাড়ির ব্যবসা ছিল। সেখানে অ্যাপ্লিকের নানা শাড়ি দেখে মনে হতে থাকে যদি ডিজাইন একটু ঘুরিয়ে করা যেত তবে দেখতে বেশ লাগত। এই ভাবনা থেকেই পরিচিতদের মধ্যে নিজের মতো করে শাড়ি ডিজাইন করে দিতাম। অনেকের তা পছন্দ হতো। কিন্তু কোনওদিন ভাবিনি যে আমি ফ্যাশন ডিজাইনার হব। আমার ডিজাইন করা শাড়ি প্রথম মাকে পরিয়েছিলাম।
আপনি তো বারো বছর ধরে ফ্যাশন ডিজাইনিং-এর পেশাতে আছেন। ফ্যাশন ডিজাইনার হতে গেলে এই পেশায় শিক্ষাগত যোগ্যতা কতটা প্রয়োজন?
এই পেশায় স্থায়ীভাবে থাকতে গেলে প্রাথমিক শিক্ষা খুব জরুরি। শিক্ষা ছাড়া নির্দিষ্ট লেভেলের মধ্যে থাকতে হয়। আর এই নির্দিষ্ট জায়গাকে অতিক্রম করতে গেলে জ্ঞানের দরকার। জ্ঞান থাকলে একজন ফ্যাশন ডিজাইনার নিজেকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে। তার জন্য প্রয়োজন শিক্ষা। যদি কেউ টিচার হতে চান সেক্ষেত্রে শিক্ষা আবশ্যিক। ছাত্রছাত্রী পড়াতে গেলে শিক্ষা এতটাই জরুরি যে তারা কী প্রশ্ন করবে তা কিন্তু আগে ক্ষেত্রে একজন শিক্ষক বা শিক্ষিকার বোঝা সম্ভব নয়। তাই ছাত্রছাত্রীদের সঠিক প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে টিচাররাও নিজেদেরকে শিক্ষিত করে বলে মনে করি। সেইসঙ্গে অবশ্যই প্রয়োজন শিল্পসৃষ্টির অদম্য ইচ্ছে যা একজন শিল্পীর অন্তরের অন্তস্থল থেকে বেরিয়ে আসে।
আপনি তো নিজেই একজন শিক্ষিকা। কোথায় কোথায় আপনি পড়ান?
আমি এনআইএফটি গেস্ট ফ্যাকালটি। এছাড়াও আমেরিকান এনজিও লুথেরান ওয়ার্ল্ড সার্ভিস সেন্টার, নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন, মিনিস্ট্রি অফ টেক্সটাইল গভঃ অফ ইন্ডিয়া, বেঙ্গল ন্যাশনাল চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির মাস্টার ট্রেনার।
প্রথম স্বাধীনভাবে কাজ কবে থেকে শুরু করেন?
আমি প্রথমে এক্সপোর্ট হাউসের ইনচার্জ ছিলাম। এই এক্সপোর্ট হাউসের জামাকাপড় অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জার্মানিতে এক্সপোর্ট হতো। কোন কোন দেশ কী ধরনের জামাকাপড় চাইছে তার প্র্যাকটিক্যাল অভিজ্ঞতা এখান থেকেই অর্জন করেছি। এরপর ২০১০-এ চাকরি ছেড়ে দিই। ২০১২ থেকে স্বাধীনভাবে ব্যবসা শুরু করেছি। গ্ল্যামার ওয়ার্ল্ডে ‘যাত্রা’ দিয়ে ডিজাইনার হিসেবে আমার আত্মপ্রকাশ ঘটে। এরপর গ্রুপ থিয়েটার সিনেমাতেও ডিজাইনার হিসেবে কাজ করেছি। সাত-আটটি ছবিতে ডিজাইনার হিসেবে কাজ করলেও ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত অভিনীত ছবিতে ঋতুদির জন্য বেশি পোশাক ডিজাইন করেছি।
আমি ওঁর পার্সোনাল
ডিজাইনার। উনি যে গত
বছর নিজস্ব ডিজাইনার ব্র্যান্ড
লঞ্চ করেছেন তার ম্যানুফ্যাকচারিং আমার করা।
আপনার পোশাকের সিগনেচার স্টাইল কী?
ইন্দো ওয়েস্টার্নকে স্মার্জ করি।
আপনার নিজস্ব লেবেল করে লঞ্চ করেন?
ইউরিস ওয়ার্ল্ড ফ্যাশন সার্ভিসেস নামে ২০০৭-এ আমার লেভেল লঞ্চ হয়।
মূলত কী ধরনের ফ্যাব্রিক নিয়ে আপনি কাজ করতে পছন্দ করেন?
পিওর ফ্যাব্রিক নিয়ে কাজ করি। কটন, তসর, র-সিল্ক ইত্যাদি। মেয়েদের শাড়ি ছাড়াও ব্লাউজ, কুর্তি, লং ড্রেস, স্কার্ট ইত্যাদি করি। এছাড়াও পুরুষদের জন্য ধুতি পাঞ্জাবি, শেরওয়ানি করি। তবে ছোট বাচ্চা থেকে মহিলা, পুরুষের পোশাক আমি কাস্টোমাইজড করি।
আপনার স্টোর কোথায় আছে?
আমার স্টুডিও কাম অফিস বড়বাজারে নন্দরাম মার্কেটে আছে। এছাড়াও গড়িয়া, রাজপুর, সোনারপুরে প্রোডাকশন হাউস আছে।
আপনি তো ইয়ার্ন নিয়ে রিসার্চ করছেন?
কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের সহায়তায় বিভিন্ন উৎস থেকে ফাইবার বের করে হ্যান্ডলুমে ফ্যাব্রিক তৈরি করে তা দিয়ে ডিজাইনার পোশাক তৈরি করব। এটি দেশে ও বিদেশে ব্যবসার প্রসারতা বৃদ্ধি করবে। যেহেতু হ্যান্ডলুমে হবে এটি তাই তাঁতিদেরও কর্মসংস্থান হবে। আমার রিসার্চের কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। সেই কাজে খুব এখন ব্যস্ত।
তবে তো আপনি অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবেন—
অবশ্যই, এটার উদ্দেশ্য হল মেড ইন ইন্ডিয়া। এর ফলে তাঁতিরা বাঁচবে। অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হলে
প্রোডাকশন বাড়বে।
আপনার তৈরি পোশাক তো এক্সপোর্টও হবে?
বাংলাদেশ ও চীনে হবে। সেখানে গিয়ে কথা বলে এসেছি। আরও অন্যান্য দেশে যাতে এক্সপোর্ট করতে পারি তাই নিয়ে এখন কথাবার্তা চলছে। ফাইনাল এখনও হয়নি বলে সেই দেশের নাম উল্লেখ করতে এখন পারছি না।
আগামী দিনে আপনার পরিকল্পনা কী?
রাজপুরে জমি কিনেছি। সেখানে আমি প্রসেসিং ইয়ার্ন তৈরি করব। প্রতিনিয়ত তো ফ্যাশন পরিবর্তন হয়। আজকে যে ইয়ার্ন নিয়ে কাজ করছি দু’বছর আগে তা ছিল না। প্রতিদিন কিন্তু ইয়ার্নের প্রপারটিজ বদল হয়। তাই এখানে ইয়ার্ন তৈরির থেকে ফ্যাব্রিক ডেভেলপ করা এবং তা দিয়ে পোশাক তৈরি করে তা দিয়ে মার্কেটিং করা সবই এখান থেকেই হবে। এখানে আমি একটি ইনস্টিটিউট করব। যে সব ছাত্রছাত্রী আমার এই ইনস্টিটিউট থেকে পাশ করবে যোগ্যতার ভিত্তিতে তারা এখানে চাকরির সুযোগ পাবে। তাছাড়া সারা পৃথিবীতে এখন ডিজাইনারদের খুব চাহিদা। তাই ব্যবসা করুক বা চাকরি অর্থ উপার্জন করতে কোনও অসুবিধা হবে না।
ছবি: ডিজাইনারের সৌজন্যে