শরীর ভালো যাবে না। সাংসারিক কলহ বৃদ্ধি। প্রেমে সফলতা। শত্রুর সঙ্গে সন্তোষজনক সমঝোতা। সন্তানের সাফল্যে ... বিশদ
একটা চাপা টেনশন, কী এক দুশ্চিন্তা, একাকীত্ব, অস্থিরতা, বিষম এক অবসাদ মনটাকে গ্রাস করেছে। মুক্তির কি উপায় আছে? হ্যাঁ, হাতের একেবারে কাছে, বাড়ির মধ্যেই। আর তা হল সঙ্গীত। ‘মহারাজা, তোমার সেলাম, সেলাম, সেলাম/ মোরা বাংলা দেশের থেকে এলাম...’ গেয়ে গুপিবাঘা ভূতের রাজার বরে কিছুক্ষণের জন্য স্তব্ধ করে দিয়েছিল মহারাজ ও তাঁর সভাসদদের। আদতে সঙ্গীতের এই ঐন্দ্রজালিক শক্তি বা থেরাপি অন্তর্নিহিত ছিল অনাদিকাল থেকে। একে বলে সঙ্গীতের নিরাময় শক্তি এবং এটি পরীক্ষিত। গবেষকদের অনুসন্ধানে এর সার্থকতার ভিত্তিতে এই অমোঘ সত্য প্রতিষ্ঠিত। নেগেটিভ চিন্তা মনের ক্ষতি করে, পজিটিভ চিন্তা শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরির ক্ষেত্রে সক্রিয় সহায়তা করে, এ কথা মনে করেন চিকিৎসক, বিশেষজ্ঞরা। এ প্রসঙ্গে, মিউজিক স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম কবুজ-এর ওয়েলনেস বিশেষজ্ঞ শন লুজি বলেন, দুশ্চিন্তা দূর করার জন্য প্রয়োজন ইমোশনাল ডিটক্স। আমাদের স্নায়ুতন্ত্রে ও নিউরো এন্ডোক্রাইনকে প্রভাবিত করে খারাপ চিন্তা ও আবেগকে নিয়ন্ত্রণে রেখে মানসিক চাপ বহুলাংশে কমিয়ে দেয় পছন্দের ভালো গান কিংবা যন্ত্রসঙ্গীত।
তবে লুজির এবং অন্যদের মতে, কোনও কাজ করতে করতে প্রিয় গান বা যন্ত্রসঙ্গীত না শুনে অন্তত দশ থেকে কুড়ি মিনিট চুপ করে বসে তা শুনলে মস্তিষ্কের কোষ সঠিকভাবে উজ্জীবিত হয়। আমাদের মন সঙ্গীতের ছন্দের প্রতি সাড়া দেয়। ধীর লয়ের সঙ্গীত মস্তিষ্ককে আরাম দেয়। দ্রুত লয় উদ্দীপ্ত , উত্তেজিত করে। সেইমতো, বেছে নিতে হবে কোন প্রিয় গানটি শুনবেন। কিংবা যদি শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে মন থাকে, তাহলে কী শুনবেন? দরবারি কানাড়া না মারোয়া, নাকি বাগেশ্রী, না আহির ভৈরব? রাগ সঙ্গীতের একটা বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, ভোর থেকে রাত পর্যন্ত সময়োপযোগী রাগকে বেছে নিয়ে শোনা যায়। তবে একটা বিষয় মাথায় রেখে মেনে চলতে হবে। সেটা হল এই সঙ্গীত শোনার সময় অন্য কোনও কাজ করতে করতে শোনা ঠিক হবে না। মন দিয়ে বসে বা শুয়ে শুনতে হবে। তবেই আমাদের স্নায়ু আর চেতনা জুড়ে নিরাময়ের কাজ শুরু হয়ে যাবে। অন্যথায় নয়।
এক একটি রাগ এক একটি রোগ উপশম করার শক্তি রাখে। আর এগুলি নিছক গালগল্প নয়। সমগ্র বিশ্বে চিকিৎসকদের দ্বারা পরীক্ষিত ও অনুমোদিত। যেমন, দুরারোগ্য মাথা-যন্ত্রণার জন্য দরবারি ও জয়জয়ন্তী, হাইপার টেনশনের জন্য গোরোখ কল্যাণ, ভীমপলাশী, পুরিয়া। ডিপ্রেশনের জন্য কাফি, ত্বকের সমস্যায় আশাবরী- এইরকম। চেন্নাইয়ের দ্য রাগা রিসার্চ সেন্টার তো সঙ্গীতজ্ঞ, ডাক্তার আর মনোবিদদের নিয়ে এই রিসার্চে মেতে রয়েছে প্রবল উৎসাহে। আর থাকবে না-ই বা কেন ? ইতিমধ্যে কতগুলি চমকপ্রদ ঘটনা ঘটে গিয়েছে যে দেশে বিদেশে! মিউজিক থেরাপিতে বিশ্বাসী চিকিৎসকের কথায়, সঙ্গীতের সুর আমাদের শরীরের মধ্যস্থ ব্যথা নিবারক হরমোন এন্ডরফিনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। এটাই গোপন রহস্য। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিমধ্যেই চালু হয়েছে মিউজিক থেরাপির কোর্স, পারফর্মিং আর্ট থেরাপি। পাশ করে অনেকেই চাকরি পাচ্ছেন। কেউ বা করছেন প্রাইভেট প্র্যাকটিস।