কর্মপ্রার্থীদের ধৈর্য্য ধরতে হবে। প্রেম-প্রণয়ে আগ্রহ বাড়বে। নিকটস্থানীয় কারও প্রতি আকর্ষণ বাড়বে। পুরোনো কোনও বন্ধুর ... বিশদ
সমাজ-সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য, আক্রান্ত নারী ও শিশুদের উদ্ধার ও পুনর্বাসনের জন্য নিরলস কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে বহু সমাজসেবী সংগঠন। তারা এই মেলায় অংশগ্রহণ করেছিল। জবালা অ্যাকশান রিসার্চ, বন্ধনমুক্তি, গরানবোস গ্রাম বিকাশ কেন্দ্র, অ্যাসিড সারভাইভার অ্যান্ড ওমেন ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন, শক্তিবাহিনী, আজাদ ফাউন্ডেশন, দীপিকা সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি, রক্ষক ফাউন্ডেশন, বারাসত উন্নয়ন প্রস্তুতি, হোপ কলকাতা ফাউন্ডেশন, নিউ লাইট ইন্ডিয়া, নারী ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র, ক্রিড, কর্ম-কুটির, অল বেঙ্গল ওমেন্স ইউনিয়ন, মণিকথা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।
এই সমস্ত সংস্থাগুলো কেউ নারী ও শিশু পাচার রোধে, কেউ অ্যাসিড আক্রান্ত, যৌন নির্যাতন,বাল্য বিবাহ বা শিশুশ্রম-এর বিরুদ্ধে অক্লান্তভাবে কাজ করে চলেছে। শুধু সামাজিক বার্তাই নয়, মূল আক্রান্তদের উদ্ধার করে এদের সাহায্য ও সহায়তা দিয়ে শারীরিক ও মানসিক সুচিকিৎসার সঙ্গে আইন মোতাবেক এদের পুনর্বাসনেও সাহায্য করে চলেছে।
আমেরিকান কনস্যুলেট প্রায় ষাট হাজার নির্যাতিতা নারীকে রাজ্য সরকার, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তা ও সুশীল সমাজের সহায়তায় আক্রান্তদের পাশে দাঁড়ানোর উদ্যোগ ও কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। শুধু রাজ্যেই নয়, রাজ্যের বাইরেও পুলিসি ও আইনি সহায়তায় স্কুলছুট শিশু, যৌনপল্লির নাবালিকা মেয়েদের উদ্ধার, শিশুদের যৌন নির্যাতন, নারী ও শিশুর অধিকার, এইচআইভি ও এইডস আক্রান্ত মানুষজন এদের প্রত্যেককে সমান চিকিৎসা, অধিকার দিয়ে, দুর্ভোগ থেকে উদ্ধার করে, প্রশিক্ষিত করার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে।
এই মেলায় ছিল উদ্ধার হওয়া, সমাজের মূল সুরে ফেরা মেয়েদের হাতে তৈরি সুন্দর সুন্দর সব জিনিস। ব্যাগ, পুতুল, ঘর সাজানোর সামগ্রী, কাগজ, কাঠ, বিডসের আর পাথরের তৈরি গয়না, হাতের কাজের শাড়ি, চাদরের সম্ভার। সমাজ সচেতন মানুষজনদের আহ্বান জানানো হয়েছিল এদের উৎসাহ দিয়ে এদের তৈরি জিনিসপত্র দেখা ও কেনার জন্য। সামাজিক বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য পটচিত্রের মাধ্যমে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পরিবেশ-সচেতনতা, নারী ও শিশু অধিকার সহ জনশিক্ষামূলক বিবিধ বিষয়ে প্রচারে রয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরের পটের গ্রাম পিংলা। এই মেলায় গান গেয়ে প্রদর্শিত হচ্ছিল পটচিত্রের মাধ্যমে নারী পাচারের করুণ কাহিনী। পাচারকারীদের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার এও এক অনন্য প্রয়াস। এছাড়া কারও স্টলের স্লোগান ছিল— ‘আমরা শক্তি আমরা বল/ আমরা বন্ধনমুক্তি দল।’
মেলায় ঘুরতে ঘুরতে একটা কথা বার বার মনে হচ্ছিল এই স্বার্থান্ধ আত্মমগ্ন পৃথিবীতে এখনও বেশ কিছু মানুষ আছেন যে বা যাঁরা নিজের বাইরেও অন্যের কথা ভাবেন। অন্যের দুঃখ কষ্টে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। এও এক লড়াই। মেলায় ঘুরতে গিয়ে দেখলাম জবালা অ্যাকশন রিসার্চ অর্গানাইজেশন নামের সংস্থাটি ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের নিয়ে একটি চমৎকার ম্যাগাজিন বের করেছে। নাম ফুলঝুরি। ফুটপাতের ল্যাম্পপোস্টের আলোয় বই মুখে নিয়ে বসা মেয়েটি, যৌন পল্লিতে পাচার হওয়া নাবালিকা মেয়েটি অথবা ইঁটের পাঁজা বয়ে নিয়ে যাওয়া কিশোরটিও যথাযথ ও প্রাপ্য শিক্ষা সহায়তা পেলে বুঝি লিখে উঠতে পারে এমন মন ছুঁয়ে যাওয়া সব ছোট্ট ছোট্ট ছড়া বা কবিতা। ‘বন্ধুর কাঁধে রেখেছি যে হাত/ সে হাত গড়বে নতুন সমাজ।’ অথবা ‘আমি যে আর হারব না/ না মেরে তো মরব না।’ ছোটদের এমন সব চমকপ্রদ লাইন পড়তে পড়তে ভাবছিলাম উপযুক্ত প্রশিক্ষণ পেলে কী না হয়। বছর বারোর প্রিয়াঙ্কা দাস লিখছে, ‘দু হাতের তালুতে পৃথিবীটা বন্দী। আকাশকে ছুঁতে আজ লেখাপড়া শিখছি।’
অসংখ্য সাধুবাদ জানাই আমেরিকান কনস্যুলেটর ও অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনদের এমন কর্মপ্রচেষ্টার লড়াই চালিয়ে যাওয়ার জন্য। প্রাপ্য অধিকার বুঝে নিয়ে আকাশকে ছুঁয়ে দেখুক এমন সব হার না মানা লড়াকু মেয়েরা।