ভারতবর্ষ তথা এই উপমহাদেশ নারীজাতির প্রতি সুপ্রাচীনকাল থেকেই পরম শ্রদ্ধা জানিয়ে এসেছে। বেদের যুগে এই উপমহাদেশ নারীর প্রতি যে সম্মান জ্ঞাপন করত তা ছিল পূজার যোগ্য। পরবর্তীকালে নানা সামাজিক ও রাজনৈতিক কারণে নারী জাতির অবস্থার অবনতি ঘটে।
ইতিহাসে ভারত অধিনায়ক হরমনপ্রীত। দুর্দান্ত ফর্মে রয়েছেন তিনি। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালে হেরে গেলেও ভারতের পারফরমেন্স কিন্তু গ্রুপ পর্যায়ে ছিল নজরকাড়া। চার-চারটি ম্যাচ জিতে গ্রুপ শীর্ষে উঠে সেমি-ফাইনালে গিয়েছিল ভারত। ট্রফি না পেলেও ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে ভারত অধিনায়ক কিন্তু দুর্দান্ত ব্যাট করেন। চেনান নিজের জাতকে। তাই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শেষে ভারত এবং দলনায়ক হরমনপ্রীত কাউরকে নিয়ে আলোচনা সর্বত্র।
বিংশ শতাব্দীতে মেয়েরা লেখাপড়ার সুযোগ পেলেও বহির্জগতে তাঁদের যাতায়াত খুব একটা সুগম ছিল না। তাঁরা ‘মেয়েমানুষ’— এই তকমা তাঁদের গায়ে সাঁটা ছিল। তাঁদের ব্যক্তিত্ব প্রকাশের পথ প্রশস্ত ছিল না। সাহিত্যিক বাণী রায় প্রত্যক্ষতই নিজের চলার পথে সেই সীমানা ভেঙে দিতে পেরেছিলেন।
বিতর্ক বিবাদ এড়িয়ে চলা প্রয়োজন। প্রেম পরিণয়ে মানসিক স্থিরতা নষ্ট। নানা উপায়ে অর্থ উপার্জনের সুযোগ। ... বিশদ
শীত মানেই কুয়াশাভেজা সকালে লেপের ওম নিতে নিতে গরম চায়ে চুমুক দেওয়া। কিন্তু আমরা হয়তো অনেকেই ভাবতে পারি না যে, এই শীত কিছু মানুষের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানের পথ বাতলে দেয়। আমরা তাদের তৈরি জিনিস সারা শীতকাল জুড়ে উপভোগ করি। তেমনই দুটো পেশা নিয়ে আজ আলোচনা করব।
পিঠে বানানো। শীতে শুরু হওয়া প্রতিটি মেলায় এসে হাজির হয়েছেন কমলা, সুমিত্রা, কল্পানারা। ছোটবেলায় মা-ঠাকুমার কাছে পিঠেপুলি তৈরি করা শেখাই এঁদের জীবনে রুজি রোজগারের উপায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিবছর শীতকাল জুড়ে প্রায় সব জায়গাতেই মেলা বসে। সেখানে তিনশো টাকা রোজ আর তারসঙ্গে থাকা-খাওয়া, এই শর্তে বহুজন পিঠেপুলি বানাতে আসেন। ‘আমরা ভোরবেলা উঠে স্নান করে তিরিশ চল্লিশ কেজি চাল ভিজিয়ে দিই। আধঘণ্টা পরে সেই চাল জল থেকে তুলে নিয়ে ঢেঁকিতে পেষাই করি। তারপর জল দিয়ে গুলে তার সঙ্গে অন্যান্য উপকরণ মিশিয়ে পিঠেপুলি তৈরি শুরু করি’, বললেন সুমিত্রা। হাবড়ার গোয়ালবাটি গ্রামে স্বামী পুত্র বৌমা নিয়ে ভরাট সংসার সুমিত্রার। কিন্তু বছরের এই ক’মাস তাদের ছেড়ে টাকা রোজগারের আশায় এক মেলা থেকে অন্য মেলায় পিঠে তৈরি করে বেরান। এই সময় পিঠেপুলি বানিয়ে একসঙ্গে বেশ অনেকটা টাকাই হাতে পান কমলা, কল্পনা, সুমিত্রারা। সুমিত্রা অন্য সময় কিছু না করলেও কমলা বাদবাকি সময় বিড়ি বাঁধেন এবং কল্পনা অন্যের জমিতে জন খাটেন। আজকের দিনে মেলাগুলোতে পিঠেপুলির স্টল দিয়ে সুমিত্রারা যখন পাটিসাপটা, ভাপাপুলি, চিতইপিঠা, মালপোয়ার মতো নানা ধরনের পিঠে বানান, তখন আধুনিক প্রজন্ম সেটা খেয়ে তাদের রসনার তৃপ্তি ঘটায়।
পিঠের কথা যখন উঠলই, তখন নলেনগুড় বা খেজুর গুড় বানানোর কথাও একটু না বললেই নয়। শীত আসলেই ভোজনরসিক বাঙালির মন খোঁজ করে খেজুরগুড়ের। এই গুড়কে কেন্দ্র করেই গড়ে ওঠে কিছু মানুষের শীতকালিন রুজি রোজগার। এই শীতকালে সামান্য কিছু টাকা রোজগারের জন্য বহুমানুষ এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় পাড়ি দেন। এঁরা আগেরদিন খেজুর গাছ কেটে তাতে হাঁড়ি বাসান। সারারাত ধরে সেই হাঁড়িতে খেজুর রস জমে তারপর সেই রস থেকে তৈরি হয় গুড়। বড় বড় কড়াইতে রস ঢেলে কাঠের উনুনের হালকা আঁচে জ্বাল দেওয়া হয়। এরপর ঘণ্টার পর ঘণ্টা জ্বাল দিয়ে তৈরি করা হয় খেজুরের গুড়। যারা অক্লান্ত পরিশ্রম করে খেজুরগুড় প্রস্তুত করেন, তাঁরা ঠিকমতো মূল্য পাচ্ছিলেন না। তাই আমাদের বাংলা থেকে হারিয়ে যেতে বসেছিল খেজুরগুড়। কিন্তু বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের খাদি গ্রামীন শিল্প পর্ষদের উদ্দ্যোগে নদীয়া জেলার মাজদিয়ার ভজন ঘাটে তৈরী হয়েছে একটি গুড় মিল। এই গুড় মিলে প্রায় দুশো জন চাষি সকালবেলা খেজুররসের যোগান দেয়। এই গুড় তৈরির সঙ্গে ছবি হালদারের মতো প্রচুর মহিলাও যুক্ত আছেন। মহিলারা প্রধানত রস জ্বাল দেওয়ার কাজ করেন। প্রধানত ডিসেম্বর, জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি মাসে খেজুররস পাওয়া যায়। সেটাই গুড় তৈরির প্রধান উপকরণ। তাই এই তিনমাসই কারিগররা গুড় তৈরি করতে পারেন। অন্যান্য সময় চাষের কাজ করে থাকেন এঁরা। তবুও শীত এলে খেজুরগুড় তৈরি করাটাই এঁদের প্রধান জীবিকা হয়ে ওঠে।
এছাড়াও শীতকালে অনেকে কাঁথা, বালাপোষ বা লেপ বানিয়েও তাদের শীতকালীন জীবিকাকে বাঁচিয়ে রাখেন। শীতকালে আমরা গরম কাঁথা, বালাপোষ বা লেপের ওম নিই। সকালে প্রাতঃরাশে সোনালী গুড় চাখি কিংবা সন্ধেবেলা মেলাতে গিয়ে পিঠেপুলি খাই, সবটাই আমাদের ভালোলাগা বা ভালোবাসার মধ্যেই পড়ে।
এগুলো আমাদের যোগান দেন এই সমস্ত শীতের কারিগররা, যাঁদের অনেকেরই এই শীতকালীন জীবিকার উপর নির্ভর করে সারা বছরের খাওয়াপরা।
কাকলি পালবিশ্বাস
