বিদ্যার্থীদের বেশি শ্রম দিয়ে পঠন-পাঠন করা দরকার। কোনও সংস্থায় যুক্ত হলে বিদ্যায় বিস্তৃতি ঘটবে। কর্মপ্রার্থীরা ... বিশদ
ফ্যাশন ডিজাইনার স্টাইলিস্ট অনুপম চট্টোপাধ্যায়ের স্টাইল স্টুডিও ওয়ার্সি কলকাতা এক বছরে পা রাখতে চলেছে। এটি কলকাতার প্রথম স্টাইল স্টুডিও। বিশিষ্ট ক্রিকেটার সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, এমএস ধোনি, বিরাট কোহলি, ইশান শর্মার বিজ্ঞাপনের জন্যও স্টাইলিং করেছেন অনুপম। পরিচালক নন্দিতা রায়, শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায় থেকে অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, মিমি চক্রবর্তী, পাওলি দাম, জয়া আহসান, সায়ন্তিকা, প্রিয়াঙ্কা সরকার প্রমুখ অনুপমের তৈরি পোশাক পরেছেন। সুরকার অনুপম রায়, গায়িকা ইমন চক্রবর্তী ছাড়াও মডেল নয়নিকা চট্টোপাধ্যায় থেকে ফ্যাশন জগতের মডেলরা অনুপমের পোশাক পরতে এবং স্টাইলিংয়ের অনুরাগী। মনসুন এসে গেলেও রয়েছে ভ্যাপসা গরম। ঠিক সেই কথাকে মাথায় রেখে মনসুনে অনুপম কী ধরনের কালেকশন এবছরে লঞ্চ করেছেন তাই নিয়ে তিনি নানা কথা নিজের স্টুডিওতে বসে জানালেন।
আপনি তো অনেক বছর ধরেই স্টাইলিস্ট হিসেবে কাজ করছেন। স্টাইলিস্ট হিসেবে আপনার প্রথম কাজ কী?
প্রথম চল্লিশজন মডেলকে নিয়ে রিল্যায়েন্স ন্যাশনাল ক্যাম্পের জন্য সোলো কাজ করি। সেখানে মডেল হিসাবে রুক্মিনী মৈত্র ছিলেন। অনেক বছর আগে এই কাজ করেছি। এরপর আমাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। টাটা ইন্ডিকম, লাফার্জ, টাটা গোল্ড টিভিসি, পিসি চন্দ্র জুয়েলার্স, সেনকো গোল্ড, অঞ্জলি জুয়েলার্স ইত্যাদি প্রচুর নামীদামি ব্র্যান্ডের সঙ্গে কাজ করেছি। এরপর ফ্যাশন ডিজাইনার দেবারুণ মুখোপাধ্যায়, সায়ন্তন সরকারের সঙ্গে পরিচিত হই। ওঁদের সান্নিধ্যে এসে আমার কেরিয়ারের অনেক উন্নতি হয়।
যেমন—
দেবারুণ ও সায়ন্তনের জন্য পাঁচটা ন্যাশনাল ফ্যাশন উইকে ওঁদের সহযোগী এবং স্টাইলিস্ট হয়ে কাজ করার সুযোগ হয়েছিল। ল্যাকমে ফ্যাশন উইক, অ্যামাজন ফ্যাশন উইক, ইন্ডিয়া কোচর উইক, হায়দরাবাদ ফ্যাশন উইক, বেঙ্গালুরু ফ্যাশন উইক। মুম্বইয়ে স্টাইলিস্ট আকি নরুলা, গৌতম কালা এঁদের কাজ দেখার সুযোগ আমাকে করে দিয়েছেন দেবারুণ। এমনকী বলিউডে অদিতি রাও হায়দারি, চিত্রাঙ্গদা সিং-এর সঙ্গেও স্টাইলিস্ট হিসেবে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। ফ্যাব্রিক ডেভেলপ করা, উইভিং পদ্ধতি শেখা ইত্যাদি সায়ন্তনের কাছ থেকে আমার শেখা।
আপনার কাছে স্টাইলিংয়ের সংজ্ঞা কী?
স্টাইলিং মানেই অতিরিক্ত ড্রেপিং বা গয়না পরা তা কিন্তু নয়। পোশাক থেকে মেকআপ গয়না, অ্যাকসেসারিজ সব কিছু হবে সামঞ্জস্যপূর্ণ অথচ সিম্পল, যা কোনও মানুষের ব্যক্তিত্বকে ওভারশ্যাডো করবে না।
আপনি তো এখন ফ্যাশন ডিজাইনার স্টাইলিস্ট হিসেবে সিনেমায় কাজ করছেন।
হ্যাঁ, পরিচালক শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় প্রথম আমাকে সিনেমায় প্রস্তাব দেন। এক্ষেত্রে পরিচালক নন্দিতা রায় আমার মেন্টর। ওঁদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ যে হামি, কণ্ঠ, গোত্র ছবিতে আমাকে কাজের সুযোগ করে দিয়েছেন। নন্দিতা দায়িত্ব নিয়ে ছবিতে চরিত্রদের পোশাকের ডিজাইন থেকে স্টাইলিং কীভাবে করতে হয় তা শিখিয়েছেন। পোশাকের মাধ্যমে একটা চরিত্র ছবিতে তৈরি করা খুব কঠিন কাজ। হামি ছবিতে স্টাইলিস্ট হিসেবে আমি কাজ করলেও ডিজাইনার ছিলেন রুমা সেনগুপ্ত। আর ‘কণ্ঠ’ ছবিতে আমি এবং ডিজাইনার অভিষেক রায় দু’জনে মিলে করেছি। তবে গোত্র ছবিতে ফ্যাশন ডিজাইনার স্টাইলিস্ট হিসেবে সোলো কাজ আমি করেছি। ছবিটি আগস্টে মুক্তি পাবে। তবে শিবুদা, নন্দিতাদি কাজের প্রচুর স্বাধীনতা দেন।
আপনি তো অনেক জায়গায় পড়ান?
হ্যাঁ, অথচ মজার ব্যাপার কী জানেন? আর্টস ভিলে স্কুল ফর ফ্যাশন অ্যান্ড টেক্সটাইল ডিজাইন নামে একটি সংস্থার থেকে আমি পাশ করেছি। এই ইনস্টিটিউটের যিনি প্রিন্সিপাল সেই ডঃ অঞ্জলি সেনগুপ্তর সঙ্গে প্রয়াত ফ্যাশন ডিজাইনার ছুটিদি আমাকে পরিচয় করিয়ে দেন। আমার বাবা বলেছিলেন, ডাক্তারি, ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার জন্য অর্থ ব্যয় করবেন কিন্তু ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ের জন্য নয়। তাই এনআইএফটিতে পড়ার সুযোগ হয়নি বলে ক্ষোভ ছিল। আমি ফ্যাশন ডিজাইনিং স্কলারশিপ নিয়েই পড়েছি। কিন্তু আজ আমি এনআইএফটি, আইএনআইএফডি, অ্যামেটি ইউনিভার্সিটির গেস্ট স্টাইলিস্ট লেকচারার এবং ছাত্রছাত্রীদের মাসে দুটো করে ওয়ার্কশপ করাই। আজ আর সেই দুঃখ নেই।
এবছরে মনসুনে আপনি কী ধরনের কালেকশন এনেছেন?
মেয়েদের জন্য হ্যান্ড উইভ করা হ্যান্ডলুম (হাফ ক্যানভাস হাফ প্রিন্ট), কোরা ফ্যাব্রিকের হ্যান্ড ব্লক প্রিন্ট সরু হ্যান্ড বর্ডার যা বিকেলে কোনও অনুষ্ঠানে পরা যেতে পারে। এক্ষেত্রে আমার প্রিন্টের বিশেষত্ব হল নেচার। অর্থাৎ ফুল, লতাপাতা, মৌমাছি ইত্যাদি হ্যান্ড ও ডিজিটাল প্রিন্টে ফুটিয়ে তোলা হয়। সঙ্গে ব্লাউজ রয়েছে। প্রতিটি পিস কাস্টোমাইজড করা ফলে ওয়ানপিস। বডিশেপ, ব্যক্তিত্ব ও পেশাকে মাথায় রেখে নারী পুরুষের পোশাক তৈরি করি। মেয়েদের পোশাকের মধ্যে আছে ম্যাক্সি ড্রেস, চেকস ড্রেস, টোগা ড্রেস, নিলেংথ ড্রেস, কুর্তা ইত্যাদি। আমার কালেকশন এক-দু’রকমের স্টাইলে পরা যায় যেটা আমার সিগনেচার। পুরুষদের জন্য আছে কটন, ইক্কত, লিনেনের ক্যাজুয়াল ট্রাউজার্স, লিনেন শার্ট, বক্সি বাইস্কোপ কুর্তা। কোনও কুর্তায় পকেট ডিটেলিং আছে। হ্যান্ডলুমের ওপর সিক্যুয়েন্স ও থ্রেডওয়ার্ক করাও কুর্তা রয়েছে।
মূলত কী কী ফ্যাব্রিক নিয়ে কাজ করেছেন?
দেখুন, সারা বছর যে ফ্যাব্রিক নিয়ে কাজ করি যেটা আমার সিগনেচার লাইন সেই হ্যান্ডলুম, খাদি কটন, মাস্টারাইজড ইত্যাদি ফ্যাব্রিকনিয়ে কাজ করেছি। মনসুন হলেও ভ্যাপসা গরম আছে। তাই অ্যান্টি ফিট আমার কালেকশন। অ্যান্টিফিট কালেকশনে আমার সিগনেচার স্টাইল যা আমাদের গ্রীষ্মপ্রধান দেশের আবহাওয়ার সঙ্গে মানানসই। মিক্সম্যাচ কালেকশন করেছি।
পোশাকের কালার প্যালেট কী ট্রেন্ড?
গত কয়েকবছর ধরে প্যাস্টেল শেড ফ্যাশনে ইন সেটা কিন্তু থাকবেই। যেহেতু বর্ষা তাই আমার মতে খুব বেশি না হলেও হালকা ব্রাইট টোন থাকা পোশাকে উচিত। দিনে বেজ অফহোয়াইট, গ্রে হলেও রাতের কালার অলিভ গ্রিন, ব্রাইট ইয়ালো, নিয়ন ব্লু, অনিয়ন পিঙ্ক, পাউডার ব্লু, টারকোয়াইজ ব্লু ইত্যাদি।
আপনার স্টুডিওর অন্দরসজ্জায় ন্যাচরাল ফাইবারের গুরুত্ব আছে। গাছপালার সমাবেশে ছোট পরিসরে কোথাও যেন শান্তিনিকেতনের আবেশ। তাই কী তার সঙ্গে সঙ্গত রেখে হ্যান্ডলুম, কটন নিয়ে কাজ করেন?
আসলে গরমে হ্যান্ডলুম, কটনের বিকল্প নেই। আমার এক হাজার স্কোয়ার ফুটের স্টুডিওর প্রতিটি কোণে ন্যাচারাল ফাইবারের উঁকিঝুঁকি। একজন ডিজাইনার স্টাইলিস্ট যিনি হ্যান্ডলুম, লিনেন, কটন নিয়ে কাজ করতে পছন্দ করেন তার স্টুডিওর অন্দরসজ্জার সঙ্গে যদি সাযুজ্য না থাকে তবে ঠিক ব্যালেন্স হয় না। তাই আমার স্টুডিওতে পরতে পরতে রয়েছে বাংলা ও বাঙালিয়ানার ছাপ।
বাজারে তো এখন হ্যান্ডলুম, লিনেন-এর ছড়াছড়ি। সেক্ষেত্রে আপনার বিশেষত্ব কী?
হ্যান্ড উইভ ছাড়াও খাদির হ্যান্ডলুমের ওপর জামদানি ডেভেলপ করে শাড়ি তৈরি করেছি। খাদি ফ্যাব্রিকের স্ট্রাইপ, চেকসের তৈরি করা পোশাক থেকে শাড়ি আমার সিগনেচার স্টাইল, বাজারে যেমন লাটকান দেওয়া ব্লাউজ বিক্রি হচ্ছে, কিন্তু আমরা ব্লাউজের জন্য যে ধরনের লাটকান তৈরি করি এবং প্রিন্টেড লাইনিং ব্লাউজে ব্যবহার করে অ্যান্টি ফিট ব্লাউজ ডিজাইন করি। আমার প্রতিটি কালেকশনই আমার লেবেল ‘ওয়ার্সি কলকাতা’-র।