উচ্চতর বিদ্যায় সাফল্য আসবে। প্রেম-ভালোবাসায় আগ্রহ বাড়বে। পুরনো বন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাতে আনন্দলাভ হবে। সম্ভাব্য ক্ষেত্রে ... বিশদ
বিপুল জনসমর্থন
বিজেপির জয়টা শুধু বিপুলসংখ্যক আসনেই (৩০৩) নয়, দলটি যেভাবে সুইপ করেছে তার ব্যাপ্তিটা অবাক-করা। বিজেপি তিনটিমাত্র রাজ্যে দাঁত ফোটাতে পারেনি—কেরল, তামিলনাড়ু ও অন্ধ্রপ্রদেশ। জয়ের ব্যবধানটাও অবিশ্বাস্য রকমের বড়, দু’টি দলের সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতার ক্ষেত্রে সাধারণত যা হয়ে থাকে তার তুলনায় খুব বড়। এই প্রসঙ্গে যে রাজ্যগুলির নাম করতে হয় সেগুলি হল—গুজরাত, রাজস্থান, হরিয়ানা, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড ও অসম।
প্রামাণ্য সংখ্যা কিছু নেই ঠিকই, কিন্তু নির্বাচন এবং সমীক্ষাগুলি নিশ্চিত করেছে যে, প্রত্যাশা মতোই হিন্দিভাষী এবং হিন্দি-জানা রাজ্যগুলির উচ্চবর্ণের মানুষজন বিজেপিকে ঢেলে ভোট দিয়েছে। একই কাণ্ড করেছে অন্যান্য অগ্রসর শ্রেণীও (ওবিসি)। বিস্মকরভাবে এও লক্ষ করা যাচ্ছে যে, দলিত, মুসলিম এবং খ্রিস্টানদেরও একটি উল্লেখযোগ্য অংশ বিজেপির পক্ষে ভোট দিয়েছে। তাদের ‘মোটিভেশন’
আলাদা হতে পারে, কিন্তু বাস্তবটা হল তারা ভোটটা দিয়েছে বিজেপিকে।
ভোট পেয়েছে, আস্থা নয়
আমি মনে করি, মোদিজি সুখী কিন্তু তৃপ্ত নন। একটি জিনিস মোদিজি উপলব্ধি করেছেন, যেটা সম্ভবত, তাঁর দলের অন্যরা বুঝতে
পারেননি: দলিত, মুসিলম, খ্রিস্টান এবং
হতদরিদ্রদের ভোট পাওয়াটাই যথেষ্ট নয়, জরুরি
হল তাদের আস্থা অর্জন করা। প্রথম দফার
শেষে তিনি জানতেন যে ওইসব শ্রেণীর আস্থা উপভোগ করেননি, তাই তাঁর গোড়ার দিকের স্লোগান ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’-এর
সঙ্গে পরে যোগ করেছিলেন ‘সবকা বিশ্বাস’।
এটি একটি স্মার্ট পদক্ষেপ ছিল ঠিকই কিন্তু এর ঝঞ্ঝাটও অনেক। নিশ্চিত প্রতিবন্ধকতা ছিল কয়েকটি নাম—গিরিরাজ সিং, সাধ্বী নিরঞ্জন জ্যোতি এবং সঞ্জীব বাল্যন। অন্য কয়েকজন, নির্বাচিত কিন্তু পরিত্যক্ত অথবা নির্বাচিত এবং প্রতীক্ষিত—মহেশ শর্মা, অনন্তকুমার হেগড়ে, সাক্ষী মহারাজ, সাধ্বী প্রজ্ঞা সিং ঠাকুর এবং অন্যরা অজ্ঞাত।
গিরিরাজ সিং, একজন ক্যাবিনেট মন্ত্রী, তিনি ইতিমধ্যেই জোটসঙ্গী দু’টি দলের নেতাদের সম্পর্কে অন্যায় মন্তব্য করে বসেছেন, একটি ইফতারে যোগ দেওয়ার কারণে। এজন্য বিজেপি সভাপতির ভর্ৎসনার পরেও তিনি কিন্তু দুঃখ প্রকাশ করেননি। ভোটের পর সাক্ষী মহারাজ একজন কয়েদির (২০১৭ সালে দেশ তোলপাড় হয়ে-যাওয়া উন্নাও ধর্ষণ কাণ্ডে অভিযুক্ত এক বিধায়ক) সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ধন্যবাদ জানিয়ে আসেন, তাঁর জয়ের কারণে। তারপর কিন্তু তাঁকে আর ভর্ৎসনা করা হল না।
শৈশবে বা অল্প বয়সে যেসব কুসংস্কার মজ্জাগত হয়ে গিয়েছে সেসব থেকে মুক্তিলাভ সহজ ব্যাপার নয়। যদি আরএসএস এবং বিজেপির প্রবীণ নেতাদের কথায় সময়ে সময়ে এই সমস্ত কুসংস্কারে প্রকট হয় তবে কোনও লাভ নেই (‘ঈদের জন্য বিদ্যুৎ, দেওয়ালিতে বিদ্যুৎ নয়’, ‘এমন নির্বাচন ক্ষেত্র যেখানে সংখ্যালঘুরাই সংখ্যাগুরু)। কোনও লাভ নেই যদি না দলিত এবং মুসলিমদের পিটিয়ে হত্যার ঘটনা বন্ধ করা হয় এবং প্রতি সপ্তাহে এই ধরনের অন্তত একটি অভিযোগ নথিবদ্ধ করা হয়। উপলব্ধি বদলে সাহায্য করবে না, যদি বিজেপির নির্বাচিত ৩০৩ জন এমপির ভিতরে মুসলিম সমাজ থেকে একজনমাত্র থাকেন।
ভীতি, কল্যাণ
আর একটি ভয়ংকর সমস্যা আছে। দু’টিমাত্র শর্ত পূরণ করতে পারলেই বিজেপি এই শ্রেণীগুলির আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হবে। প্রথম শর্ত হল—কারও ভয়-ভীতির মধ্যে বসবাস করা উচিত নয়। দ্বিতীয় শর্তটি হল—তাদের আর্থিক সংগতির ধারাবাহিক শ্রীবৃদ্ধি। আজ এই দু’টি শর্তের কোনোটিই পূরণ হয়নি; এই দু’টি শর্ত পূরণে সরকার কী পদক্ষেপ করবে, কীভাবে এগবে সেটা দেখার জন্য আমাদের আগ্রহ থাকবে।
নির্দিষ্ট কিছু শ্রেণীর মানুষের মন থেকে ভীতি দূর করতে কঠোর পদক্ষেপ জরুরি। প্রত্যেক সময়ে রেহাই দেওয়ার ব্যাপার রয়েছে, এই ধরনের কুকর্ম এবং সেটা যারা ঘটাচ্ছে দু’টিকেই শাস্তির আওতায় আনা আবশ্যক। সমস্তরকম শাস্তি এড়িয়ে যারা এসব করে যাচ্ছে এবং ভীতির পরিবেশ কায়েম করছে, বিজেপি নেতৃত্ব কি তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করবে? এটি একটি বড় জিজ্ঞাসা যে, হালফিল পরিস্থিতি দেখে এসব হবে বলে ভরসা হয় না, কিন্তু আমার আশা, যারা দণ্ডনীয় আচরণকে প্রশ্রয় দিয়ে চলেছে বিজেপি নেতৃত্বের ক্ষমতা এবার তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োগ করা হবে।
দ্বিতীয় শর্তের পুরোটা, বস্তুত, সরকারের একার হাতে নেই। অসন্তুষ্ট শ্রেণীগুলির আর্থিক শ্রীবৃদ্ধি ঘটবে যদি কেবলমাত্র তাদেরকে দেওয়া যায় বেশি চাকরি; চাকরির বেশি বেশি নিরাপত্তা; উচ্চ আয়; এবং সরকারি পণ্য ও পরিষেবাতে তাদের অধিকার। উচ্চ এবং ন্যায্য অর্থনৈতিক বৃদ্ধির সুযোগ এনে দেয় চাকরি এবং আয়। সেখানে ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষ যে ভয়াবহ বার্তা রেখে গেল তাতে করে উচ্চ এবং ন্যায্য বৃদ্ধির আশা নেই।
দলিত, মুসলিম, খ্রিস্টান এবং দারিদ্রসীমার নীচের শ্রেণীগুলি, আমার সন্দেহ হয়, বিজেপি প্রার্থীদের ভোট দিয়েছিল এই ভেবে যে অন্য কোনও প্রার্থীই এই লড়াইতে জেতার ক্ষমতা রাখেন না এবং ‘উইনিং’ সাইডে নিশ্চিত করেই আর কোনও প্রার্থীর দেখা মিলবে না। এটা ছিল বিচক্ষণতার ভোট; এ কোনও আস্থার ভোট ছিল না। তাদের আস্থা অর্জনে বিজেপিকে আরও অনেকটা করতে হবে।
এটি একটি অস্বাভাবিক পরিস্থিতি। বিজেপি এই সরকার গড়েছে তাদের আবেগবিহ্বল বা প্যাশনেট সাপোর্টারদের (যাদের দৃষ্টিতে মোদিজি কোনও ভুলই করতে পারেন না) এবং অসন্তুষ্ট শ্রেণীগুলির (যাদের দৃষ্টিতে মোদিজি, যতদূর সম্ভব, কোনও ঠিক কাজ করেননি) ভোট নিয়ে। করিৎকর্মা মোদিজি এই অজানা সাগর কীভাবে পাড়ি দেন সেটা দেখার জন্যই আমরা অধীর আগ্রহে প্রতীক্ষা করব।