পরিবারের সদস্যদের পারস্পরিক মতান্তর, কলহে মনে হতাশা। কাজকর্ম ভালো হবে। আয় বাড়বে। ... বিশদ
সকল মানুষেরই নিজ নিজ প্রবৃত্তি অনুযায়ী ধর্ম, অর্থ, কাম কোন একটি বিষয়ে আগ্রহ দেখা যায়। যুধিষ্ঠির সেখানে উপস্থিত বিদুর এবং ভ্রাতাদের উদ্দেশ্যে কোন্টি যথার্থ তা মনোনিবেশ করে ব্যক্ত করার জন্য অনুরোধ করেন।
তার উত্তরে প্রথমে মহামতি বিদুর বহুদর্শিতা, তপস্যা, ত্যাগ, শ্রদ্ধা, যজ্ঞক্রিয়া, ক্ষমা, মনঃশুদ্ধি, দয়া, সত্য ও সংযম—এই দশটিকে আশ্রয় করতে বলেন কারণ এগুলিই ধর্ম ও অর্থের মূল। তিনি ধর্মকেই প্রাধান্য দিয়েছেন কারণ ধর্মের পথেই ঋষিরা সংসার সমুদ্র পার করেছেন এবং অর্থও ধর্মের উপর নির্ভর করে।
অর্জুন বলেন যে পৃথিবী বিশাল কর্মক্ষেত্র যেখানে অর্থপ্রবৃত্তিই প্রশস্ত। কৃষি, বাণিজ্য, পশুপালন দ্বারা অর্থলাভ হতে পারে। ধর্ম ও কাম অর্থেরই অঙ্গ। অর্থসিদ্ধি হলে দুটি সিদ্ধি হতে পারে। প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিরা সর্বদাই অর্থোপসনা করে থাকেন। অর্থাৎ অর্থই চিরকালের জন্য শ্রেষ্ঠ।
নকুল ও সহদেবের মতানুযায়ী উপবেশন, শয়ন বা দণ্ডায়মান সকল অবস্থাতেই অর্থ বিষয়ে দৃঢ়তা প্রয়োজন। ধর্ম ও অর্থ পরস্পর একীভূত। যে অর্থ ধর্মসংযুক্ত ও যে ধর্ম অর্থ সম্মিলিত তাই শ্রেষ্ঠ। মানুষ প্রথমে ধর্মাচরণ করে ধর্মসংযুক্ত অর্থ অর্জন করে কাম সম্পাদন করবে।
ভীমসেন কামকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। তিনি উপমার দ্বারা বলেছেন যে ননী যেমন দধির সার, তেমন কাম ধর্ম ও অর্থের সার। তাঁর মতে ত্রিবর্গের মধ্যে কামই শ্রেষ্ঠ। ধর্ম ও অর্থ এই কামের উপরই নির্ভর করে। বণিক, কৃষক, গোপ, শিল্পী এবং দৈবীকর্মকারীগণ কামবশতই আপন আপন কর্মে প্রবৃত্ত হয়। কিন্তু কামের জয়গান করতে থাকলেও তিনি পরিশেষে এই অভিমত প্রকাশ করেন যে সমান ভাবেই ধর্ম, অর্থ ও কামের সেবা করা উচিত। যে ব্যক্তি এর মধ্যে কোন একটির সেবা করে তিনি অধম, দুটির সেবা করলে তিনি মধ্যম এবং যে লোক তিনটিরই সেবা করে তিনিই উত্তম।
যুধিষ্ঠির সকলের বক্তব্য সম্পন্ন হলে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে পাপ, পুণ্য, ধর্ম, অর্থ, কামে নিযুক্ত মানুষ সংসারসাগর থেকে মুক্তি পায় না। রাগদ্বেষযুক্ত পুরুষের মুক্তি হয় না। বিধাতাই বলবান কারণ তিনি তাঁর ইচ্ছানুসারে মানুষকে নানা কর্মে নিযুক্ত করেন। লোকহিতের জন্য মুক্তির উপায় গোপন রাখাই শ্রেয়। বিধাতাই বলবান কারণ তিনি তাঁর ইচ্ছানুসারে মানুষকে নানা কর্মে নিযুক্ত করেন। ‘ত্রিবর্গহীনোঽপি হি বিন্দতেঽর্থং তস্মাদহো লোকহিতায় গুহ্যম্’। – ‘ধর্ম, অর্থ ও কাম এই ত্রিবর্গবিহীন হয়েও মানুষ অর্থ লাভ করে। অতএব লোকহিতের জন্য মুক্তির উপায় গোপনীয় রাখবে।’