কর্মপ্রার্থীদের ধৈর্য্য ধরতে হবে। প্রেম-প্রণয়ে আগ্রহ বাড়বে। নিকটস্থানীয় কারও প্রতি আকর্ষণ বাড়বে। পুরোনো কোনও বন্ধুর ... বিশদ
‘প্রণিপাতেন’ অর্থাৎ প্রকৃষ্টরূপে নিজের নিপাত বা কৃতিময় অহং নাশের দ্বারা, ও ‘পরিপ্রশ্নেন’ অর্থাৎ বিশিষ্টভাবে অধ্যাত্ম বিষয়ক প্রশ্নের দ্বারা (যোগ জিজ্ঞাসা)। সেব্ ধাতু উপভোগ করা অর্থে সেবা। সেবা অর্থে পরিচর্য্যাও হয়। সেবায় বা আচার্য্যের নিকট যথাযথ ব্রহ্মজ্ঞান উপভোগেই সঠিক আত্মারূপী গুরুর পরিচর্য্যা হয়।
শাস্ত্র বলিয়াছেন—‘আত্মাবৈগুরুরেক’ (আত্মাই একমাত্র গুরু।) ব্যাসদেবও অখিল গুরু বলিয়া ভগবানকেই নির্দ্দেশ করিয়াছেন। যদি তাহাই হয় তবে অধুনা প্রচলিত গুরুবাদের অনুপন্থিগণ যে সকল শ্লোকাদি উদ্ধৃত করিয়া তাঁহাদের মতবাদ স্থাপনে সচেষ্ট হন তাহাতে শাস্ত্রসঙ্গতি রক্ষা করা হয় না। দর্শনের মূল ভিত্তিই বিনষ্ট হয়। তাঁহারা গুরু বলিতে একটি ব্যক্তিকে নির্দেশ করেন। ব্যক্তি তো কখনও গুরু হইতে পারেন না—গুরু একটি শক্তি। যদি ব্যক্তিই গুরু হন তাহা হইলেই জন্মাবধিই তিনি গুরু নহেন কেন! কিন্তু কোন ব্যক্তিকে ত জন্মের সঙ্গেই গুরু আখ্যা দেওয়া হয় না। বিশিষ্টভাবে অধ্যাত্মশক্তি লাভের পর উহা যখন বিকাশ পায়, তখনই তিনি গুরু বলিয়া আখ্যাত হন। তৎপূর্ব্বে নহে।
শক্তিরূপে তিনি গুরু, কিন্তু দেহীরূপে তিনি আচার্য্য। আ-চর ধাতু (গমন করা অর্থে) হইতে আচার্য্য শব্দ। তাহা হইলে আচার্য্য শব্দের অর্থ হয় যিনি আমার পূর্ব্বে পরাধামে পরম পুরুষের সহিত মিলনের জন্য গমন করিয়াছেন এবং তাঁহার কর্ম্ম হইল আমাকে সেই পথের সন্ধান দেওয়া। বাস্তবিক পক্ষে বিচার করিলে দেখিতে পাই, আচার্য্য বা গুরু যাহাই বলি না কেন, তিনি তো তদাশ্রিত জীবকে আত্মজ্ঞান লাভের পথই নির্দ্দেশ দেন। যেমন ‘মা’ তাঁহার নিজ ভাবসম্পদে সন্তানের জীবনকে করেন মহীয়ান। আচার্য্য ত পিতা নহেন, তিনি মাতা।
মানুষের বীজরূপ যেমন পিতৃদেহ হইতে মাতৃগর্ভে আসিয়া মায়ের রস, রক্ত ও ভাবের দ্বারা পরিপোষিত হইয়া সময়ে প্রসূত হয়, তেমনি গুরুশক্তির বীজ আচার্য্যের ধ্যান, জপ, তপস্যায় তদ্দেহে পরিপুষ্টি লাভ করিয়া যথাসময়ে তাঁহার আত্মিক সন্তানদের মধ্যে প্রকাশিত হয়। আচার্য্য যে শিষ্য-সন্তান করেন উহা তো তাঁহার আধ্যাত্মিক প্রসব। দুর্ব্বলা জননীর অকাল প্রসূত সন্তানগণ যেমন দুর্ব্বল ও ক্ষীণায়ুঃ, অপরিপুষ্ট গুরুশক্তির বীজজাত আধ্যাত্মিক সন্তানগণও তেমনি অনুপলব্ধ। নতুবা আচার্য্য বরণ করিয়া আত্মিক জ্ঞান হইতে বঞ্চিত থাকিবার আর কি কারণ থাকিতে পারে? এ বিষয়ে মৎপ্রণীত ‘ঐশক’ পুস্তকে বিশদ আলোচিত হইয়াছে। শ্রীকৃষ্ণও অর্জ্জুনকে ‘দিব্যং দদামি তে চক্ষু’ বলিতে সঙ্গে সঙ্গেই তাঁহার দিব্য দর্শন আরম্ভ হইল। ইহাই রাজযৌগিক দীক্ষা বা ‘শাম্ভবী দীক্ষা’। এ বিষয়ে শাস্ত্র বলিয়াছেন—গুরুরালোক মাত্রেণ স্পর্শাৎ সম্ভাষণাদপি।/ সদ্যঃ সংজ্ঞাভবের্জ্জন্তো দীক্ষা সা শাম্ভবী মতা।। (গুরুর দৃষ্টি, স্পর্শ অথবা বাক্যদ্বারা সদ্যই যে একটা ব্রহ্মজ্ঞান জন্মে উহাই শাম্ভবী দীক্ষা।)