কর্মপ্রার্থীদের ধৈর্য্য ধরতে হবে। প্রেম-প্রণয়ে আগ্রহ বাড়বে। নিকটস্থানীয় কারও প্রতি আকর্ষণ বাড়বে। পুরোনো কোনও বন্ধুর ... বিশদ
ভগবানকে ভালবাসিলে কাম আপনি কমিয়া যায়, ক্রোধ আপনি থামিয়া যায়, লোভ আপনি দমিত হয়,—ইহার জন্য আলাদা করিয়া আর কোনও চেষ্টা করিতে হয় না। পাশ্চাত্য পণ্ডিতেরা মানবের সকল আচরণে, সকল দৃষ্টিভঙ্গীতে, সকল চিন্তা-ধারায় কামের অপ্রতিহত মূর্ত্তি আবিষ্কার করিয়া শঙ্কিত হইয়াছেন এবং অর্দ্ধোপভুক্ত ও অনুপভুক্ত কামের কুফল যেমন করিয়া সমাজের প্রতি অঙ্গে অকল্পনীয় অশান্তি আনিয়াছে, তাহা দেখিয়া কামকে অধিকতর নিশ্চয়তার সহিত উপভোগ করিয়া মনের বিকার প্রশমিত করিয়া লইয়া সকলকে শান্তি ও নিরুদ্বেগ জীবনের পথপ্রদর্শন করিবার জন্য ব্যস্ত হইয়াছেন। কিন্তু ভারতের ঋষি কামের পৃথক্ অস্তিত্ব স্বীকার করেন নাই। নিখিল ভুবন প্রেমময় পরমেশ্বরের প্রেম হইতে সৃষ্টি হইয়াছে, তাই সব-কিছু এখানে প্রেমময়। সেই প্রেম ক্ষুদ্র আধারে পতিত হইয়া কাম নাম ধারণ করে। আবার অনন্ত অসীম পরমেশ্বরে পতিত হইয়া নিজ স্বরূপ প্রকাশ করে, প্রেম হয়। কাম প্রেমেরই বিকার মাত্র, প্রেমই নিত্যশুদ্ধ অবস্থা। আত্মসুখের লিপ্সার সহিত যখন মিশ্রিত হয়, প্রেম তখন কাম হইয়া যায়; বিশ্বসুখের, বিশ্বাত্মার সুখের, বিশ্বপ্রভুর সুখের লিপ্সার সহিত যখন যুক্ত হয়, কাম তখন প্রেমে পরিণত হয়। পরমেশ্বরই কামের রূপ ধরিয়া সর্ব্বপ্রাণীর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র হৃদয়ে বাস করিতেছেন। যেই মুহূর্ত্তে কোনও প্রাণী জানিল যে, কামের পৃথক্ কোনও অস্তিত্ব নাই, ঈশ্বরের প্রেমময় অস্তিত্বেই তাহার প্রকৃত অস্তিত্ব, তখন আর কাম তাহার ক্ষুদ্র লক্ষ্য, ক্ষুদ্র দৃষ্টি, ক্ষুদ্র লীলা-বিলাস-লাস্য লইয়া বসিয়া থাকিতে পারে না, তখন সে প্রেমের বিশ্বম্ভরী মূর্ত্তি ধারণ করে এবং একজনের প্রতি অর্পিত তুচ্ছ ভালবাসাকে বিশ্বের প্রতিজনের প্রতি বিসর্পিত করিয়া দিয়া নিজেও হয় প্রতিক্রিয়া বর্জ্জিত মধুময়, বিশ্বকেও করে বিপুল আনন্দে উল্লসিত। ভগবানকে ভালবাস, অন্তরের কামকে ভগবানের কোলে ফেলিয়া দাও, তাঁহার অকৈতব প্রেমের মধুময় স্পর্শে কাম তাহার কণ্টকমালা হইতে রিক্ত হইয়া পারিজাত-মাল্য গলদেশে ধারণ করিয়া বাহির হইয়া আসুক, পূতিগন্ধময় তাহার অস্তিত্ব কলুষলেশহীন নিষ্পাপ-সুন্দর দিব্যসুরভি লইয়া বহির্গত হউক। যাহা ছিল তোমার গুপ্ত শত্রু, তাহা হউক তোমার, আমার, নিখিল বিশ্বের প্রতিজনের পরম কুশলকারী নিত্যবন্ধু। সত্য-প্রতিষ্ঠার চেষ্টা ব্রহ্মচর্য্যের পরম-সহায়ক। সত্যই ব্রহ্ম, —ইহা শাস্ত্রের নির্দ্দেশ, ইহা মুনিগণের উপলব্ধি। সত্যে যে বিচরণ করে, ব্রহ্মে বিচরণ তার কেন কঠিন হইবে? সত্যে দৃঢ় প্রতিষ্ঠা অর্জ্জন কর। যে পরের প্রাপ্যের প্রতি অন্যায় ও লুব্ধ দৃষ্টি দেয় না, তাহার পক্ষে সত্যে সুদৃঢ় হওয়ার পথ সুগম। যে অন্যের প্রতি মনে বিদ্বেষ পোষণ করে না, তাহার পক্ষে সত্যে প্রতিষ্ঠিত হওয়া সহজ। যে অপরের অনুগ্রহ-লাভের প্রত্যাশী নহে, নিজের কার্য্য নিজের শক্তিতেই সাধন করিতে চেষ্টিত, তাহার পক্ষেও সত্যে প্রতিষ্ঠালাভ সহজ। জগতের অধিকাংশ মিথ্যাই অসৎ পথে বস্তু লাভের লোভ হইতে সৃষ্ট হয়। যাহা সৎপথে লাভ করিতে পারিবে না। তাহার প্রতি যদি লোভ থাকে, মানুষ মিথ্যা কহিতে বাধ্য হয়। যাহার প্রতি বিদ্বেষ আছে, ক্ষমার মহিমায় যদি তাহার প্রতি অন্তরের শত্রুতা-বোধ প্রশমিত করিতে না পার, তাহা হইলে তাহাকে অপদস্থ, হতমান ও পরাভূত করিবার জন্য মিথ্যার আশ্রয় লইতে তুমি প্রলুব্ধ হইবেই।