কর্মপ্রার্থীদের ধৈর্য্য ধরতে হবে। প্রেম-প্রণয়ে আগ্রহ বাড়বে। নিকটস্থানীয় কারও প্রতি আকর্ষণ বাড়বে। পুরোনো কোনও বন্ধুর ... বিশদ
শারীরিক নিদ্রার কথাই বলছি, কেননা যখন দেহ ঘুমিয়ে পড়ে তখন আমাদের সারা সত্তা ঘুমিয়ে পড়ে বিশ্বাস করলে ভুল হবে।
দেহের পক্ষে যেমন খাদ্যের প্রয়োজন, তেমনি চাই নিদ্রা। বেশ পরিমিত ঘুম দরকার—তা বলে অতিরিক্ত নয়। কতখানি ঘুমান দরকার তা নির্ভর করে দেহের প্রয়োজন অনুযায়ী...
পর্যাপ্ত পরিমাণ না ঘুমালে খুবই ভুল করা হবে। সাত ঘণ্টা নিদ্রা যাওয়া এ দেহের পক্ষে সর্বনিম্ন প্রয়োজন। যদি কারো স্নায়ুতন্ত্রী খুব শক্তিশালী থাকে তাহলে ঘুমকে কমিয়ে ছ’ঘণ্টা করা যেতে পারে। এমনকী কমিয়ে পাঁচও করা চলতে পারে কিন্তু তা দুর্লভ...একান্ত প্রয়োজন না হলে তা করা সমীচীন নয়।
জ্বরজ্বালা এবং মানসিক বিভ্রাটের সময়—উভয়ক্ষেত্রেই নিদ্রা প্রভূত সাহায্য করে। সে সময় ঘুমকে বাদ দেওয়া মোটেই বাঞ্ছনীয় নয়, বাদ দেওয়ার অর্থ—আরোগ্যকারী শক্তিকেই হারানো...
রাতে না ঘুমিয়ে জেগে থাকার চেষ্টা করা ঠিক পদ্ধতি নয়। প্রয়োজনীয় ঘুম থেকে দেহকে বঞ্চিত করলে তা তামসিক হয়ে পড়ে আর জাগ্রত অবস্থায় প্রয়োজনীয় একাগ্রতা আনার পক্ষেও এ দেহ অনুপযুক্ত হয়ে যায়। সত্যকার পথ হচ্ছে ঘুমকে রূপান্তরিত করে তোলা—মোটেই তাকে দমন করা নয়। আর বিশেষ করে আমাদের শিখতে হবে কেমন করে ঘুমের মাঝেও সচেতন থাকা যায়। এই কাজটি যদি ঠিকমত করা হয় তাহলে ঘুম চেতনার একটা আদর্শ অবস্থায় পরিণত হয় আর ঘুমেও জাগ্রত অবস্থারই মত সামনে সাধনা চলতে পারে। সেই একই সময়ে সাধক আবার শারীরিক স্তরের অতীত অন্যান্য চেতনার স্তরে প্রবেশ করতে পারে। আর সেখানকার জ্ঞাতব্য প্রভূত পরিমাণ অভিজ্ঞতাও অর্জন করতে পারে।
প্রশ্ন: কেন ভাল শীঘ্র ঘুমিয়ে পড়া এবং সকাল সকাল ঘুম থেকে জেগে ওঠা?
সূর্য যখন অস্ত যায় তখন এক ধরনের শান্তি এই পৃথিবীর মাটির বুকে নামে—আর এই শান্তি ঘুমের পক্ষে বিশেষ প্রয়োজনীয়... আর যখন সূর্য ওঠে এক প্রাণবন্ত কর্মক্ষমতা এই পৃথিবীর বুকে নামে, এই শক্তি কাজ করার পক্ষে খুবই সহায়ক... যখন তুমি দেরী করে ঘুমোতে যাও তখন তোমার দেরীতেই ঘুম ভাঙে। তুমি প্রকৃতির শক্তির বিরোধিতা কর, আর এ কাজটি খুব বিজ্ঞজনোচিত নয়।
প্রশ্ন: গভীর রাতের চেয়ে মধ্যরাত্রির আগে কেন ঘুমোতে যাওয়া ভাল?
কারণ, প্রতীকস্বরূপ—মধ্যরাত্রির সময় পর্যন্ত সূর্যের অস্ত যাওয়ার সময় আর মধ্যরাত্রির প্রথম প্রথম প্রহর থেকেই সূর্যোদয়ের শুরু... যাই হোক, কত ঘণ্টা ঘুমালাম সেটি বড় কথা নয়, আসল কথা হচ্ছে ঘুমের প্রকৃতি কি ধরনের...যদি ঘুমের মাঝে সত্যি সত্যি ক্লান্তি দূর করতে বা বিশ্রাম পেতে চাও তাহলে শুতে যাবার আগে একটু কিছু খাওয়া ভাল—যেমন এক কাপ দুধ বা সুপ কিংবা ফলের রস। হাল্কা আহার শান্ত ঘুম এনে দেয়। যাই হোক না কেন—গুরুভোজন থেকে বিরত হবে...নইলে ঘুম হবে অস্থিরতায় ও উত্তেজনার দুঃস্বপ্নে ভরা...নয়তো তা হবে অসাড়, একঘেয়ে বোঝার মত ভারী...কিন্তু আসল কথা হচ্ছে—মনকে পরিষ্কার করা...হৃদয়াবেগে ও বাসনার দুরন্ত উত্তেজনাকে প্রশমিত করা...বাসনা কামনা যে সব আনুষঙ্গিক চঞ্চলতা নিয়ে আসে তাকে প্রশমিত করতে শেখা চাই।
শ্রীঅরবিন্দ ও শ্রীমায়ের বাণী সংকলিত ‘নিদ্রা ও স্বপ্ন’, থেকে