প্রেম-প্রণয়ে কিছু নতুনত্ব থাকবে যা বিশেষভাবে মনকে নাড়া দেবে। কোনও কিছু অতিরিক্ত আশা না করাই ... বিশদ
করতে হয়েছে। সত্যিই নামে কিছু যায় আসে না। ভূখণ্ড, মানুষ, মানুষের ভাষা ও সংস্কৃতি তো বদলায়নি। পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, অসম, মেঘালয়, মিজোরাম প্রভৃতি পাঁচটি ভারতীয় রাজ্যকে ছুঁয়ে রয়েছে বাংলাদেশের পশ্চিম সীমান্ত। দু’দেশের আন্তর্জাতিক সীমান্তের মোট দৈর্ঘ্য ৪,১৫৬ কিমি। এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তটিই সবচেয়ে দীর্ঘ। ২,২১৭ কিমি। এরপর দীর্ঘ সীমান্ত ত্রিপুরার দিকে। ৮৫৬ কিমি। অসমে সীমান্ত দৈর্ঘ্য ২৬২ কিমি। মেঘালয় ও মিজোরামে সীমান্ত রয়েছে যথাক্রমে ৪৪৩ কিমি ও ১৮০ কিমি। ভারতের পূর্ব সীমান্তের এই যে পাঁচটি রাজ্যের কথা
বলা হল তাদের লাগোয়া বাংলাদেশি এলাকার ভাষা ও সংস্কৃতি একেবারেই অভিন্ন। বেশিরভাগ অংশের মানুষ মূলধারার বাংলাভাষায় কথা বলে। বাদবাকি অংশে ডায়ালেক্ট বা আঞ্চলিক উপভাষা চলে। সীমান্তে ধর্ম ও সংস্কৃতিও মিশ্র। হিন্দু ও মুসলিম জনগোষ্ঠীর ভিতরে আদান-প্রদানের ভাবটি এই অঞ্চলজুড়ে অতি প্রাচীন। এই দীর্ঘ সীমান্তের ৩০০৬ কিমি অংশে কাঁটাতার দেওয়া হয়েছে। ভারত ও বাংলাদেশের নিজস্ব পৃথক সীমান্ত সুরক্ষা ব্যবস্থা আছে।
তার পরেও সীমান্ত এলাকার মানুষের মধ্যে কিছু সাধারণ মিল রয়েই গিয়েছে। দু’পারেই সীমান্তবাসীদের বেশিরভাগই গরিব। সবচেয়ে বেশি মিল দু’পারের এই মানুষগুলির প্রয়োজনে। চাল ডাল আলু পেঁয়াজ তেল নুন ওষুধ প্রভৃতি বহু প্রয়োজনেই বাংলাদেশের মানুষ ভারতের উপর আজও অতি মাত্রায় নির্ভরশীল। এপারের কিছু গরিব মানুষ এটাকেই সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করেছে। গবির মানুষের একাংশ চোরাচালানকেই একটি স্বাভাবিক ‘পেশা’ হিসেবে মনে করে এসেছে দীর্ঘকাল। কাঁটাতার এবং সীমান্ত প্রহরায় কড়াকড়িও তাদের মনোভাব পাল্টাতে পারেনি। সীমান্তবাসীদের পূর্ণাঙ্গ সহযোগিতা ছাড়া চোরাচালান বন্ধ করা অসম্ভব। কিন্তু দু’পক্ষের ‘কমন ইন্টারেস্ট’ এরকম হয়ে থাকায় সেই সহযোগিতা পাওয়া দুষ্কর। সবচেয়ে সমস্যা হল—শুধু নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের আদান-প্রদানে চোরাচালান সীমাবদ্ধ নেই। এটি সীমাবদ্ধ নেই কিছু গরিব মানুষের মধ্যেও। গরিব মানুষগুলি সস্তার বাহক হিসেবেই ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রাণ হাতে নিয়েই চোরাচালান হাসিল করে দিচ্ছে তারা। এদের ব্যবহার করছে মাফিয়া গোষ্ঠী। তারা এক একটি টাকার কুমির! মাফিয়াদের আসল লক্ষ্য—সোনা, ডলার, ইউরো, জাল ভারতীয় টাকা, হেরোইন-সহ বহুমূল্য মাদক, বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র, বিস্ফোরক এবং গোরু চোরাচালান।
আর এর ফাঁকে চলে হিউম্যান ট্রাফিকিং বা মানব পাচার। মানব পাচার চক্রটি সবচেয়ে উদ্বেগের একটি বিষয়। এই সূত্রে শুধু নারী পাচার হয় না, কুখ্যাত জঙ্গিরাও ভিজে বেড়ালের রূপ ধরে চলাচল করে। এর পিছনে নিশ্চিত হাত থাকে পাকিস্তানের। ভারতের পশ্চিম সীমান্তে এঁটে ওঠা কঠিন হলে পাক সেনা এবং আইএসআই বাংলাদেশ করিডরকে টার্গেট করে। ভারতের কাশ্মীর-নীতিতে বদল ঘটতেই পাকিস্তানের এই টার্গেট আরও মারাত্মক হয়ে উঠেছে বলে মনে করেন সন্ত্রাসবাদ বিশেষজ্ঞরা। তবে এটি নিশ্চিত যে সীমান্ত সুরক্ষা ব্যবস্থা নিশ্ছিদ্র থাকলে এই জিনিস চলতে পারত না। বিশেষ করে বিএসএফের সকলে যদি কর্তব্যপরায়ণ হতেন, তাঁদের মধ্যে দেশপ্রেমের ছিটেফোঁটাও থাকত, তা হলে মাফিয়ারা হাজার ধুরন্ধর হলেও এই পাপ কাজ চালাতে পারত না। অসৎ কিছু সীমান্তবাসী আরও ‘ইয়েস বস’ হয়েও শেষরক্ষা করতে পারত না। বিশেষ আশার কথা এই যে, বিএসএফের কারও কারও সন্দেহজনক গতিবিধির উপর নজর রাখছে উচ্চ পর্যায়ের গোয়েন্দা সংস্থাগুলি। যেমন এখন সিবিআইয়ের জালে এক বড় বিএসএফ কর্তা। এই তদন্ত নিরপেক্ষভাবে শেষ করে ওই কর্তাসহ এই চক্রের সব ক’টি পাণ্ডাকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। করোনা আবহে সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলির অতি সক্রিয়তা এখন এক প্রমাণিত সত্য। তাই সীমান্ত নিরাপত্তা অবিলম্বে আরও নিশ্ছিদ্র করে ফেলা জরুরি।