প্রেম-প্রণয়ে কিছু নতুনত্ব থাকবে যা বিশেষভাবে মনকে নাড়া দেবে। কোনও কিছু অতিরিক্ত আশা না করাই ... বিশদ
হয়ে ওঠা মানুষই হল সংখ্যাগুরু। তবুও করোনা চিত্রটা এখনও নিঃসন্দেহে ভয়াবহ। কারণ, এখনও দৈনিক নতুন সংক্রামিতের সংখ্যা ৮০ হাজারের বেশি। মৃতের সংখ্যাও ১ হাজারের অধিক। বিপুল জনসংখ্যার পরিপ্রেক্ষিতেও এই সংখ্যা দু’টি মোটেও হেলাফেলার নয়। দেশবাসীকে ভীত রাখার জন্য তথ্যটি যথেষ্ট। উৎপাদন ব্যবস্থা এবং অর্থনীতি যে
ভেঙে পড়েছে তার প্রধান কারণ এই ভয়। মান্য স্বাস্থ্যবিধিকে
হাতিয়ার করেও মানুষ সামনে এগতে সাহস পাচ্ছে না। সরকারও
মানুষকে সেভাবে সাহস জোগাতে পারেনি এখনও। সকলেই চলেছে দ্বিধা-দ্বন্দ্বের ভিতর দিয়ে। এখনও কেউ নিশ্চিত করে বুঝে উঠতে পারছে না, ঠিক কতটা এগনো নিরাপদ।
এই দোলাচল কাটিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাওয়ার ভরসা মানুষ খুঁজছে কার্যকরী ভ্যাকসিনের মধ্যে। আমরা জানি, ভ্যাকসিন নিয়ে বিশ্বজুড়ে তিন শতাধিক গবেষণামূলক কাজ চলছে। তার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ভারতও। এছাড়া অক্সফোর্ডের অ্যাস্ট্রোজেনেকার ভ্যাকসিন ‘কোভিশিল্ড’-এর গবেষণাতেও ভারত অন্যতম এক অংশীদার। ভারতীয় সংস্থা সিরাম ইনস্টিটিউটে এই ভ্যাকসিনের ফেজ থ্রি ট্রায়াল খুব শিগগির শুরু হবে। সিরামেই তৈরি হবে আমেরিকার ভ্যাকসিন নোভাভ্যাক্স। আগামী মাসে নোভাভ্যাক্সেরও হিউম্যান ট্রায়াল শুরু হতে চলেছে। সব মিলিয়ে ভারতে ৩০টি ভ্যাকসিনের উপর জোরদার পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। দু’টি দেশীয় ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় পর্যায়ের হিউম্যান ট্রায়ালে কোনও খারাপ খবর নেই। সব মিলিয়ে বেশ আশাবাদী ভারত সরকার। সরকার আশ্বাস দিয়েছে, আগামী কয়েক মাসের ভিতরেই সাধারণের নাগালে পৌঁছে যাচ্ছে কার্যকরী ভ্যাকসিন।
পৌঁছে যাচ্ছে তো বলা হল, কিন্তু ২৮টি রাজ্য এবং ৮টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল সমেত বিপুলায়তন এই দেশের সবার কাছে এই মহার্ঘ প্রতিষেধকটি পৌঁছে দেওয়া মোটেই সহজ ব্যাপার নয়। বহু ভাষা, বহু ধর্ম, বিচিত্র সংস্কৃতির ১৩৫ কোটি মানুষ। ভ্যাকসিন নিয়ে কোনও কোনও জনগোষ্ঠীর বিশেষ সংস্কার থাকতে পারে। অতীতে বিসিজি, পোলিও-সহ কয়েকটি ভ্যাকসিন প্রয়োগের অভিজ্ঞতা কিন্তু সারা ভারতের জন্য সুখকর ছিল না। সুতরাং বহু মানুষকে বুঝিয়ে-সুজিয়ে রাজি করানোর দায়িত্বও সরকারকে নিতে হবে। এই ব্যাপারে বিভিন্ন গোষ্ঠী নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলে বিশ্বাস অর্জন করতে হবে। কেন্দ্র যেন গাজোয়ারিভাবে টিকাকরণের রাস্তায় না হাঁটে। বেশ সময় নিয়ে রাজ্যগুলির সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতেই সব সিদ্ধান্ত নিতে হবে। পশ্চিমবঙ্গ-সহ সব রাজ্যই যে এই ব্যাপারে স্বাস্থ্য মন্ত্রকের সঙ্গে সহযোগিতা করবে তাতে কোনও সংশয় নেই। পশ্চিমবঙ্গ সরকার তো সমস্ত বাসিন্দাকে একেবারে বিনামূল্যেই করোনা ভ্যাকসিন দেওয়ার চিন্তাভাবনা করছে। সেইমতো কলকাতা থেকে সার্ভেও শুরু হয়েছে। জানার চেষ্টা হচ্ছে—কলকাতা-সহ রাজ্যের কোথায় কত ডোজ ভ্যাকসিন প্রয়োজন; বিভিন্ন জায়গায় কীভাবে সেগুলি পৌঁছে দেওয়া যায় এবং টিকাকরণ সম্ভব। দেশের কোথায় কতটা ভ্যাকসিন ডোজ প্রয়োজন এবং কীভাবে সেসব পৌঁছে দেবে, কেন্দ্রও নিজস্ব পদ্ধতিতে সেটি
জানার চেষ্টা করছে। আপাতত ঠিক হয়েছে ২৫ হাজার কোল্ড চেইনের মাধ্যমেই এসব পাঠানো হবে। আমাদের দেশের সবচেয়ে বড় বদনাম হল, শুরুটা ভালোই হয়। শুরুতে অনেক আশার কথা শোনানো হয়। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে অনেক কিছুই লেজে গোবরে হয়ে যায়। এর জন্য অজ্ঞতা, অদক্ষতাকে যেমন দায়ী করা যায়, তেমনি দায়ী করা যায় রাজনৈতিক সঙ্কীর্ণতা ও অস্বচ্ছ মনোবৃত্তিকে। দেশবাসীর প্রত্যাশা থাকবে যে, অন্তত এরকম একটি কর্মসূচি সমস্ত ধরনের অসূয়া থেকে মুক্ত হয়েই রূপায়িত হবে। করোনা যুদ্ধজয়ের জন্যই এটি জরুরি। এটি জরুরি দেশের স্বার্থে, তদুপরি মানব সভ্যতার স্বার্থে।