প্রেম-প্রণয়ে কিছু নতুনত্ব থাকবে যা বিশেষভাবে মনকে নাড়া দেবে। কোনও কিছু অতিরিক্ত আশা না করাই ... বিশদ
এই বিল আইনে পরিণত হলে কৃষকের সার্বিক বিকাশ কতটা হবে, নাকি পণ্যের যথাযথ দাম না পেয়ে কৃষক সর্বস্বান্ত হবেন—সে উত্তর সময়েই পাওয়া যাবে। প্রধানমন্ত্রী তো দেশের কৃষকের আয় দ্বিগুণ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। সে প্রতিশ্রুতিও তিনি পালন করতে পারেননি। পক্ষান্তরে অনাহারে কৃষকের মৃত্যু বা ঋণভাবে জর্জরিত হয়ে কৃষকের আত্মহত্যার ঘটনা মোদি জমানায় বহু ঘটেছে। বিল পাশের পরই দিনটিকে ভারতের কৃষির ইতিহাসে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসের মুহূর্ত বলে বর্ণনা করেছেন দেশের প্রধানমন্ত্রী। প্রশ্ন হল, উচ্ছ্বাস কার? অনড় প্রধানমন্ত্রীর, নাকি দেশের কৃষকদের? এতে নাকি ভারতীয় কৃষির উন্নতির দরজা খুলে যাবে। সত্যি বলতে কী, এদেশের কৃষকদের অন্তরের ব্যথা বেদনার কথা তাঁর কানে পৌঁছায় না। খবর রাখেন না কৃষকের দুর্দশারও। বিল-এ পণ্যের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য দেওয়ার বাধ্যবাধকতার উল্লেখ নেই বলে সরব হয়েছে বিরোধীরা। তারা প্রশ্ন তুলছে, কর্পোরেটরা কৃষককে ন্যায্য মূল্য দেবে কি? তবে এই বিল পাশ হওয়ায় খুশি হতে পারে কর্পোরেট জগৎ। পাশাপাশি চুক্তিভিত্তিক চাষের রাস্তা যেভাবে প্রশস্ত করা হয়েছে তাতে কৃষক শোষণের সম্ভাবনাও অমূলক নয়। আমাদের দেশের বহু চাষিই আর্থিক সামর্থ্যের অভাবে তাঁর শস্য হিমঘরে রাখতে অক্ষম। সেক্ষেত্রে কর্পোরেটের সঙ্গে শস্যের দাম কষাকষি করার ক্ষমতাও তাঁদের অনেকের নেই। কর্পোরেটের দেওয়া দামে তাঁরা যে ফসল বেচতে বাধ্য হবেন না এ গ্যারান্টি কি সরকার দিতে পারবে? আসলে দেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মাটির কোনও যোগ নেই। সেই যোগ আছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। কৃষক স্বার্থরক্ষায় কী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত তা সম্ভবত প্রধানমন্ত্রীর অজানা। তাহলে তিনি কৃষক ও ক্রেতা উভয়ের স্বার্থরক্ষার দিকে নজর দিতেন। কৃষকের স্বার্থরক্ষায় সিঙ্গুর আন্দোলনের সময় টানা ২৬ দিন অনশন করেছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে তা গল্পকথার মতো শোনালেও সেটাই বাস্তব। কৃষকের স্বার্থরক্ষার চেষ্টা যে এরাজ্যে হয়েছে তার প্রমাণ কেন্দ্রের দেওয়া তথ্যেই মিলেছে। মোদি সরকারের একের পর এক পদক্ষেপে অন্য রাজ্যের কৃষকের পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গেলেও ব্যতিক্রম পশ্চিমবঙ্গ। কেন্দ্রীয় তথ্যই বলছে, এই রাজ্যে গত পাঁচ বছরে একজন কৃষকও আত্মহত্যা করেননি।
রাজ্যসভায় যেভাবে কৃষি বিল পাশ করানো হল তা দেশের শাসকের গা জোয়ারি মানসিকতারই বহিরপ্রকাশ। সরকার পক্ষ আত্মতুষ্ট হলেও ওই বিল দু’টিকে ঘিরে যে বিতর্ক দানা বাঁধছে তাতে সরকারের অস্বস্তি বাড়বে বই কমবে না। সরকারের অন্দরেই এ নিয়ে মত পার্থক্য দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। ইতিমধ্যেই সঙ্ঘ পরিবারের স্বদেশি জাগরণ মঞ্চ ও ভারতীয় কিষাণ সঙ্ঘ নাকি চাষিদের এমএসপি নিশ্চিত করার দাবি করেছে। যাতে বেসরকারি সংস্থা এমএসপি থেকে কম দামে ফসল কিনতে না পারে। তাই কৃষিপণ্য বাণিজ্য ও কৃষি ফসলের দামের সুরক্ষার যুক্তিতে ৫৬ ইঞ্চির ছাতির প্রধানমন্ত্রী যতই বাহবা পাওয়ার চেষ্টা করুন দেশের কৃষকরা গর্জে উঠলে সে ধাক্কা তিনি সামলাতে পারবেন তো? বিরোধীরা তো আছেই, বিজেপি শাসিত কোনও কোনও রাজ্যের কৃষকরাও বিলের প্রতিবাদে পথে নামছেন। বিতর্কিত বিলকে কেন্দ্র করে ঘরে-বাইরের চাপ নিঃসন্দেহে সরকারের অস্বস্তি বাড়াবে।