উচ্চবিদ্যার ক্ষেত্রে বাধার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হতে হবে। উচ্চতর বিদ্যার ক্ষেত্রে শুভ ফল পাবে। কর্মপ্রার্থীদের ... বিশদ
এমনিতেই দেশের বাজারে সস্তা চীনা পণ্যসামগ্রী ছেয়ে রয়েছে। তার উপর নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া প্রভৃতি দেশ থেকে আসা দুগ্ধজাত দ্রব্য বাজার দখল করলে ভারতের ডেয়ারি শিল্পও কোণঠাসা হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ আগেই করেছিল বিরোধীরা। প্রশ্ন উঠছিল বিদেশি দুগ্ধজাত পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় দামের লড়াইয়ে কি পেরে উঠবেন এদেশের গোয়ালারা? এমন আশঙ্কাটি প্রকাশ করেছিল খোদ সঙ্ঘের শাখা স্বদেশি জাগরণ মঞ্চ। চুক্তি হলে দেশের বাজারে সস্তার বিদেশি পণ্যের রমরমা বাড়বে, মার খাবেন দেশের চাষি, ছোট মাঝারি ব্যবসায়ীরা। এর প্রতিবাদে বিরোধীরা সোচ্চার হলেও আগে ক্ষমতার দম্ভে মোদি সরকার বিরোধীদের কথায় বিশেষ আমল দেয়নি। স্বাভাবিক কারণেই তাই এখন প্রশ্ন একটা থেকেই যায়। অনেক দর কষাকষির পর শেষ মুহূর্তে কেন এই চুক্তির ক্ষেত্র থেকে ভারত সরকার সরে দাঁড়াল। প্রধানমন্ত্রী অবশ্য চিরাচরিত কায়দায় মানুষের মন জয় করতে বিবেকের বাণী শুনিয়েছেন। জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীর বক্তব্যকে উদ্ধৃত করেছেন। বলেছেন, চাষি, ছোট ব্যবসায়ী, দেশীয় শিল্প, ক্রেতা কর্মী—এঁদের সকলের স্বার্থের কথা মাথায় রেখেই আপাতত এই মুক্ত বাণিজ্যের মঞ্চে শামিল হচ্ছে না ভারত। ভারতের পক্ষ থেকে আরও যুক্তি দেওয়া হয়েছে, মঞ্চে যোগ দেওয়ার জন্য যেসব শর্ত ভারতের তরফে দেওয়া হয়েছিল তার অনেকগুলিরই সমাধান হয়নি।
যুক্তি পাল্টা যুক্তি যাই দেওয়া হোক না কেন, এই মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির বিরোধিতায় বিরোধীদের চাপের পাশাপাশি তাদের নিজেদের অন্দরের চাপটিও নরেন্দ্র মোদি সরকারের উপর কম ছিল না। কারণ বিরোধিতার সুর চড়াচ্ছিল সঙ্ঘের শাখা স্বদেশি জাগরণ মঞ্চ। তাই দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে মোদি সরকার একদিকে যেমন চাষিদের মধ্যে আবার ক্ষোভ-বিক্ষোভ দানা বাঁধুক চায় না, ঠিক তেমনি এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে তাদের নিজেদের অন্দরের মতভেদ প্রকাশ্যে আসুক তাও তারা চাইছে না। বিরোধীরা এই ইস্যুটিকে প্রচারের হাতিয়ার করে ফায়দা লুটবে তা মোদি সরকার একেবারেই চাইছে না। তাই সতর্ক পদক্ষেপ। মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা ভোটের থেকে শিক্ষা নিয়ে হয়তো এবার এগতে চাইছে কেন্দ্রের সরকার। ওই দুটি নির্বাচনে এটা অন্তত স্পষ্ট হয়েছে যে মোদি ম্যাজিক সেভাবে কাজ করেনি। আবার সামনেই আছে আরও একটি নির্বাচন। এমনিতেই দেশের আর্থিক পরিস্থিতি ভালো নয় এবং সেই কারণে সরকারকে কড়া সমালোচনার মুখে পড়তেও হচ্ছে। তাই কোনওরকম ঝুঁকি নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ নয়। মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি থেকে সরে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক ঢিলে দুই পাখি মারার চেষ্টা করলেন। এই ইস্যুতে বিরোধীদের মুখ বন্ধের পাশাপাশি দলের অন্দরে স্বদেশি জাগরণ মঞ্চের ক্ষোভ প্রশমনের যেমন উদ্যোগ নিলেন, ঠিক তেমনি দেশীয় শিল্প বাঁচাতেই এমন সিদ্ধান্ত—একথা শুনিয়ে আমজনতাকে খুশি করারও চেষ্টার ত্রুটি রাখলেন না।