উচ্চবিদ্যার ক্ষেত্রে বাধার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হতে হবে। উচ্চতর বিদ্যার ক্ষেত্রে শুভ ফল পাবে। কর্মপ্রার্থীদের ... বিশদ
উৎসবের নবমী। আছড়ে পড়ছে ভিড়। বৃহস্পতিবারও দুপুর গড়াতে না গড়াতেই জমজমাট নন্দন চত্বর। চলছে দেদার সিনেমা ভোজ। তার ফাঁকে ভূরি ভোজও। চত্বরের চাতাল নানাবিধ খাবারের গন্ধে ম ম। সিনেমা ও রসনার এহেন যুগলবন্দিতে নিপুণ সঙ্গত করে চলেছে ফিল্ম ক্লাবগুলি। বাংলা অ্যাকাডেমির চৌহদ্দির মধ্যে এবারেও সিনে-সম্ভার সাজিয়ে বসেছে সিনে সেন্ট্রাল, ভবানীপুর ফিল্ম সোসাইটি, ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া, সিনেমাথেক কলকাতার মতো সিনেচর্চার সংগঠনগুলি। ফুডকোর্ট ও বুককোর্টের এই সহাবস্থানকে তারিয়ে উপভোগ করছেন সিনেভুখ সমাজ। এঁদের মধ্যে কেউ ফিল্ম গবেষক, কেউ ছাত্র, কেউ আবার বিশ্বসিনেমার বিদগ্ধ দর্শক। যুগপৎ, মুখও নড়ছে, মনও ভরছে। এর মধ্যে কলকাতার অন্যতম প্রাচীন ফিল্মক্লাব সিনে সেন্ট্রাল আবার তাদের স্টলে নতুন করে সদস্য নেওয়া শুরু করেছে। সেই বার্তা ক্রমশ রটেছে উৎসব প্রাঙ্গণে। উৎসাহী ‘সিনে লাভার’দের দেখা গেল হাত, মুখ ধুয়ে-মুছে মন দিয়ে ফর্ম ভরতে ব্যস্ত। সিনে সেন্ট্রালের স্টলেই পাওয়া যাচ্ছে বিশ্ববন্দিত পরিচালকদের কালজয়ী সিনেমার ডিভিডি। একটা কিনলে, একটা ফ্রি। দ্রুত বিকোচ্ছে সেগুলি। পাশের ভবানীপুর ফিল্ম সোসাইটি বা ফেডারেশনের স্টলেও আগ্রহীদের উঁকিঝুঁকি। উল্টেপাল্টে দেখছেন সত্যজিৎ, মৃণাল, ঋত্বিক, গোদার, ফেলিনিদের উপর লেখা বইগুলি। খোঁজ নিচ্ছেন ম্যাগাজিনের বাৎসরিক গ্রাহক করা হচ্ছে কি না। তারমধ্যে এক মধ্যবয়সিনী হঠাৎ হন্তদন্ত হয়ে ফেডারেশনের স্টলের মধ্যে ঢুকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আচ্ছা এখানে তেল ছাড়া রান্নার বই পাওয়া যাবে?’ প্রশ্ন শুনে একটুও না দমে ক্লাবটির এক সদস্যর জবাব, ‘না ম্যাডাম। তবে ভেজাল ছাড়া মনের খোরাক পেতে পারেন?’
হোম সাপোর্ট
ওঁরা সব এসেছেন ভুটান থেকে। পড়াশোনা করতে। থাকেন শহরের আনাচে কানাচে। কেউ আইনের ছাত্রী, কেউ আবার ট্যুরিজমের, আছেন সমাজবিজ্ঞানের পড়ুয়াও। শ্রীং, ওয়াংচু, পেমারা দল বেঁধে জড়ো হয়েছিলেন ২৫তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে তাঁদের দেশের ছবি দেখতে। বুধবার নন্দন ১- দেখানো হল ভুটানের ‘লু না না ইয়ানা- ইয়াক ইন দ্য ক্লাসরুম’ ছবিটি। শো-এর পর নন্দনের সামনের চাতালে ছবির পরিচালক ও প্রযোজককে ঘিরে ওয়াংচুরা মেতে উঠলেন উৎসবে।
ছবির পরিচালক পাও ছৌনিং দোরজির ভাষায় যা ‘হোম সাপোর্ট’। পেশায় ট্রাভেল ফোটোগ্রাফার দোরজির এটা প্রথম ছবি। তিনি ভাবতে পারেননি তাঁর ছবির স্ক্রিনিংয়ের সময় এত স্বদেশের সমর্থন পাবেন। ডেকে ডেকে সবার নাম, পরিচয়, বাসস্থানের খোঁজ খবর নিচ্ছিলেন পরিচালক। পেমারাও দল বেঁধে পরিচালককে নিয়ে তুললেন গ্রুপ ছবি। হাসি-ঠাট্টা-গল্পে মুখর চত্বরটিকে যেন মনে হচ্ছিল একখণ্ড ভুটান। তার ফাঁকে দোরজি জানালেন তাঁর কলকাতা নিয়ে মুগ্ধতার কথা, সত্যজিতের সিনেমা থেকে ছবি তৈরির অনুপ্রেরণার কথা। এমনকী মাদার টেরিজা, অমর্ত্য সেনের কথাও। কলকাতায় এসেছেন, অবশ্যই যাবেন মহাবোধি সোসাইটিতে।
সেখানে আলেকজাণ্ডার ক্যানিংহামের সংগ্রহ দেখার জন্য উন্মুখ হয়ে আছেন তিনি। সঙ্গে থাকবে ‘আ লট অফ হোম সাপোর্ট’। পেমা, ওয়াংচুদের দেখিয়ে বলেন দোরজি।
জনপ্রিয়তা
বুধসন্ধ্যা। কিছুক্ষণ পরেই একতারা মঞ্চে বসবে ‘বিগ বাজেট ব্লকবাস্টার নাকি স্মল বাজেট সুপারহিট’ এই বিষয়ের উপর আলোচনাসভা। অংশগ্রহণ করবেন চিরঞ্জিত, আবির, সোহম, শুভশ্রী, পাওলিদের মত টলিউডের হুজ হু’রা। মঞ্চের পিছনেই সাজঘর তথা বিশ্রামঘর। সেখানেই একে একে এসে পৌঁছচ্ছেন তারকারা। তাঁদের কাছ থেকে দেখার জন্য উৎসাহী জনতা ভিড় জমিয়েছেন রবীন্দ্রমূর্তির বিপরীতে, সদনমঞ্চের পাশের দেওয়াল ঘেঁষে। সামনে পুলিসের তৈরি ব্যারিকেড। সেখানে হুমড়ি খেয়ে ঠায় তীর্থের কাকের মতো প্রতীক্ষারত তাঁরা। একে একে ঢুকছেন চিরঞ্জিত, সোহম, শ্রাবন্তীরা। আর হাততালি দিয়ে উঠছেন গুণমুগ্ধদের দল। এমন সময় গুঞ্জন উঠল ‘ওই তো আবিরের গাড়ি’। নড়েচড়ে উঠল ভিড়। দুলে উঠল রেলিং। সক্রিয় হয়ে উঠল পুলিস। আবির গাড়ি থেকে মাটিতে পা রাখতেই উল্লাসে ফেটে পড়ল জনতা। কেউ চিৎকার করছেন ‘ব্যোমকেশদা’ বলে, কেউ আবার ‘সোনাদা’। ‘ফেলুদা’ বলেও গলা ফাটালেন অনেকে। মুচকি হেসে ভক্তদের উদ্দেশ্যে হাত নাড়লেন নায়ক। সেই জনপ্রিয়তার রেশ পৌঁছল মঞ্চেও। চিরঞ্জিত আবিরকে দেখিয়ে বললেন, ‘জনপ্রিয়তায় আবিরই এখন সবার চেয়ে এগিয়ে। আমাকে দেখে পাবলিক যত না চেঁচাল, ওকে তো দেখে তার একশোগুণ বেশি।’ চিরঞ্জিতের কথা শেষ হতে না হতেই ফের উল্লাসে ফেটে পড়ল জনতা।
উত্সবে ভূতের উপদ্রব
ভর দুপুরবেলা কলকাতা চলচ্চিত্র উত্সবের প্রাঙ্গণে ভূতের তাণ্ডব নৃত্য। ভূত বাবাজি নেচেই চলেছেন। আর দর্শকরা তখন তাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। প্রেস কর্ণারের সামনে থেকেই তিনি নাচের যাত্রা শুরু করেছেন। তারপর বিভিন্ন জায়গায় এপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত, তাঁর নাচ আর শেষ হচ্ছে না। দর্শকরাও লম্বা টিকিটের লাইনের মাঝখানে বেশ ভালোই উপভোগ করছেন। কিন্তু ব্যপারটা কী? এঁরা হলেন ‘নটি বং’। এটি একটি ইউচিউব চ্যানেল। যাঁরা প্র্যাঙ্ক ভিডিও তৈরি করে থাকেন।