উচ্চবিদ্যার ক্ষেত্রে বাধার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হতে হবে। উচ্চতর বিদ্যার ক্ষেত্রে শুভ ফল পাবে। কর্মপ্রার্থীদের ... বিশদ
বিষয়টা হল এইরকম- গত ১ নভেম্বর কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রক একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে যাতে ১৯৯৪ সালের কেবল টিভি আইনে বদল আনার প্রস্তাব রয়েছে। নতুন আইন কী হতে চলেছে? বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে-আগামী দিনে টেলিভিশন ধারাবাহিকে মহিলাদের চরিত্রে খল প্রবৃত্তির বদলে শুধুমাত্র মানবিকতা, নৈতিকতা থাকতে হবে। তাহলে কি ধারাবাহিকে কোনও খলনায়িকা থাকবে না? তাদের কি শুধুই মহীয়সী রূপে দেখাতে হবে? গুঞ্জন উঠেছে ইতিউতি। এই বিষয়ে কোনও মতামত বা পরামর্শ থাকলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকে একমাসের মধ্যে জানাতে হবে। বিজ্ঞপ্তির কথা জানাজানি হতেই চ্যানেল থেকে প্রযোজক, চিত্রনাট্যকার, সকলেই নড়েচড়ে বসেছে। উল্লেখ্য এরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীও একসময় ধারাবাহিকের কূটকচালি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। মুখ্যমন্ত্রীর কথার অনুরণনই যেন শোনা যাচ্ছে নতুন বিজ্ঞপ্তিতে। তাহলে কি খলনায়িকাদের জমানা শেষ! কী বলছে বাংলা টেলিমহল?
স্বাগতা মুখোপাধ্যায়-টেলিভিশনের পরিচিত ও জনপ্রিয় মুখ। এই মুহূর্তে ‘দুর্গা দুর্গেশ্বরী’ ও ‘রাণু পেল লটারি’ ধারাবাহিকে খলচরিত্রে অভিনয় করছেন। তিনি অবশ্য কেন্দ্রীয় সরকারি বিজ্ঞপ্তিকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। ‘আমার কাছে এটা কোনও ইস্যুই নয়। বলেছে হলে হবে। কত নিয়ম আসছে কত নিয়ম যাচ্ছে। এটা নিয়ে কথা বলার জায়গাই নেই। আমি একজন পেশাদার অভিনেত্রী। যে চরিত্র আসবে তাতে চ্যানেল, প্রোডাকশন হাউস যেভাবে বলবে সেভাবেই অভিনয় করব। তাছাড়া এটা তো অভিনয়, বাস্তব তো নয়। কী একটা বিল পাস হতে যাচ্ছে তার জন্য আমি ভাবতে রাজি নই।
স্নেহা চট্টোপাধ্যায়-প্যান ইণ্ডিয়ায় টেলিভিশনে হাজার চ্যানেলে নানা ধরনের অনুষ্ঠান হয়। মানুষ কোনটা দেখবে আর কোনটা নয় সেটা তাদের নিজস্ব পছন্দ। যদি কোনও অনুষ্ঠান দেখে তাদের মনে হয় এতে পারিবারিক বা সামাজিক অবক্ষয় হচ্ছে তাহলে রিমোট আছে-চ্যানেল চেঞ্জ করে ফেলবেন। সেটা বাইরে থেকে কেউ ঠিক করে দিতে পারে না। আর শুধুমাত্র সিরিয়ালের খলনায়িকাদের জন্য সামাজিক অবক্ষয় হচ্ছে এটা ভাবার কোনও কারণ নেই। কেন্দ্রীয় সরকার যে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে তাকে সাধুবাদ জানিয়েই বলছি-আমাদের সামাজিক অবক্ষয়ের আরও যেসব কারণ রয়েছে সরকার নিশ্চয় সেদিকেও দৃষ্টিপাত করবে। মহিলাদের সম্মান রক্ষার, সুরক্ষার যথাযথা ব্যবস্থা করবেন। শুধুমাত্র কেবল টিভি আইনে বদল ঘটালেই তো আর সব সমস্যার সমাধান হবে না। তাছাড়া চাইলেই সবটা বদলানো সম্ভব নয়। আমরা শুধু অভিনয় করি। চ্যানেল থেকে প্রযোজক, চিত্রনাট্যকার, অভিনেতা, তাদের ব্যবসা সবই এক সুতোয় গাঁথা। সেখানে আঘাত আসতে পারে। তবে সত্যি যদি এইরকম কোনও আইন আসে আমি সেটাকে নতুন ধাপ বলব। এর ফলে হয়তো অনেক নতুন ধরনের কাজের সুযোগ বাড়বে। হয়তো সাহিত্যনির্ভর কাজ বাড়বে। আমি আশায় রইলাম।’
দেবযানী চট্টোপাধ্যায়-বিজ্ঞপ্তিতে যাই লেখা থাক তাতে যে যথেষ্ট ধোঁয়াশা রয়েছে তেমনটাই মনে করছেন ছোটপর্দার আরেক দাপুটে অভিনেত্রী দেবযানী চট্টোপাধ্যায়। ‘পুরো বিজ্ঞপ্তিটা নিয়ে আমার অনেকগুলো প্রশ্ন রয়েছে। প্রথমত, বিজ্ঞপ্তিটা কোন পরিপ্রেক্ষিতে জারি করা হয়েছে সেটা বলা হয়নি। যদি ধরে নিই যে ধারাবাহিকের খলনায়িকাদের দেখে সামাজিক অবক্ষয় হচ্ছে তাহলে তো বলব শুধু সমাজ সচেতনতার জন্যই ধারাবাহিকের বিষয়ভাবনায় বদল দরকার। সেখানেই তো গলদ রয়েছে। খলনায়িকা নাকি নেগেটিভিটি-কোনটা বলতে চাইছে? আমি ঠিক বুঝতে পারছি না। তাহলে কি পুরুষদের খলনায়ক হিসাবে দেখানো যাবে? পুরুষদের সেভাবে দেখালে সামাজিক অবক্ষয় হবে না? পুরো বিষয়টাই ভীষণ অস্বচ্ছ। তাহলে তো রামায়ণ মহাকাব্যও দেখানো যাবে না। সেখানে তো কৈকেয়ী বা মন্থরা রয়েছে। সামাজিক সচেতনতাই যদি লক্ষ্য হয় সেখানে তো কোনও নেগেটিভিটি দেখানো উচিত নয়। এখানে বিষয়টাকে ভীষণভাবে বেঁধে দেওয়া হয়েছে। আসলে ঠিক কী বলতে চাইছে? আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি অধিকাংশ ধারাবাহিকের বিষয়ভাবনায় গলদ রয়েছে। কূটকচালি বা হিংসা দেখানোকে আমি ব্যক্তিগত ভাবে পছন্দ করি না। তাই বিষয়ভাবনায় নতুনত্ব দরকার। তবে এই বিজ্ঞপ্তিটা আমার খুবই অন্তঃসারশূন্য মনে হচ্ছে।
পল্লবী শর্মা- সমাজের প্রতিটি মানুষ যাতে ন্যায়বিচার পায় সেইজন্য লড়াই করে চলেছে ‘কে আপন কে পর’ ধারাবাহিকের বিচারপতি জবা সেনগুপ্ত। সেই জবারূপী পল্লবীই মনে করেন, ‘নেগেটিভিটি কখনও নারী-পুরুষ বিচার করে হয় না। পুরুষ মানেই তিনি খল আর আমরা মেয়ে বলেই আমাদের মধ্যে কোনও নিষ্ঠুরতা থাকবে না, সে শুধুই মাতৃরূপী হবে সেটা ভাবাই ঠিক নয়। বিষয়টাকে মানুষ হিসাবে বিচার করলে ভালো লাগবে। তবে আমি কিন্তু বিজ্ঞপ্তিটার মধ্য কোনও যুক্তি খুঁজে পাচ্ছি না।’
বিষয়টা আদতে ঠিক কী হতে যাচ্ছে তা তো মাসখানেক পরই জানা যাবে। আপাতত আপনাদের সঙ্গে আমরাও অপেক্ষায় রইলাম।