উচ্চবিদ্যার ক্ষেত্রে বাধার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হতে হবে। উচ্চতর বিদ্যার ক্ষেত্রে শুভ ফল পাবে। কর্মপ্রার্থীদের ... বিশদ
যৌবনের যা যা ধর্ম, লক্ষণ ও বৈশিষ্ট্য তার সব ক’টি নিয়ে বাঙালি মননে আরও এক পার্বণের পঞ্চ পল্লব পেতে আনন্দযজ্ঞের ঘট সাজিয়েছে কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব। ২৫ বছরের ভরা যৌবন নিয়ে চলচ্চিত্র উৎসব ধারে-ভারে, বৈচিত্রে-বৈভবে, প্রাণে-পূর্ণতায়, আনন্দে-আবেগে, আহ্বানে-আলিঙ্গনে আজ সত্যিই আন্তর্জাতিক। ২০১১-তে রাজ্যে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর সিনে-উৎসবের উপাচারে যে সর্বজনীনতার সোনার কাঠি সাবেক প্রতিমায় প্রাণ প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল, ২৫ শে পা দিয়ে সেই উৎসব এখন উপমহাদেশের উদাহরণ— মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তাঁর সমমনস্ক সৈন্যবাহিনীর কুচকাওয়াজের দৌলতে। কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসব শুরু হয়েছিল ১৯৯৫ সালের নভেম্বরের দোরগোড়ায়। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর অভিভাবকত্বে, বরেণ্য পরিচালক মৃণাল সেনের হাতে। শুরুর সেই দিনগুলোও কম আলোকিত ছিল না। কিন্তু সেই আলো সীমাবদ্ধ ছিল সিনে-সমাজের একটি নির্দিষ্ট গণ্ডি ও শাখার মধ্যে। এই নিয়ে অনুযোগও ছিল আম নগরবাসীর। আপামর নগর তথা রাজ্যবাসী চলচ্চিত্র উৎসবের সলতেতে অগ্নিস্পর্শ ঘটতে দেখল সেলুলয়েড শাহেনশা অমিতাভ বচ্চনের হাতে, নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামের মতো বিস্তৃত পরিসরে, উন্মুক্ত প্রবেশাধিকারে ১৮তম চলচ্চিত্র উৎসবে, ২০১২ সালে। বাদশা শাহরুখকে সঙ্গে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেই স্বপ্নপূরণের সাক্ষ্য বহন করছে ‘কিফ : আ জার্নি অফ টোয়েন্টি ফাইভ ইয়ারস’। একটি উৎসবের ধাপে ধাপে আন্তর্জাতিক হয়ে ওঠার ঐতিহ্যবাহী ইতিবৃত্ত। তথ্য ও চিত্রে সাজানো মনন ঋদ্ধ এক অনবদ্য প্রদর্শনী। গগনেন্দ্র প্রদর্শশালায়। সন্দেহাতীতভাবে প্রদর্শনীটি ২৫ তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের এক উজ্জ্বল আকর। এক পরিক্রমায় ২৪ বছর। তাও আবার এক কক্ষের চৌহদ্দিতে। সরকার ও উৎসব কমিটির প্রয়াসকে কুর্ণিশ করে উপচে পড়া আগ্রহী ও অনুসন্ধিৎসু জনতা পরিতৃপ্ত মুগ্ধতায় পা ফেলছেন স্মৃতি-বিস্মৃতির ওই বিচিত্র পথে। সেই ফ্রেমগুলিকে চিরকালের মণিকোঠায় তুলে রাখতে সক্রিয় সেলফি-স্যাভিরাও। কারণ, ছবি ও ইতিহাস, কোনওটাই যে মিথ্যে বলে না।
অধ্যাপক ও সম্পাদক
সিনেমার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা সেই স্কুলবেলা থেকে। সেই অভ্যাসকে উস্কে দিয়েছিল শহরের সিনে উৎসব। গোদার, ত্রুফো, বার্তোলুচি, তারকভস্কিদের সঙ্গে চলাফেরা করতে করতেই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলনামূলক সাহিত্যের অধ্যাপকের দায়িত্বে আসীন হওয়া। স্বর্ণপদক জয়ী কৃতী ছাত্র অভীক মজুমদার পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সিলেবাস কমিটির চেয়ারম্যানও। সাহিত্যের অঙ্গনে তাঁর পরিচিতি আবার কবি হিসেবে। এতকিছুর মধ্যে বিশ্ব সিনেমার সাত সমুদ্দুর পরিক্রমা তাঁর থামেনি। এতদিন তিনি গিয়ে দাঁড়িয়েছেন সিনে-সৈকতে। অবলীলায় কুড়িয়ে বেড়িয়েছেন সিনেমার মণিমুক্ত। এবার সেই সোনালি সরণি যেন পরীক্ষা নিতে চায় অভীকের। শুরুর দিন থেকেই সিনে-আগ্রহী, গবেষক, ছাত্রদের কাছে অসম্ভব জনপ্রিয় ‘ফেল্টিভ্যাল বুলেটিন’। ২৫তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের বুলেটিনের বাংলা সংষ্করণ ‘ফেস্টিভাল ডয়েরি’র দায়িত্বে এবার অভীক। এর আগে খবরের কাগজে ‘কিছু কাজকর্ম’ করেছেন তিনি। সেই অভিজ্ঞতা ও আত্মবিশ্বাসে ভর করেই ঋত্বিক, উৎসব, সুদেব, ময়ূরাক্ষী, দেবরাজ, মাল্যবান, অরুন্ধতী, শুভজিৎ, অঙ্কনা, অরিজিৎদের নিয়ে উৎসবের আপডেট দিয়ে চলেছেন এখনও পর্যন্ত নির্ভুল পেশাদরিত্বে। মধ্যরাতে ‘কাগজ তৈরির’ উত্তেজনা এবং পরদিন সঠিক সময়ে সেটিকে পাঠকের হাতে তুলে দিতে পারার তৃপ্তি দুটোই তারিয়ে উপভোগ করছেন সম্পাদক অভীক। তাঁর লক্ষ্য, বুলেটিনে ছবির সঙ্গে তথ্যের ভারসাম্য বজায় রাখা। সেইসঙ্গে উৎসবে নির্বাচিত নানা ধরনের সিনেমা, বিশেষ করে প্রান্তিক সিনেমা, এমনকি তথ্যচিত্রের ‘খবর’ও তুলে ধরা। সেই প্রয়াসকে সফল করতেই টানা দশ দিন বিনিদ্র দিন ও রাত যাপনের অঙ্গীকার নিয়েছে টিম অভীক।
পাগলা ছেলে
থিয়েটার জগতের মানুষ স্বাতীলেখা সেনগুপ্তর ‘পাগলা ছেলেদের সঙ্গেই’ কাজ করতে বেশি ভালো লাগে। ২৫তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের চেয়ারম্যান রাজ চক্রবর্তী স্বাতীলেখাদেবীর ভাষায় তেমনই এক ‘পাগলা ছেলে’। সম্প্রতি রাজের পরিচালনায় ‘ধর্মযুদ্ধ’ ছবিতে অভিনয় করেছেন সত্যজিতের ‘বিমলা’। একতারা মঞ্চে মঙ্গলবার বিকেলে উৎসব কর্তৃপক্ষ তথা রাজ্য সরকার সেইসব কিংবদন্তি মঞ্চ অভিনেতাদের সংবর্ধনা দিল, যাঁরা সমানভাবে সিনেমাতেও সফল। সংবর্ধিত স্বাতীলেখাদেবী ‘ধর্মযুদ্ধ’ ছবির শ্যুটিংয়ের স্মৃতি উস্কে দিয়ে পরিচালক রাজের ‘পাগলামির’ উদাহরণ দেন। বলেন, ‘রাত সাড়ে তিনটে। গ্রামের সেট। গোটা গ্রামে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। তার মধ্যে আমি একটা হাতে মশাল আর অন্য হাতে একটা লাঠি নিয়ে দৌড়ে বেড়াচ্ছি। এই বয়সে ঈশ্বর কোথা থেকে যে আমাকে শক্তি দিলেন জানি না। তবে ওই অভিনয়টুকু করতে পেরেছি এই পাগলা ছেলেটার জন্য। রাজ সত্যিই একটা সিনেমা পাগল ছেলে। ওর কাছে আমি চিরকৃতজ্ঞ রইলাম।’ ভাষা হারিয়ে ফেলা রাজ তখন কিংকর্তব্যবিমূঢ়। মঞ্চে মাথা নিচু করে মাতৃসম স্বাতীলেখাদেবীর সামনে দাঁড়িয়ে।
মায়েরটা আমি, বাবারটা তুমি
মঙ্গলবার বিকেলে একতারা মঞ্চে রাজ্য সরকার তথা চলচ্চিত্র উৎসব কমিটির তরফে মঞ্চ ও সিনেমায় সমান সফল কিংবদন্তি অভিনেতাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান চলছে। শুরুতে বর্ষীয়ান অভিনেত্রী স্বাতীলেখা সেনগুপ্তর পরিচয় দিয়েছেন অন্যতম অনুষ্ঠান সঞ্চালক পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়। অনুষ্ঠান মাঝপথে। এবার অশীতিপর অভিনেতা রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্তকে সংবর্ধনা দেওয়ার পালা। অপর সঞ্চালক সোহিনী সেনগুপ্ত মাইকটা এগিয়ে দিতে যাচ্ছিলেন ফের পরমব্রতর দিকেই। পরমব্রত হাসি মুখে তা প্রত্যাখ্যান করে সোহিনীর উদ্দেশ্যে বললেন, ‘না... মায়েরটা আমি বলেছি, বাবারটা তুমিই বলবে।’ পরমব্রতর বাচনভঙ্গিতে হেসে উঠলেন সকলে। অগত্যা সোহিনী বলতে শুরু করলেন বাবা রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্তকে নিয়ে।