ব্রাসিলিয়া, ১৪ নভেম্বর (পিটিআই): ব্রাজিলের রাজধানী ব্রাসিলিয়াতে শুরু হয়েছে একাদশতম ব্রিকস সম্মেলন। এই সম্মেলনে যোগ দিয়ে দিয়েছেন ভারত, চীন, ব্রাজিল ও দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রপ্রধানরা। দু’দিনের এই সম্মেলনে যোগ দিতে বুধবার সকালেই ব্রাজিল পৌঁছন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ব্রিকস সম্মেলনের ফাঁকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, চীনের প্রেসিডেন্ট জি জিনপিংয়ের বৈঠক করেন মোদি। দ্বিপাক্ষিক আলোচনা হয় ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জায়ের বলসোনারোর সঙ্গেও। বৈঠকে সন্ত্রাস দমন থেকে শুরু করে বাণিজ্য বৃদ্ধি, আর্থিক সহযোগিতা ও সাংস্কৃতিক মেলবন্ধনের উপর জোর দেওয়া হয়। বুধবার বৈঠকের পর মোদিকে রাশিয়া সফরের আমন্ত্রণ জানান পুতিন। ৯ মে রাশিয়ার বিজয় দিবস বা জাতীয় দিবস। ওই দিন হিটলারের নাৎসি বাহিনী সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছে পরাজিত হয়। এরপর থেকে ওই দিনটিকে বিজয় দিবস হিসেবে পালন করে আসছে রাশিয়া। আগামী বছর ওইদিনে মোদিকে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার জন্য আমন্ত্রণ করেন পুতিন। প্রধানমন্ত্রী ওই আমন্ত্রণ সাদরে গ্রহণ করেন। তিনি ট্যুইটারে লিখেছেন, আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অগ্রগতি অব্যাহত। আগামী বছরের মে মাসে আমাকে বিজয় দিবসে উপলক্ষে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট। আমি ওই দিনটার জন্য অপেক্ষায় রয়েছি। তাঁর সঙ্গে ফের একবার সাক্ষাতের সুযোগ তৈরি হওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানাই। এদিকে পুতিনের সঙ্গে বৈঠক নিয়ে মোদি ট্যুইটারে লিখেছেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। ভারত-রুশ সম্পর্ক আরও একবার পুরোদমে পর্যালোচনা হয়েছে। ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য, নিরাপত্তা এবং সাংস্কৃতিক যোগাযোগ বৃদ্ধিতে জোর দিয়েছে রাশিয়া। এদিকে ২০২৫ সালের মধ্যে বাণিজ্য ২ হাজার ৫০০ কোটি বিলিয়ন ডলারে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে দু’দেশ। গত সেপ্টেম্বর মাসে রাশিয়ার ভ্লাদিভস্তকে মোদির সঙ্গে এনিয়ে পুতিনের বিস্তারিত আলোচনাও হয়। বুধবার বৈঠকে দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্য বৃদ্ধি নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ মোদি-পুতিন। পাশাপাশি দুই রাষ্ট্রনেতা জ্বালানি তেল ও গ্যাসের আমদানির উপর স্থিতিবস্থা বজায় রাখা নিয়েও আলোচনা করেন। এছাড়াও ভারতের পরিকাঠামো ক্ষেত্রে বিনিয়োগ এবং রাশিয়ার সহযোগিতায় নাগপুর-সেকেন্দ্রাবাদ রুটে দ্রুতগতির ট্রেন চালু নিয়েও আলোচনা হয়েছে। প্রতিরক্ষা এবং অসামরিক পরমাণু বিদ্যুৎ তৈরির প্রসঙ্গ মোদি-পুতিনের বৈঠকে উঠে এসেছে। বিদেশ সংক্রান্ত বিষয়েও দু’দেশ মতামত আদান-প্রদান করবে বলে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এদিকে এক মাসের মধ্যে ফের মুখোমুখি হলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং চীনের প্রেসিডেন্ট জি জিনপিং। ব্রিকস সম্মেলনের ফাঁকে জিনপিংয়ের বৈঠকের পর মোদি দাবি করেন, ‘দু’দেশের সম্পর্ক নয়া উৎসাহে, নতুন গতিতে বইছে।’ গত অক্টোবর মাসে চেন্নাইয়ে দুই রাষ্ট্রনেতার বৈঠক হয়েছিল। তারপর ব্রাজিলে ব্রিকস সম্মেলনে যোগ দিতে এসে ফের বৈঠরে বসলেন মোদি-জিনপিং। মোদি জিনপিংকে বলেন, ‘আপনার সঙ্গে ফের দেখা হওয়ায় আমি খুশি। গত পাঁচ বছরে আমাদের মধ্যে বিশ্বাস ও বন্ধুত্বের গভীরতা অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে।’ প্রধানমন্ত্রীর অফিসের তরফে ট্যুইটারে লেখা হয়েছে, সম্মেলনের ফাঁকে দুই রাষ্ট্রনেতার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয়েছে। বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়গুলির জোর দেওয়া হয়েছে। এদিন মোদির সঙ্গে বৈঠক করেন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসারাও। এবারের ব্রিকস সম্মেলনে প্রযুক্তিগত লেনদেন, প্রযুক্তি, বাণিজ্য, আর্থিক বিনিয়োগ, সাইবার নিরাপত্তা, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, পরিবেশ দূষণ ও বিশ্বের উষ্ণায়ন রোধের বিষয়গুলি নিয়ে ব্রিকস সম্মেলনে আলোচনা হয়েছে।