উচ্চবিদ্যার ক্ষেত্রে বাধার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হতে হবে। উচ্চতর বিদ্যার ক্ষেত্রে শুভ ফল পাবে। কর্মপ্রার্থীদের ... বিশদ
কৃষিদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, পূর্ব বর্ধমান জেলায় মোট ২৩টি ব্লক রয়েছে। খরিফ মরশুমে এই জেলায় এবার ৩ লক্ষ ৮০ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষ করার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছিল। শুরুর দিকে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত না হওয়ায় চাষিরা দুশ্চিন্তায় পড়লেও আগস্ট মাসের দ্বিতীয় ও তৃতীয় সপ্তাহে বৃষ্টিপাত হওয়ায় এই জেলায় ৩ লক্ষ ৮০ হাজার হেক্টরের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছিল। বুলবুলের জেরে ভারী থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হবে বলে আগেই জানিয়ে দিয়েছিল রাজ্যের আবহাওয়া দপ্তর। উপকূলবর্তী এলাকার মতো অতিবৃষ্টি না হলেও দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা ছিল। সেই পূর্বাভাস মোতাবেক বুলবুলের জের গত ৯ এবং ১০ নভেম্বর দু’দিন পূর্ব বর্ধমান জেলায় বৃষ্টি হয়েছে। তার জেরেই এই ক্ষয়ক্ষতি। কৃষিদপ্তরের প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী, জেলার ২৩টি ব্লকের ১৪৬টি গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীনে ১১৪৮টি মৌজার জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বর্ধমান রাজ্যের শস্য ভাণ্ডার জেলা নামেই পরিচিত। প্রতিটি ব্লকেই এখানে ধানচাষ হয়। সেই সঙ্গে সব্জি সহ অন্যান্য চাষও করা হয়। কৃষি দপ্তরের ওই প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী, জেলায় মোট ৫০ হাজার ৪১৫ হেক্টর জমির আমন ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই জেলার অধীনে কালনা-১, কালনা-২, পূর্বস্থলী-১, পূর্বস্থলী-২, কাটোয়া-১, কাটোয়া-২ এবং মন্তেশ্বরে প্রচুর পরিমাণে পেঁয়াজ চাষ হয়। সেই পেঁয়াজ চাষেও ক্ষতি হয়েছে। এবার ওই ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ২৯৮ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষ হয়েছিল। তার মধ্যে বুলবুলের জেরে ১০০ হেক্টর জমির পেঁয়াজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলার সব্জি চাষেও বুলবুলের প্রভাব পড়েছে। জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় এবার ৩২০৩ হেক্টর জমিতে সব্জি চাষ হয়েছিল। তার মধ্যে ১৯৩২ হেক্টর জমির সব্জির ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এছাড়াও যাঁরা আগাম আলু লাগিয়েছিলেন, সেই আলুর জমিও ক্ষতির মুখে পড়েছে। ইতিমধ্যে জেলায় ১০৫০ হেক্টর জমিতে আলু লাগানো হয়ে গিয়েছিল। তার মধ্যে বুলবুলের জেরে ৭৮০ হেক্টর জমির আলু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের কৃষিদপ্তরের কর্মাধ্যক্ষ মহম্মদ ইসমাইল বলেন, আমরা বিভিন্ন ব্লকে ঘুরেছি। আমন ধানের খুবই ক্ষতি হয়েছে। বহু এলাকার ধান জমিতে পড়ে গিয়েছে। তার উপর জল দাঁড়িয়ে গিয়েছে। সব্জিও ক্ষতি হয়েছে। বহু গাছ মাচা থেকে পড়ে গিয়ে নষ্ট হয়েছে। জমিতে জল জমে যাওয়ায় আলু পেঁয়াজেরও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এ নিয়ে বুধবার কৃষিদপ্তরের একটি বৈঠকও হয়েছে। অন্যদিকে, পূর্ব বর্ধমান জেলার কৃষিদপ্তরের উপ অধিকর্তা জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, বুলবুলের বৃষ্টির পর আমিও নিজে গত রবিবার এবং সোমবার এলাকায় ঘুরে দেখেছি। বেশিরভাগ জায়গায় রাস্তার ধারের জমির ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জল জমেছে এবং জমিতে পড়ে গিয়েছে। আমরা সমস্ত ব্লক থেকে প্রাথমিকস্তরের একটি সমীক্ষা করে রিপোর্ট তৈরি করেছি। সেখানে আমন ধান, সব্জি, আলু ও পেঁয়াজের ক্ষতির পরিমাণ উল্লেখ করা হয়েছে। আমরা রাজ্যকে সেই রিপোর্ট দিয়েছি। এবার আমনে চাষ দেরিতে শুরু হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই রবি চাষ দেরিতেই হতো। কিন্তু, বুলবুলের জন্য সেই রবি চাষ আরও পিছিয়ে যাবে। তিনি বলেন, এবার আমন ধান লাগানোর সময় বৃষ্টি পর্যাপ্ত হয়নি। তাই সেই সময় আমরা জেলাজুড়ে সমস্ত চাষিদের বলেছিলাম, শস্যবিমা করানোর জন্য। জেলার বহু চাষি শস্যবিমায় নাম নথিভুক্তও করেছেন। তাঁরা প্রত্যেকে যাতে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির কাছে আবেদন করেন, সে ব্যাপারে কৃষিদপ্তরের পক্ষ থেকে জেলার কৃষকদের পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।