উচ্চবিদ্যার ক্ষেত্রে বাধার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হতে হবে। উচ্চতর বিদ্যার ক্ষেত্রে শুভ ফল পাবে। কর্মপ্রার্থীদের ... বিশদ
মাস তিনেকের ‘দিদিকে বলো’ অভিযানে সাড়া জাগানোর পর এবার নির্বাচনী ইস্তাহারেও চমক দিল টিম প্রশান্ত কিশোর (পিকে)। গত লোকসভা ভোটের ফলাফল পর্যলোচনা করতে বুথস্তরে সমীক্ষা চালিয়েছিল পিকের সংস্থা আইপ্যাক। দলীয় পরিসরের বাইরে সম্পূর্ণ পেশাদারি কায়দায় নির্বাচকমণ্ডলীর মন বোঝার লক্ষ্যে নানা ক্ষেত্রে সমীক্ষা করা হয়। বিধানসভা ভিত্তিক সেই পর্যালোচনায় সমাজের বিভিন্ন স্তরের সমস্যা, চাহিদা থেকে ক্ষোভ-বিক্ষোভের ছবি স্পষ্ট করাই ছিল সেই কাজের প্রধান উদ্দেশ্য। যার প্রাথমিক পর্যলোচনায় উঠে এসেছিল রাজ্যের শাসক দলের জনবিচ্ছিন্নতার উপসর্গ। সেই পরিস্থিতির মেকাবিলায় জনসংযোগ বাড়ানোর নতুন ধাঁচের পরিকল্পনা নিয়েছিল পিকে। তৈরি হয়েছিল ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচি। তৃণমূল স্তর পর্যন্ত ‘দিদিকে বলো’ ইতিমধ্যেই সংগঠনে সাড়া ফেলে দিয়েছে। ঘটনাচক্রে এরই মধ্যে রাজ্যে তিনটি উপনির্বাচন তাঁর কৌশলের ফলিত প্রয়োগের পরীক্ষার মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে প্রশান্ত কিশোরকে। কেননা, তাঁকে নিয়োগের পর এটাই প্রথম ভোট। আগামী ২৫ নভেম্বর খড়্গপুর সদর, কালিয়াগঞ্জ ও করিমপুরে ভোটগ্রহণ। নদীয়ার করিমপুর ছাড়া বাকি দু’টি আসনেই বিগত লোকসভা ভোটের নিরিখে পিছিয়ে রয়েছে তৃণমূল। পাশাপাশি এই তিন জেলার তিন কেন্দ্রের জনবিন্যাসেও বিস্তর ফারাক রয়েছে। কালিয়াগঞ্জ বরাবর কংগ্রেসের আসন হলেও গত লোকসভা ভোটে এই কেন্দ্রে কংগ্রেসের ভোটের একটা বড় অংশই বিজেপির দিকে চলে গিয়েছে। এছাড়া বাম ভোটারদেরও প্রবল তৃণমূল বিরোধিতার ফসল উঠেছে বিজেপির ঘরে। তফসিলি জাতি উপজাতির প্রভাব রয়েছে, যে ভোটও রাজ্যের অন্যান্য জায়গার মতো চলে গিয়েছে বিজেপির দিকে। খড়্গপুর সদর অবাংলাভাষী মানুষের মধ্যে গেরুয়া শিবিরের প্রতি দুর্বলতার সুবাদে এই বিধানসভা অংশে এগিয়েছিল বিজেপি। করিমপুরে সংখ্যালঘু ভোটই ভাগ্য নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল। স্বভাবতই বিগত লোকসভা ভোটে এই বিধানসভা ছিল তৃণমূলেরই দখলে। সূত্রের মতে, প্রতি কেন্দ্রেই আইপ্যাক ‘মাইক্রো লেভেল সার্ভে’ করেছিল। ফলে, বুথস্তরে শাসক দলের অবস্থা, বিরোধীদের সাংগঠনিক শক্তি বা সাধারণ মানুষের চাহিদা ইত্যাদি নিয়ে রিপোর্ট তৈরিই ছিল তৃণমূলের হাতে। তৃণমূলের এক নেতার দাবি, রাজনৈতিক কারণের পাশাপাশি পেশাদার সংস্থার পরামর্শ মেনে চলার যে পরীক্ষা শুরু হয়েছে, তার কার্যকারিতা যাচাই করার সুযোগ এনে দিয়েছে এই তিন কেন্দ্রের উপনির্বাচন। সেই অনুসারে বিধানসভার অঞ্চলগত আর্থিক, সাংস্কৃতিক ও জনবিন্যাসগত ভিন্নতার কথা মাথায় রেখে তিনটি আলাদা ইস্তাহার নিয়ে ইস্তাহারের প্রয়োজন অনুভব করে টিম পিকে। তাই শুধু রাজনৈতিক ভাষণ নয়, এলাকার জনপ্রিয় ইস্যুকেই অস্ত্র করে সহজবোধ্য ভাষায় নির্বাচকমণ্ডলীর কাছে যাওয়াটাই এই অভিনব উদ্যোগের লক্ষ্য। এই সুযোগে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে রাজ্য প্রশাসন কী ধরনের উন্নয়ন করেছে বা করতে চায়, তারও একটা ধারণা তুলে ধরা বিধানসভা ভিত্তিক ইস্তাহার প্রকাশের অন্যতম উদ্দেশ্য বলে জানিয়েছেন এক রাজ্য নেতা। সাধারণত, বিধানসভা বা লোকসভা ভোটে ইস্তাহার প্রকাশ করাটাই দস্তুর রাজনৈতিক দলগুলির কাছে। নানা ভাষায় অনূদিত হলেও দলগতভাবে অভিন্ন ইস্তাহার নিয়ে নির্বাচকমণ্ডলীর কাছে হাজির হওয়ার চল ছিল রাজনৈতিক দলগুলির। উপনির্বাচনে এলাকা ভিত্তিক দলের পক্ষ থেকে আবেদনপত্র থাকলেও পুরোদস্তুর ইস্তাহার নিঃসন্দেহে অভিনব। তৃণমূলের দাবি, অভিনব তো বটেই, এটা অনেক বেশি কার্যকর হবে বলেই মনে করা হচ্ছে। এই উদ্যোগ সফল হলে আগামী দিনে সাধারণ নির্বাচনেও তৃণমূলের ইস্তাহার প্রকাশেও বিকেন্দ্রীকরণ ঘটতে পারে বলেই রাজনৈতিক মহলের ধারণা।