উচ্চবিদ্যার ক্ষেত্রে বাধার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হতে হবে। উচ্চতর বিদ্যার ক্ষেত্রে শুভ ফল পাবে। কর্মপ্রার্থীদের ... বিশদ
রবীন্দ্রসদনের টিকিট কাউন্টার থেকে লাইনটা সিঁড়ে বেয়ে নেমে এসে আচমকা বাঁক নিয়েছে বাংলা অ্যাকাডেমির দিকে। সেই বাঁকের মুখেই মনোমালিন্য। লাইন ও বেলাইন নিয়ে তরজা। কে আগে থেকে ছিলেন, আর কে পরে এসে সেঁধিয়ে গিয়েছেন। বেলাইন নিয়ে তুমুল তরজা যখন বেলাগাম, তখন আর্বিভাব এক ঊর্দ্ধিধারী পুলিশ অফিসারের। সঙ্গে জনা দুই সহকর্মী। বাঁজখাই গলায় তিনি দিলেন এক প্রচণ্ড ধমক : চুপ! চুপ করে দাঁড়ান সব। আমরা কী করতে আছি? আমরা তো আছিই, সেইসঙ্গে আছে শখানেক সি সি ক্যামেরাও। অতএব, কেউ কোনও চালাকি করবেন না। চারদিকে কড়া নজর। বেয়াদপি করেছেন কি ঘাড় ধরে চত্বরের বাইরে বার করে দেব।’ এক ধমকেই চুপ। অদূরে মোহর কুঞ্জের সামনের গাড়ির যাতায়াতের শব্দ ছাড়া তখন আর কোনও শব্দ নেই কাউন্টারের সামনে। প্রসঙ্গত এবার প্রায় দেড়শো সি সি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে গোটা উৎসব চত্বর জুড়ে।
আমি কে?
পাঁচটায় শুরু হবার কথা সাংবাদিক সম্মেলনের। কিন্তু পৌনে ছ’টাতেও দেখা নেই ‘উড়োজাহাজ’-এর। সোমবার বর্ষীয়াণ পরিচালক বুদ্ধদেব দাশগুপ্তর নতুন ছবি ‘উড়োজাহাজ’ দেখানো হল উৎসবে। সন্ধ্যার শো-তে। তার আগে পরিচালক তাঁর অভিনেতা, সহকারীদের নিয়ে কথা বললেন সাংবাদিকদের সঙ্গে। খবর পাওয়া গেল মা উড়ালপুলে আচমকা যান নিয়ন্ত্রণের জন্য এহেন বিলম্বের বিড়ম্বনা। সেটি কাটিয়ে বুদ্ধবাবুকে নিয়ে গাড়ি এসে দাঁড়াল উৎসব প্রাঙ্গণে। অসুস্থ। তাতে কী! মাথায় টুপি। মুখে সেই অমলিন হাসি ছড়িয়ে গাড়ি থেকে নামলেন বিশ্ববন্দিত পরিচালক। ধীরে শুভানুধ্যায়ীদের সাহায্যে প্রেস কর্ণারে প্রবেশ করেই বসে পড়লেন সেখানকার দায়িত্বে থাকা সরকারি অফিসারদের চেয়ারে। ‘একটু জল খাবেন?’ জলের বোতল এগিয়ে দিয়ে প্রশ্ম করলেন এক উৎসব কর্মী। ‘আমি একদম ফিট। আমাকে নিয়ে ভাবতে হবে না। চন্দন না আসা পর্যন্ত আমি ককপিটে বসব না।’ বলে হাসলেন বুদ্ধবাবু। চন্দন হলেন চন্দন রায় সান্যাল। ‘উড়োজাহাজ’-এর নায়ক। তিনিও জ্যামজটে আটকে পড়েছিলেন রাস্তায়। ‘ওই তো আসল। আমি কে? আগে অভিনেতা। টেকনিশিয়ানরা। তারপর আমি।’ মৃদু স্বরে কথাগুলি বলে বুদ্ধবাবু হেলান দিলেন চেয়ারে। তার কিছুক্ষণ পর সোহিনীর সঙ্গে এসে পৌঁছলেন চন্দন। তাঁদের দেখে এবার তাঁর জন্য নির্ধারিত আসনের দিকে এগিয়ে গেলেন বিনয়ী পরিচালক।
মাস্টারমশাই
একতারা মঞ্চে সিনে আড্ডার শুরুতেই সঞ্চালক পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় বক্তব্য রাখার জন্য মাইক এগিয়ে দিলেন পরিচালক গৌতম ঘোষের দিকে। বিষয় ’৭০ এম এম থেকে স্ক্রিন’। সিনেমা শিল্পে পণ্ডিত, সুবক্তা গৌতমবাবু বলতে শুরু করলেন : যখন সিনেমা শিল্প হয়ে উঠল, সাউণ্ড আসার পর নির্বাক ছবি বাদ। এটা মাথায় রেখেই আমরা আলোচনা শুরু করব। ...সিনেমা বড় পর্দার জন্যই করা হয়েছিল। লুমিয়ের ব্রাদার্স বড় পর্দাতেই প্রথম সিনেমা দেখিয়ে ছিলেন। তখন সেটার ছিল অ্যাকাডেমি রেশিও স্কোয়্যার ফ্রেম, সায়লেন্ট ছবি থেকে শুরু করে পরবর্তীকালে দীর্ঘদিন ওয়ান ইজ টু থ্রি রেশিওতে ছবি করেছেন সারা পৃথিবীর পরিচালকরা...’। গৌতমবাবুর বক্তব্যের মধ্যেই একতারা মঞ্চের পেছনের ভিড় ঠেলে সামনের দিকে হুড়মুড়িয়ে এগিয়ে এসে ফিল্ম স্টাডির একদল ছাত্রছাত্রী জিজ্ঞাসা করলেন, ‘এখানে কি কোনও সিনেমার ক্লাস হচ্ছে?’ সেই শুনে চেয়ারে বসে থাকা এক বিরক্ত শ্রোতা ঝাঁঝিয়ে উঠলেন, ‘আপনাদের এই জায়গাটাকে কি শ্রেণিকক্ষ বলে মনে হচ্ছে? থামুন শুনতে দিন।’ থতমত খেয়ে এক তরুণী বললেন, ‘আসলে স্যার স্পিচ দিচ্ছেন তো...’। ‘তাতে কি হয়েছে শুনি? গৌতমবাবু সর্বত্রই একটু মাস্টারমশাইয়ের গলায় কথা বলেন, তাই বলে এই এতবড় ভিড়ে ঠাসা জায়গাটাকে আপনাদের ক্লাসরুম বলে মনে হল? যত্তোসব!’ বলে সঙ্গের ঝোলাটিকে বগলে নিয়ে সেই ভদ্রলোক অন্যত্র ফাঁকা চেয়ারের সন্ধানে পা বাড়ালেন।
চিত্রাঙ্গদা শতরূপা
পদবি কি শুধু পিতৃপুরুষের পরিচয় বহন করবে? প্রাসঙ্গিকভাবে বিষয়টি আজকের সিঙ্গল মাদারের যুগে ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। শতরূপা সান্যাল ও উৎপলেন্দু চক্রবর্তীর কন্যা চিত্রাঙ্গদা এখন তাঁর নামের সঙ্গে মাতৃপরিচয় যুক্ত করেছেন। তবে পদবি নয়, নাম। শতরূপার কণিষ্ঠ কন্যা এখন চিত্রাঙ্গদা শতরূপা নামে পরিচিত। ‘এতে যেমন কোনও পদবির প্রতি পক্ষপাতিত্ব রইল না, তেমনই যিনি আমাকে জন্ম থেকে আজও যত্নে, শাসনে, আদরে, প্রশ্রয়ে লালন করে চলেছেন, তাঁর জীবনভর সংগ্রামকে স্বীকৃতি দেওয়াও হল,’ চলচ্চিত্র উৎসবে নিজের অভিনীত ছবির সাংবাদিক সম্মেলনের পর, নন্দনের মুক্ত চত্বরে আড্ডার মেজাজে খোলা মনে কথাগুলি বললেন চিত্রাঙ্গদা। যোগ করলেন, ‘আমি আর দিদি (ঋতাভরী) ছোটবেলা থেকেই দেখেছি মাকে সবাই জিজ্ঞাসা করত, মেয়েরা সান্যাল পদবি ব্যবহার করে না কেন? মা উত্তরে বলতেন, ‘আমি আমার বাবার পদবি ব্যবহার করি, মেয়েরা ওদের বাবার পদবি ব্যবহার করে।’ দেখুন, পদবি শুদ্ধ আমি একটা নামই তো বহন করে চলেছি। তার বেশি কিছু তো নয়। সেখানে যিনি জীবনভর আমার জন্য এতকিছু করলেন তাঁকে আমার নামের সঙ্গে যুক্ত করতে অসুবিধে কোথায়, প্রশ্ন চিত্রাঙ্গদার। এই নিয়ে একদিন এক বন্ধুর সঙ্গে আলোচনা করতে করতেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন নিজের নামের সঙ্গে মায়ের নাম যোগ করবেন। যেমন ভাবা তেমন কাজ। আইনের সাহায্য নিয়ে চিত্রাঙ্গদা দ্রুত বদলেও ফেললেন আশৈশবের নাম তথা পদবি। সমাজের নানা স্তর থেকে এল স্বীকৃতি, প্রশংসা ও সমর্থন। কিন্তু গোল বেঁধেছে একটি ক্ষেত্রে। কোথায়? খিলখিল করে হেসে কপাল চাপড়ে চিত্রাঙ্গদার জবাব, ‘পাসপোর্টে নাম বদল করতে গিয়ে মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে আমার।’