উচ্চবিদ্যার ক্ষেত্রে বাধার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হতে হবে। উচ্চতর বিদ্যার ক্ষেত্রে শুভ ফল পাবে। কর্মপ্রার্থীদের ... বিশদ
পেগাসাস স্পাইওয়্যার নিয়ে যখন তোলপাড় গোটা দেশ ও দুনিয়া, ঠিক সেই প্রেক্ষাপটে মমতার এহেন অভিযোগ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে ওয়াকিবহালমহল। এই প্রথমবার নয়, এর আগেও ফোনে আড়ি পাতা নিয়ে সরব হতে দেখা গিয়েছিল মমতাকে। গত লোকসভা নির্বাচনের প্রচারেও একবার এ নিয়ে অভিযোগ করেছিলেন মমতা। কেন পেগাসাস ভয়ঙ্কর? কোনও ব্যক্তির উপর নজরদারি করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ফোনের মাধ্যমে পেগাসাস স্পাইওয়্যার স্পাইং করে। পেগাসাস একটি লিঙ্ক পাঠায়, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি যদি সেই লিঙ্কে ক্লিক করেন, তাহলে তাঁর ফোনে নজরদারি চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় ম্যালওয়্যার বা কোড ইনস্টল হয়ে যায়। একবার পেগাসাস ইনস্টল হয়ে গেলে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ফোনের পুরো নিয়ন্ত্রণ পেয়ে যায় চররা। একবার ফোনের নাগাল পেয়ে গেলে এবং পেগাসাস ইনস্টল করা হয়ে গেলে, নিশানায় থাকা ব্যক্তির পাসওয়ার্ড, কনট্যাক্ট লিস্ট, ক্যালেন্ডার ইভেন্টস, টেক্সট মেসেজ, লাইভ ভয়েস কল সহ সমস্ত গোপন তথ্যের নাগাল পেয়ে যায় পেগাসাস অপারেটর।
এখানেই শেষ নয়, অপারেটর ফোনের ক্যামেরা ও মাইক্রোফোন চালু করে দিয়ে ফোনের কাছে সবকিছুর রেকর্ডিংও করতে পারে। পেগাসাস স্পাইওয়্যারের কাজকর্ম প্রথম প্রকাশ্যে আসে ২০১৬ সালে। আহমেদ মনসুর নামে সংযুক্ত আরব আমিরশাহির এক মানবাধিকার কর্মী, যাঁর আই ফোন ৬-এ একটি এসএমএস লিঙ্ক পাঠানো হয়। পেগাসাস সেই সময়ে অ্যাপলের আইওএস-এর নিয়ন্ত্রণ নিতে চাইছিল। হোয়াটসঅ্যাপের দাবি, এ বছরের ২৯ এপ্রিল থেকে ১০ মে পর্যন্ত ১২ দিনে সেলফোনে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করেন এমন অন্তত ১ হাজার ৪০০ জন ওই নজরদারির শিকার হয়েছেন। তার মধ্যে রয়েছেন বেশ কয়েক জন সাংবাদিক, দলিত আন্দোলনের নেতা, মানবাধিকার কর্মী ও রাজনৈতিক নেতা। অন্য দিকে ইজরায়েলি সংস্থা এনএসও-ও জানিয়েছে, তারা স্পাইওয়্যারটি বিভিন্ন সরকারি সংস্থাকে বিক্রি করেছিল। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে, কাদের হয়ে কাজ করছিল ইজরায়েলি সংস্থাটি?
এ বছরের মে মাসে ফিনান্সিয়াল টাইমসের প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, হোয়াটসঅ্যাপে একটি মিসড কল দিয়েই পেগাসাস ইনস্টল করা সম্ভব। হোয়াটসঅ্যাপ পরে জানায়, পেগাসাস তাদের ভিডিও ও ভয়েস কলের ফাংশানকে কাজে লাগিয়েছে। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি যদি সেই কলের সাড়া না-ও দেন, তাতেও কিছু আসে যায় না। ম্যালওয়্যার ইনস্টল হয়ে যাবেই। ফেসবুক সংস্থাধীন হোয়াটসঅ্যাপ পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় মেসেজিং অ্যাপ যা সারা পৃথিবীর ১৫০ কোটিরও বেশি মানুষ ব্যবহার করে থাকেন। এর একচতুর্থাংশ অর্থাৎ ৪০ কোটি ব্যবহারকারী রয়েছেন ভারতে। ভারত হোয়াটসঅ্যাপের সবচেয়ে বড় বাজার। নিজেদের বাজার ধরে রাখতে হোয়াটসঅ্যাপ তাদের মামলায় প্রযুক্তিগত নমুনা হিসেবে পেগাসাসের একটি ব্রশিওর পেশ করেছে। তাতে বলা হয়েছে, এই ম্যালওয়্যার ইমেল, এসএমএস, লোকেশন ট্র্যাকিং, নেটওয়ার্ক ডিটেইলস, ডিভাইসের সেটিংস এবং ব্রাউজিং হিসট্রির তথ্যের নাগাল পেতে পারে। এ সব কিছুই ঘটে যায় ইউজারের অগোচরে। সেপ্টেম্বর মাসে পেগাসাস আক্রান্তদের বিষয়ে কেন্দ্রকে ফের অবহিত করে হোয়াটসঅ্যাপ। অর্থাৎ প্রথমবার এই সংক্রান্ত তথ্য দেওয়ার ৪ মাস পরে ফের যোগাযোগ করা হয় ফেসবুকের মালিকানাধীন সংস্থাটির পক্ষ থেকে। এই সময় নয়াদিল্লিকে ১২১ জন ব্যক্তির বিষয়ে জানায় সোশ্যাল মিডিয়ার প্ল্যাটফর্মটি। এইসব ব্যক্তি এনএসও সংস্থার ‘স্পাইওয়্যার’ (পেগাসাস) দ্বারা যে আক্রান্ত, তা স্পষ্ট করে দেওয়া হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক সূত্রে অবশ্য বিবৃতি দিয়ে বলা হয়, ‘প্রতিটি ভারতীয় নাগরিকের মৌলিক অধিকার রক্ষা করতে ভারত সরকার বদ্ধপরিকর। তাঁর মধ্যে গোপনীয়তার অধিকারও রয়েছে। আমরা সেই অধিকার রক্ষার্থে সমস্ত আইন ও নিয়মাবলী মেনে চলতে বদ্ধপরিকর। প্রতিটি নির্দোষ ভারতীয়ের তথ্য যাতে সুরক্ষিত থাকে, তা সুনিশ্চিত করতে যথাসাধ্য করা হয়েছে।’ কিন্তু তারপরেও কেন নাগরিক সমাজের একাংশের ব্যক্তিগত তথ্যে নজরদারি হল? কারা করল এই কাজ? উত্তর মেলেনি এখনও।