শিক্ষার জন্য দূরে কোথাও যেতে পারেন। প্রেম-প্রণয়ে নতুন যোগাযোগ হবে। বিবাহের কথাবার্তাও পাকা হতে পারে। ... বিশদ
দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন এলাকায় বেশ কিছুদিন ধরে শিশুচোর সন্দেহে কয়েকটি গণপিটুনির ঘটনা ঘটে। সেটাই বনে আগুন লাগার মতো ছড়িয়ে যেতে পড়ে দিগ্বিদিকে। দুপুরে অথবা রাতে, সকালে কিংবা সন্ধ্যায় এলাকায় অপরিচিত, সন্দেহভাজন, ভবঘুরে বা ভিক্ষুক দেখলেই রে রে করে তেড়ে আসছে জনতা। নির্বিচারে শুরু হচ্ছে সমবেত মার। পুলিসের চোখের আড়ালে একেবারে প্রত্যন্ত গ্রামে অসুখের মতো ছড়িয়ে পড়ছে অশরীরী গুজব। কিন্তু, প্রশ্ন হচ্ছে—এর কতটুকু সত্য? এককথায় উত্তর হল—একবর্ণও সত্য নয়, সর্বৈব মিথ্যা অপপ্রচার। দক্ষিণে তো একজন ওড়িশার বস্ত্র ব্যবসায়ীও গণপিটুনি শিকার হয়েছেন। কোথাও দেখা যাচ্ছে ময়লা কুড়ুনি, কোথাও ভবঘুরে বা আধপাগলা ব্যক্তি।
এভাবে শিশুচুরির মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে পড়েছে হাওড়ার একাংশে, দক্ষিণ শহরতলির একাংশে এমনকী উত্তর শহরতলির কিছু এলাকাতেও। কে শিশুচোর, কে ছেলেধরা—কোনও কিছু বোঝার আগেই পিটিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু, প্রশ্ন হচ্ছে—এর পিছনে কোনও সুগভীর চক্রান্ত নেই তো? সাধারণ মানুষের মধ্যে এই ক্ষোভ, এই উত্তেজনা ইচ্ছাকৃতভাবে কেউ বা কারা ছড়িয়ে দিচ্ছে না তো? কে তারা, কী তাদের অসৎ উদ্দেশ্য? এখন ভেবে দেখার এটাই। গ্রাম-শহরাঞ্চলে গুজবের এই বিষ ছড়ানোর পিছনে অন্য কোনও কু-অভিরুচি আছে কি না, বদ মতলব চরিতার্থ করতেই এটা অপপ্রচার করা হচ্ছে কি না, তা তদন্ত করে দেখতে হবে পুলিসকে।
বিশেষত গত কয়েকদিন ধরে আমরা একটা উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যে চলেছি। পাক মদতপুষ্ট জঙ্গি গোষ্ঠীর কাশ্মীরে আত্মঘাতী বিস্ফোরণের পর গোটা দেশে স্বাভাবিকভাবেই একটা জাতীয়তাবাদী ও দেশাত্মবোধক চেতনা জন্ম নিয়েছে। সেখানে সাধারণ মানুষ ভিতরে ভিতরে যথেষ্ট উত্তেজিত হয়ে আছেন। এই অবস্থায় এই ধরনের গুজব ছড়ানো মোটেই কাজের কথা নয়। কারণ এতে হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। সেক্ষেত্রে পুলিসের কাজ এখনই, এই মুহূর্তে এই ধরনের ঘটনাকে শক্ত হাতে প্রতিহত করা। স্থানীয় সূত্র মারফত প্রতিটি থানার উচিত এ ধরনের গুজব ও হোয়াটস অ্যাপে বিভিন্ন ধরনের আপত্তিজনক ছবি কারা ছড়িয়ে দিচ্ছে। তাদের অবিলম্বে চিহ্নিত করে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে কড়া শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়ে অন্যদের জন্য একটা দৃষ্টান্ত গড়ে তোলা উচিত।
একশ্রেণীর মানুষ যে স্বার্থসিদ্ধির উদ্দেশ্যে এ ধরনের ঘৃণ্য কাজ করে চলেছে, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহই থাকতে পারে না। কারা তারা, কী তাদের চক্রান্ত—সচেতনভাবে সেগুলি ভেবে দেখতে হবে সাধারণ মানুষকেও। কেউ বা কারা যদি নিছক বিদ্বেষ ছড়ানোর জন্য এই কাজ করে থাকে, তাদের চিহ্নিত করুক সাধারণ মানুষই। খবর দিক থানা-পুলিসকে। তা নাহলে রোজই কোনও না কোনও পাড়ায় এ ধরনের ঘটনা ঘটতেই থাকবে। আরও প্রাণ চড়বে গণপিটুনি হাড়িকাঠে। কেননা, নিছক গুজব আর রাজনৈতিক উদ্দেশ্যসিদ্ধি দুটি বিপরীত মেরুর অভিসন্ধি। এ ব্যাপারে তাই সতর্ক ও সজাগ পদক্ষেপ করতে হবে আমাদেরই। পুলিস নেবে সহায়কের ভূমিকা।