শিক্ষার জন্য দূরে কোথাও যেতে পারেন। প্রেম-প্রণয়ে নতুন যোগাযোগ হবে। বিবাহের কথাবার্তাও পাকা হতে পারে। ... বিশদ
কাশ্মীরে প্রত্যক্ষভাবে পাকিস্তানি মদতপুষ্ট জঙ্গিরা যখন ভারতের বুকের উপর বসে এদেশেরই দাঁত উপড়াচ্ছে, তখন তাদের দেশের খেলোয়াড়দের সঙ্গে করমর্দন করে, আলিঙ্গন করে বিনোদনমূলক খেলার ঔচিত্যবোধ নিয়ে কয়েকদিন ধরে তুমুল আলোচনার শেষ নেই। এমনকী আমাদের দেশের তাবড় ক্রিকেট মহলও এনিয়ে আড়াআড়িভাবে দ্বিধাবিভক্ত।
প্রাক্তন অধিনায়ক কিংবদন্তি ক্রিকেটার সুনীল গাভাসকর, শচীন তেণ্ডুলকররা জঙ্গিহামলার তীব্র নিন্দা করেও পাকিস্তানকে ম্যাচ ছেড়ে দেওয়ার পক্ষে নন। শচীনের যুক্তি, দু’পয়েন্ট ‘উপহার’ দিলে বিশ্বকাপে পাকিস্তান সুবিধা পাবে। এক্ষেত্রে ভিন্নমত পোষণ করেছেন আর এক প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক তথা সিএবি সভাপতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, শচীন দু’পয়েন্ট চাইছেন, আমি চাইছি বিশ্বকাপ। কিন্তু, পুলওয়ামায় সন্ত্রাসবাদী হামলায় এতজন জওয়ানের মৃত্যু গোটা দেশকে টলিয়ে দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিশ্বকাপে ম্যাচ খেলা কঠিন। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে সরকার ও বিসিসিআই-কেই।
সূচি অনুযায়ী, রাউন্ড রবিন লিগে ১৬ জুন ম্যাঞ্চেস্টারে বিরাট কোহলিরা খেলবেন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। সৌরভের মতে, এখনও অনেকটা সময় রয়েছে। তবে এটা বলা যায়, যোগ্য জবাব দেওয়ার সময় এসেছে। এবার দশ দেশের বিশ্বকাপে রাউন্ড রবিন লিগ ফরম্যাটে খেলা হবে। সব দল সকলের বিরুদ্ধে খেলবে। ভারত যদি একটি ম্যাচ না খেলেও সেমি-ফাইনালে চলে যায়, তাহলে এটা কোনও বড় ইস্যু হবে না। ভারতকে ছাড়া বিশ্বকাপ আয়োজনের কথা আইসিসি ভাবতেও পারে না। তবে এমন দাবি যে উঠেছে, সেটাও একটা কড়া বার্তা পাকিস্তানের কাছে।
শচীনের বক্তব্য সৌরভের থেকে একেবারেই ভিন্ন। তিনি বলেছেন, ‘‘বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে না খেলে দু’পয়েন্ট ছেড়ে দেওয়া আমার একেবারেই পছন্দ নয়। এই ধরনের সিদ্ধান্তকে ঘৃণা করি। বিশ্বকাপের আসরে আজ পর্যন্ত পাকিস্তান হারাতে পারেনি ভারতকে। তাই আরও একবার ওদের হারিয়ে মোক্ষম জবাব দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। ম্যাচটা না খেলে দু’পয়েন্ট পাইয়ে দিলে ওরা টুর্নামেন্টে সুবিধা পাবে।’’ গাভাসকরের মত, ম্যাচ ছাড়লে ক্ষতি ভারতেরই। তবে বিসিসিআই এখনও বিশ্বকাপে পাকিস্তান ম্যাচ বয়কট করার ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত প্রশাসক কমিটি বল পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের কোর্টে।
এইভাবে বিতর্কের টি-টোয়েন্টির বল ক্রমাগত মাঠের বাইরে পাঠাচ্ছেন প্রবাদপ্রতিম ক্রিকেটাররা। তাঁরা বিশেষজ্ঞ এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। এমনকী তাঁদের জাতীয়তাবোধ বা দেশপ্রেম নিয়েও সন্দেহের কোনও অবকাশ নেই। শুধু আমাদের মতো সাধারণ বুদ্ধির মানুষের মনে একটাই প্রশ্ন জাগছে, যে দেশের দুধকলায় পুষ্ট হওয়া জঙ্গিরা আমাদেরই ঘরে ঢুকে আমাদের ভাইদের রক্তে রাঙিয়ে দিয়েছে সবুজ উপত্যকা। তাদের সঙ্গে সম্প্রীতির খেলা কোনও পথ নয়। বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে ভারত গোহারা করলেও সেইসব শহিদের পরিবারে হাসি ফুটে উঠবে, নাকি পাকিস্তানি জঙ্গিদের সমূলে নিকেশ করলে শান্তি পাবে নিহতদের আত্মা? বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারত খেলবে কি না সেই দাবি থেকে সরে এসে বরং আওয়াজ উঠুক বিশ্বকাপ থেকেই পাকিস্তানকে বয়কট করা হোক। বিশ্বকাপ খেলাটি সম্প্রীতি ও বিশ্বভ্রাতৃত্বের প্রতীক। যেমন ওলিম্পিকের প্রতীকে সব কটি মহাদেশকে পরস্পরের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়েছে। তেমনই একটি জঙ্গিরাষ্ট্র পাকিস্তানকে একঘরে করুক বিশ্ববাসী। রাষ্ট্রসঙ্ঘ তো সময় বেঁধেই দিয়েছে, তাই ধ্বনি উঠুক দেশে দেশে—মানবতার স্বার্থে, জীবনের স্বার্থে, বিশ্ববান্ধব পৃথিবী গড়ে তোলার স্বার্থে পাকিস্তানকে নির্বাসিত করা হোক। শুধু খেলা কেন, সন্ত্রাস দমন না-করা পর্যন্ত চূড়ান্তভাবে অর্থনৈতিক অবরোধ গড়ে তোলা হোক পাকিস্তানের বিরুদ্ধে।