সঠিক বন্ধু নির্বাচন আবশ্যক। কর্মরতদের ক্ষেত্রে শুভ। বদলির কোনও সম্ভাবনা এই মুহূর্তে নেই। শেয়ার বা ... বিশদ
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই আধিকারিক আম্রুত প্রকল্পে অস্থায়ী পদে নিয়োগ হয়েছিলেন। অথচ রাতারাতি তাঁকে অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার পদে বসানো হয়। কোনও সরকারি স্থায়ী কর্মী ছাড়া পুর আইনে ওই পদে কাউকে বসানো যায় না। অথচ তৎকালীন বোর্ড তাঁকে ওই পদে বসিয়ে যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজ করাতে থাকে। আধিকারিকরা তদন্তে নেমে জানতে পেরেছেন, বহরমপুর শহরে প্রায় ৫০টি ওয়াটার এটিএম তৈরি হয়েছিল। সেগুলি তৈরি করতে যা খরচ দেখানো হয়েছিল তা বাস্তবে হয়নি বলে অভিযোগ। ওই এটিএম তৈরির কাজটিও অভিযুক্ত আধিকারিকই দেখভাল করতেন বলে জানা গিয়েছে। এছাড়া কর্মতীর্থ তৈরিতেও ব্যাপক অনিয়ম করা হয়। সব মিলিয়ে কয়েক বছরে কোটি টাকার বেশি দুর্নীতি হয়েছে। পুরসভা সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, অভিযুক্ত আধিকারিকের বিরুদ্ধে চার-পাঁচটি অভিযোগ জমা পড়ে। তারমধ্যে একটি অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যাওয়ায় তাঁকে ইতিমধ্যে কাজ থেকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শহরে ছোট ছোট রাস্তা বা ড্রেন তৈরির কাজে তিনি হস্তক্ষেপ করতেন না। তাছাড়া যাবতীয় বড় কাজে তাঁর হস্তক্ষেপ ছিল। অভিযোগ, তাঁর মাথার উপর এক প্রভাবশালীর হাত ছিল। সেই প্রভাবশালীর অত্যন্ত প্রিয় ছিলেন ওই আধিকারিক। কাটমানির টাকা হাত ঘুরে ওই প্রভাবশালীর কাছেও গিয়েছে বলে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন। এক আধিকারিক বলেন, ঠিকমতো তদন্ত হলে রাঘব বোয়ালরা জালে উঠবে। একজন আধিকারিক নিজের ইচ্ছেমতো কাজ করবেন তা কখনওই হয় না। প্রভাবশালীর মদত না থাকলে একজন অস্থায়ী কর্মী কোনওমতেই অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার পদে বসতে পারেন না। প্রসঙ্গত, কাটমানি নেওয়ার অভিযোগে পুরসভার এক আধিকারিককে কাজ থেকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তাঁকে আম্রুত প্রকল্পে নিয়োগ করা হয়েছিল। সংশ্লিষ্ট দপ্তর তাঁকে কাজ থেকে বরখাস্ত করার জন্য পুরসভায় চিঠি পাঠিয়েছে। সেইমতো প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যেই তাঁকে বরখাস্ত করার চিঠি ধরানো হবে।
যদিও বহরমপুর পুরসভার প্রশাসক দীপাঞ্জন মুখোপাধ্যায় এনিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তিনি বলেন, এবিষয়ে কোনও কিছুই বলব না। প্রাক্তন চেয়ারম্যান নীলরতন আঢ্য বলেন, আমাকে অডিটে ক্লিনচিট দেওয়া হয়েছে। কোনও বড় কাজ করতে হলে তা টেন্ডার কমিটির মাধ্যমে পাশ করানো হতো। কারণ, কাজের টেকনিক্যাল বিষয়গুলি আমরা বুঝি না। সুতরাং টেন্ডার কমিটি ছিল না বলে যে দাবি করা হচ্ছে তা ঠিক নয়। পুরসভার প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর নাড়ুগোপাল মুখোপাধ্যায় বলেন, প্রশাসন তদন্ত করছে। সরকারি কাজে কেউ অনিয়ম করলে প্রশাসন নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নেবে।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, মেয়াদ পেরিয়ে যাওয়ায় এখন প্রশাসক শহরের কাজকর্ম দেখছেন। কিন্তু পুরনো বোর্ডের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর বিভিন্ন কাজ নিয়ে একাধিক অভিযোগ জমা পড়ে। অডিটেও এক তহবিলের টাকা অন্য তহবিলে খরচ করা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। তারপর ফের আধিকারিকরা একাধিক অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নেমে বড়সড় দুর্নীতি চক্রের হদিশ পান। এক আধিকারিক বলেন, রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা না থাকলে অনেক প্রভাবশালীকেও জেরার মুখে পড়তে হতে পারে। তাঁদের ইন্ধন ছাড়া কোনওভাবেই এরকম অনিয়ম হতে পারে না। আগের বোর্ডের আমলে পছন্দের কয়েকজন ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দেওয়া হয়েছে। তারাই শহরের যাবতীয় বড় কাজ করেছে। বিনিময়ে অনেকেই কাটমানি খেয়েছে। তদন্তে তারও প্রমাণ আধিকারিকরা পেয়েছেন।
এদিকে পুরসভায় দুর্নীতি চক্রের হদিশ মেলায় শাসকদল কিছুটা হলেও চাপে পড়বে বলে রাজনৈতিক মহল মনে করছে। কারণ, যে সময়ে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে সেসময় তৃণমূলের বোর্ডই পুরসভা চালিয়েছে। এই ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে বিরোধীরা এখনও ময়দানে না নামলে শাসকদল কিছুটা অস্বস্তিতে রয়েছে। যদিও তৃণমূলের মুখপাত্র অশোক দাস বলেন, আমাদের দল দুর্নীতি বা অনিয়ম কখনওই সমর্থন করে না।