ঝগড়া এড়িয়ে চলার প্রয়োজন। শরীর স্বাস্থ্য বিষয়ে অহেতুক চিন্তা করা নিষ্প্রয়োজন। আজ আশাহত হবেন না ... বিশদ
শুক্রবার ঝটিকা সফরে কলকাতায় এসে আয়কর কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন ওই উপদেশ দেন। বৈঠক শেষে আয়কর কর্তারা এমনটাই জানিয়েছেন। এ রাজ্যে আয়কর নিয়ে কতটুকু এগতে হবে, রুদ্ধদ্বার কক্ষে অফিসারদের তারই আভাস দিয়ে গেলেন অর্থমন্ত্রী। বলে গেলেন, ঋষি অরবিন্দ, রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের বাংলায় সংস্কৃতির যে নবজাগরণ হয়েছে, তাকে রক্ষা করতে হবে।
বাংলাজুড়ে এখন দুর্গাপুজোর গন্ধ। পুজোকে নিয়ে রাজনীতিও তুঙ্গে। তাতে বড়সড় জায়গা দখল করেছে আয়কর। বড় পুজো কমিটিগুলিকে আয়করের নোটিস ধরানো নিয়ে বিগত কয়েকমাস ধরে রাজনীতির পারদ চড়েছে যথেষ্ট। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তা নিয়ে একাধিকবার কড়া ভাষায় প্রতিবাদ করেছেন কেন্দ্রের বিরুদ্ধে। আয়করের চাপের কাছে যাতে পুজো কমিটিগুলি মাথা নত না করে, তারও আবেদন জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ সমাবেশে শামিল হয়েছে শাসকদল। আবার বিরোধী দলের নেতারাও দুর্গাপুজোয় আয়কর ইস্যুতে মুখ্যমন্ত্রীর সুরেই গলা মিলিয়েছেন। অর্থমন্ত্রী হওয়ার পর প্রথমবার কলকাতায় এসে সেই দুর্গাপুজো নিয়েই মুখ খুলেছেন নির্মলা সীতারামন। কিন্তু যে আয়কর নিয়ে এত কাণ্ড, ইনকাম ট্যাক্সের শীর্ষস্থানীয় অফিসারদের সামনে তা নিয়ে একটি শব্দও খরচ করেননি। বরং বলেছেন, বাঙালির প্রাণের উৎসবে সবাই মাতুন। আয়কর দপ্তরের কর্তারা বলছেন, সরাসরি না বললেও, অর্থমন্ত্রী বুঝিয়ে দিয়েছেন, বাংলার পুজো নিয়ে তাঁর মনোভাব কী। আয়কর দপ্তরও যাতে নোটিস পাঠানোর বিষয়টি নিয়ে কঠোর না হয়, তারই ইঙ্গিত দিয়ে গিয়েছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী, মনে করছেন তাঁরা।
ওই দিন জিএসটি এবং আয়কর কর্তাদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে হাজির ছিলেন সেন্ট্রাল বোর্ড অব ডিরেক্ট ট্যাক্সেস-এর চেয়ারম্যান প্রমোদচন্দ্র মোদি এবং কেন্দ্রীয় রাজস্ব সচিব অজয়ভূষণ পাণ্ডে। আয়কর দপ্তর সূত্রের খবর, সেখানেই ছোট শিল্পে আয়কর হেনস্তার প্রসঙ্গ তোলেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, স্টার্ট আপ সংস্থাগুলিকে এখনও ‘সেল কোম্পানি’র নোটিস ধরানো হচ্ছে। অথচ আমি বাজেটে স্পষ্ট বলেছি, এই কাজ করা যাবে না। অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য, তাঁর কাছে এই বিষয়ে অভিযোগ জমা পড়েছে। তাঁর দাবি, অফিসাররা তাঁকে বলেছেন, কাগুজে নির্দেশ না থাকার কারণেই এই সমস্যা। বৈঠকে উপস্থিত কর্তাদের একাংশ জানিয়েছেন, নির্মলা সীতারামন এরপরই বলেন, এই অজুহাতে করদাতাদের হেনস্তা করা যাবে না। কাগুজে নির্দেশিকা চাইতে ‘বসদের’ উপর চাপ তৈরি করুন। খানিকটা রসিকতা করেই নাকি তিনি বলেন, বসদের হেনস্তা করুন, করদাতাদের নয়। সূত্রের খবর, মন্ত্রী অবশ্য নিজেই বলেন, এইসব কথা বলে আমি জনপ্রিয় অর্থমন্ত্রী হতে চাই না। তবু বলছি, কোনও অফিসারের সমস্যা হলে আমাকে সরাসরি জানান। তাঁর বক্তব্য, আয়কর দপ্তর ভালো কাজ করছে। কিন্তু কয়েকজন অফিসারের কারণেই বদনাম হচ্ছে দপ্তরের। যদিও অফিসারদের বক্তব্য, অর্থমন্ত্রী এদিন ছোট স্টার্ট আপ সংস্থাগুলি নিয়েই মূলত ক্ষোভের কথা বলেছেন। এ রাজ্যে সেই শিল্পের সংখ্যা নেহাতই কম।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রায়ই অভিযোগ করেন, কেন্দ্রীয় সরকার রাজনৈতিকভাবে তাঁকে কাবু কারতে না পেরে আয়করদাতাদের উপর চাপ তৈরি করছে। শিল্পপতিদের আয়করের ভয় দেখানো হচ্ছে, যাতে তাঁরা কেন্দ্রীয় শাসকদলের মুঠোয় থাকেন। সেই অভিযোগ যে একেবারেই অমূলক নয়, তা কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর এদিনের কথাতেই বোঝা যাচ্ছে, মনে করছেন অনেকেই। পাশাপাশি দুর্গাপুজো নিয়েও মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষোভেই কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী খানিকটা মলম লাগালেন কি না, শুরু হয়েছে সেই জল্পনাও।