অনুপ দত্ত, শিলিগুড়ি, বিএনএ: নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এশিয়ান হাইওয়ে-২ এর কাজ কেন শেষ করা গেল না সেই ব্যাপারে রিপোর্ট চেয়ে পাঠালো (কৈফিয়ৎ তলব) কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রক। চলতি সপ্তাহে ওই কৈফিয়ৎ তলব করেছে পরিবহণ মন্ত্রক। কেন দেরি হয়েছে, কোথায় কী কারণে এত দেরি হল তার প্রতিটি মুহূর্তের পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। এশিয়ান হাইওয়ে-২ কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ২০১৭ সালের নভেম্বরের মধ্যে এই কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিভিন্ন সমস্যার কারণে পরবর্তীতে গত বছরের ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে মহাসড়ক নির্মাণের কাজ শেষ করার সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল পরিবহণ মন্ত্রক। কিন্তু সেই সময়সীমাও পেরিয়ে পিয়েছে। পরবর্তীতে ২০১৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি মধ্যে মহাসড়ক নির্মাণের কাজ শেষ করার সময় দেওয়া হয়। কিন্তু এশিয়ান হাইওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই সময়ের মধ্যেও মহাসড়কের নির্মাণের কাজ শেষ হবে না। যার ফলে ফেব্রুয়ারিতেও রাস্তাটি দেশবাসীর জন্য খুলে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। হাইওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সময়সীমা বাড়িয়ে এখন রাস্তার কাজ শেষ করার টার্গেট ২১ মার্চ করা হয়েছে। যদিও এই সময়ের মধ্যে ওই কাজ শেষ করে মহাসড়ক খুলে দেওয়া সম্ভব হবে কিনা তা নিয়ে অবশ্য পরিস্কার করে কোনও কর্তাই বলতে পারছেন না। লোকসভা নির্বাচনের আগে এই মহাসড়কটি খুলে দিতে চাইছে কেন্দ্র। সেক্ষেত্রে কেন ঢিলেমি হচ্ছে তা জানতে চেয়েছে কেন্দ্রীয় পরিবহণ মন্ত্রক।
এশিয়ান হাইওয়ে-২ এর প্রজেক্ট ডিরেক্টরের নির্মল মণ্ডল বলেন, কেন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা যায়নি তার রিপোর্ট আমাদের কাছে চেয়ে পাঠানো হয়েছে। একাধিক কারণে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মহাসড়ক নির্মাণের কাজ শেষ করা যায়নি। প্রতিটি মুহূর্তের রিপোর্ট আমরা পাঠাচ্ছি। তিনি দাবি করেন, সময়সীমা ১৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেটাও সম্ভব হচ্ছে না। আগামী ২১ মার্চের মধ্যে কাজ শেষ করার টার্গেট নেওয়া হয়েছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, জমি অধিগ্রহণ থেকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নানা সময়ে কাজ পিছিয়ে। পরবর্তীতে বালি, পাথর ও বিটুমিন না পাওয়া সংক্রান্ত নানা কারণে দীর্ঘ সময় প্রকল্পের কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছে। এরপর স্থানীয় কিছু সমস্যার কারণেও কাজ পিছিয়েছে। এরপর ধর্মঘটের কারণেও নির্মাণের কাজ বন্ধ হয়েছে বেশ কয়েকবার। যার ফলে টাগের্ট থেকে বার বার পিছিয়ে গিয়েছে নির্মাণ কাজ।
শিলিগুড়ি ঘেঁষে চলে যাওয়া মহাসড়কটির কাজ প্রায় ৯০ শতাংশ শেষ হয়ে গিয়েছে। ইন্দোনেশিয়া থেকে ইরান মাঝে ১০টি দেশকে জুড়বে এই মহাসড়কটি। পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে পড়েছে ৩৭.২৭ কিলোমিটার পথ। তবে এই পথের বেশিরভাগটাই চার লেনের (৪ লেন)। আবার কোথাও ছয় লেন (৬ লেন)। আবার কোথাও একমুখীও করা হয়েছে। ভারত-বাংলাদেশ নেপাল সীমান্ত পানিট্যাঙ্কি থেকে শিলিগুড়ি ছুঁয়ে এই রাস্তাটি মিশেছে বাংলাদেশ সীমান্তের ফুলবাড়িতে। এশিয়ান ডেভলপমেন্ট ব্যাঙ্কের অর্থানুকূল্যে মহাসড়কটি কেন্দ্রীয় পরিবহণ মন্ত্রকে অধীনে তৈরি হচ্ছে। এই রাজ্যে কাজ করছে পূর্ত দপ্তর। এশিয়ান হাইওয়ে কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথমে রাস্তার কাজের জন্য ৬০০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছিল। পরে বাড়তি জমি অধিগ্রহণ, অতিরিক্ত ক্ষতিপূরণ মেটানো, একাধিক সার্ভিস রোড তৈরি, ফ্লাইওভারের একাধিক সাইড প্ল্যান, একাধিক আন্ডারপাস তৈরি জন্য কেন্দ্রর কাছে আরও অতিরিক্ত বরাদ্দ চেয়ে পাঠানো হয়। শেষে বর্তমানে বরাদ্দ বেড়ে দাঁড়ায় ৭০৮ কোটি টাকা। পবর্তীতে বাগডোগরায় প্রধান ফ্লাইওভার একটি সংযোগকারী রাস্তা সহ কিছু জায়গায় বাড়তি কাজের জন্য আরও কিছু বরাদ্দ নিয়ে মোট খরচ ধরা হয়েছে ৭২৯ কোটি টাকা।