বিশ্বজিৎ দাস, কলকাতা: দেবীপক্ষ পড়তেই ধুম লেগেছে সন্তান ভূমিষ্ঠ করাবার। সেলিব্রিটি, পেশাদার, উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তি, ব্যবসায়ী—তিথি দেখে নিজের সন্তানকে পৃথিবীর আলো দেখানোয় কেউই কম যান না! নামী প্রসূতি বিশারদদের কাছে তাঁদের অনুরোধ লেগেই আছে। এই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে পিজির মতো প্রথম সারির সরকারি হাসপাতালেও। স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত যা ট্রেন্ড, মহালয়ার দিন অর্থাৎ প্রতিপদ ও পঞ্চমী—এই তিনদিনে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের লেবার ওটিগুলি সবচেয়ে ব্যস্ত ছিল। বলা বাহুল্য, বেশিরভাগই ছিল প্ল্যানড সিজারিয়ান সিকশন বা সি সেকশন ডেলিভারি।
পিজির স্ত্রীরোগ বিভাগের প্রধান ডাঃ সুভাষ বিশ্বাস বলেন, ‘যতই বোঝাই, তিথি দেখে লাভ নেই, কেউ শোনেন না। বলি যে, মেয়ে দুর্গাও হতে পারে, মাতাহারিও হতে পারে। ছেলে বিবেকানন্দও হতে পারে, দাউদও হতে পারে। তিথি মেনে জন্মের সঙ্গে গুণী ও বিখ্যাত হওয়ার কোনও সম্পর্ক নেই। বরং ৩৫ বছরের অভিজ্ঞতায় দেখেছি, স্বাভাবিক নিয়মে ভূমিষ্ঠ হওয়া সন্তানদের মধ্যেই জ্ঞানীগুণী হওয়ার পরিসংখ্যান বেশি।’
বিশিষ্ট স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ রঞ্জিৎ চক্রবর্তী বলেন, ‘তিন দশকের প্র্যাকটিসেও প্রবণতা পাল্টাতে দেখলাম না। অন্য সময়ের দ্বিগুণ প্রসব হচ্ছে দেবীপক্ষে! অবাঙালিদের চাহিদায় এগিয়ে জন্মাষ্টমী বা গণেশ চতুর্থী। কিন্তু আসল হল, নিরাপদ প্রসব।’
নামী স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ দেবলীনা ব্রহ্ম বলেন, ‘প্রতিপদে সবচেয়ে বেশি সিজারের অনুরোধ এসেছে। পঞ্চমীতেও হয়েছে। এইসব সংস্কার মানি না। তবে খুশি হয়েছি অন্য কারণে, আমার হাতে ৭টি সিজারের ৫টিতেই কন্যাসন্তান হয়েছে।’
বিশিষ্ট শাস্ত্রকার জয়ন্ত শাস্ত্রীর অবশ্য দাবি, ‘তিথি, নক্ষত্র, যোগ, বার ও করণ—এই পাঁচটির যথেষ্ট মূল্য আছে। তাই শুভদিনে শুভকাজ করা হয়।’
অন্য সময়ে পিজিতে রোজ ১৬-২০টি সন্তান প্রসব হয়। দেবীপক্ষে? প্রতিপদে ২৩টি, চতুর্থীতে ২২টি এবং পঞ্চমীতে ২৬টি! প্রাইভেটে বেশিরভাগই হয় সিজার। সরকারি ক্ষেত্রে সিজার বাড়লেও তা সাধারণ প্রসবকে ছাপিয়ে যেত না। পিজিতে ৮-১৯ অক্টোবরের হিসেবে, তিনভাগের দু’ভাগই হয়েছে সিজার।