নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: নধর পেঁপেগুলোর দিকে আঙুল দেখিয়ে দোকানদার বললেন, ‘নিয়ে যান দাদা, কুড়ি টাকা কেজি। বাজারের মধ্যে একমাত্র এটাই সস্তা!’ পাশে রাখা সবুজ কুমড়োর ফালি তুলে বললেন, ‘দারুণ কুমড়ো, ৫০ টাকা কিলো।’ কুমড়োরও এত দাম! প্রশ্ন শুনেই দোকানির সাফ জবাব, ‘এগুলো একেবারে দেশি। দাম তো হবেই।’ কিছুটা দূরে অন্য এক দোকানদারের পসরার দিকে আঙুল দেখিয়ে তাঁর দাবি, ‘ওই যে দেখছেন লাল রংয়ের কুমড়ো, সব চীনের। টেস্ট নেই। ওগুলো চল্লিশ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশি জিনিস ওই দামে পাবেন না।’
যাঁরা প্রায় প্রতিদিন বাজারে যান বা দ্রব্যমূল্যের খোঁজখবর রাখেন, তাঁরা বুঝছেন, বর্তমান বাজারদর আগে কখনও এতটা ছ্যাঁকা দেয়নি। এমন পরিস্থিতি যে পু্ঁইশাক বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি দরে। পটল, চিচিঙ্গা, কচু বা ঝিঙের একই দাম। কোনও আনাজই পাওয়া যাচ্ছে না ৬০ টাকার নীচে। ৬০ থেকে ৭০ টাকার মধ্যে ঘোরাফেরা করছে কাঁকরোল। ঢ্যাঁড়শের দর ৮০ টাকা। ‘কোয়ালিটি’র হেরফেরে ১০০ টাকা দর হাঁকতেও কার্পণ্য করছেন কোনও কোনও দোকানি। ১০০ টাকার নীচে বেগুন কোথাও মিলছে না বললেই চলে। গ্রীষ্মের শাকসব্জি থেকে স্বাদ বদলের জন্য যাঁরা ফুলকপি বা বাঁধাকপির দিকে ঝুঁকছেন, দাম শুনে লাফিয়ে উঠছেন তাঁরাও। একটু ভালো সাইজের ফুলকপি প্রতি পিস ৮০ থেকে ১০০ টাকা। বাঁধাকপি এক কিলো ৬০ টাকার নীচে নেই। পেঁয়াজ ৭০ টাকা, পুরনো আদা ২৫০ টাকা, রসুন কোথাও ৩৫০, কোথাও ৪০০ টাকা কেজি দরে বিকোচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে সামান্য স্বস্তি দিচ্ছে আলু। কয়েকদিন আগেও বাজারে যে আলু কেজি প্রতি ৩৪ টাকায় পাওয়া যাচ্ছিল, এখন তা ৩২ টাকা।
ব্যবসায়ীদের দাবি, দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকা বন্যার কবলে পড়েছে। তাই সব্জির দাম চড়া। তাঁদের এই যুক্তিকে অবশ্য আমল দিতে রাজি নয় রাজ্য সরকার গঠিত দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত টাস্ক ফোর্স। এর অন্যতম সদস্য কমল দে বলেন, ‘বিগত বছরগুলিতে আমরা দেখেছি, মার্চ মাসে গ্রীষ্মকালীন যেসব আনাজপাতি ওঠে, আগস্টের শেষে তার জোগান ফুরিয়ে যায়। তাই সেপ্টেম্বর- অক্টোবরে মাসে দাম বাড়ে। নভেম্বরের গোড়া থেকে ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাল শাক, পালং শাক বা সীমের মত শীতকালীন আনাজ বাজারে এসে যাওয়ায় দাম কিছুটা কমতে শুরু করে। এবারও এর অন্যথা হচ্ছে না।’ তবে অন্যান্যবারের তুলনায় এবার আনাজপাতির দাম যে চড়া, মেনে নিয়েছেন কমলবাবু। তাঁর কথায়, ‘সোমবার মুখ্যসচিব মনোজ পন্থের বৈঠকে আমরা জানিয়েছি, এবারে আনাজের জোগান অনেক কম। যেমন, বিহারের কাটিহার থেকে এই সময় বেগুন আসত। যে কোনও কারণেই হোক, তা এবার আসছে না। কৃষ্ণনগর, বাগদা বা বনগাঁ থেকে যে বেগুন আসে, এই সময় তার জোগানও অনেক কম। ফলে পাইকারি বাজারেই ৭০ থেকে ৮০ টাকা কিলো দরে বিকোচ্ছে বেগুন। ঢ্যাঁড়শ বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কিলো দরে। পটলের দাম ৩০ টাকা। তবে বেশ কিছু অসাধু ব্যবসায়ী এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দাম বাড়াচ্ছেন। আমরা টাস্ক ফোর্সের তরফে বাজারে অভিযান চালিয়ে এই সমস্যা কমানোর চেষ্টা করছি।’