গল্পের পাতা

গুপ্ত রাজধানী: লোধি গার্ডেন
সমৃদ্ধ দত্ত

মন খারাপ হয়েছে? চলে আসতে হবে লোদি গার্ডেনে। বান্ধবীকে আজই বলতে হবে মনের কথা? গন্তব্য লোধি গার্ডেন। এই কি শেষ দেখা? দু’জনের পথ দু’দিকে বেঁকে যাবে? লোদি গার্ডেন সাক্ষী থাকুক। সুগার বেড়েছে। ডক্টর লুথরিয়া বলেছেন, এখনই ওষুধ শুরু করতে হবে না। আগে হাঁটুন। তবে দূষণহীন স্থানে। আর নির্মল বাতাসে। দিল্লিতে এরকম জায়গা কোথায়? কেন লোধি গার্ডেন!
ভারতের সংবিধান তৈরি হচ্ছে। নিয়ম করে সংবিধান সভার বসছে বৈঠক। সেখানে কলকাতায় সদর দপ্তর থাকা অল ইন্ডিয়া  বর্ণশর্মা স্বরাজ সঙ্ঘ লিখিতভাবে প্রস্তাব পাঠিয়েছে যে, প্রাচীন হিন্দু শাস্ত্রে ঠিক যেভাবে রাষ্ট্র পরিচালনার নীতির কথা বলা হয়েছে, সেভাবেই যেন সংবিধান রচনা করা হয়। নচেৎ সংবিধান মেনে নেওয়া হবে না। সংবিধান সভার অন্যতম সদস্য জয়পাল সিং লাগাতার বলে চলেছেন, মুসলিম লিগ না থাকলে কিন্তু এই সংবিধান সভার সিদ্ধান্তের কোনও গুরুত্ব নেই। মহাত্মা গান্ধীর হত্যাকাণ্ডের পর ‘দ্য স্টেটসম্যান’ পত্রিকায় চিঠি প্রকাশিত হল একের পর এক। যেখানে বলা হয়েছে, গান্ধীজিকে রক্ষা করতে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ব্যর্থ। অতএব এই ব্যর্থতায় দায় মাথায় নিয়ে সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলকে পদত্যাগ করতে হবে। প্যাটেলকে নেহরু বললেন, এসব আজেবাজে কথায় একদম মাথা ভারী করার দরকার নেই। আপনার উপর দেশের দায়িত্ব। কিন্তু এত বড় এক অপবাদকে অগ্রাহ্য করবেন কীভাবে প্যাটেল! প্রচণ্ড মনোকষ্টে রয়েছেন। এই যে এত জটিলতা, এত বিরোধিতা এবং এত সমস্যা, এসবের মধ্যেই প্যাটেল নিয়ম করে সংবিধান সভার কিছু সদস্যকে মাঝেমধ্যেই ভোরবেলা ডেকে পাঠাতেন এই লোধি গার্ডেনে। এখানে মর্নিং ওয়াকের সময় প্যাটেল সদস্যদের বোঝাতেন কোন দাবি সঠিক, কোন দাবি অযৌক্তিক। কোন দাবি মেনে নেওয়া হলে ভারতের সংবিধান আর সঠিকভাবে নির্মাণ করা সম্ভবই হবে না। সেই ট্র্যাডিশন পরবর্তী ৫০ বছর ধরেই চলে এসেছে। অর্থাৎ লোধি গার্ডেনের বহু মর্নিং ওয়াক থেকে বেরিয়ে এসেছে দেশ শাসনের সমাধান। অরুণ জেটলি এই রীতিতে মর্নিং বৈঠক করতেন লোধি গার্ডেনে হাঁটতে হাঁটতে। ওই যে বড়া গম্বুজের পিছনে এক টুকরো জমিতে পা ছড়িয়ে হাতে ডায়েরি নিয়ে বসে বসে কিছু লিখছে এক তরুণ, সে এক অজানা কবি। উঁকি দিয়ে দেখা যাবে হিন্দি, উর্দু, ইংরেজি, যে কোনও ভাষায় কবিতার লিখছে হয়তো। নির্জনে, একঝাঁক দুর্গা টুনটুনি আর টিয়া উড়ে বেড়াচ্ছে মাথার উপরে। মাঝেমধ্যেই বাতাস দিচ্ছে হয় দখিনা অথবা উত্তুরে। আর হঠাৎ আগস্টে বৃষ্টি নামলে বড়, ছোট, মাঝারি গম্বুজগুলির আশ্রয় তো আছেই। তবে শুধুই এই গম্বুজ, সমাধি, মসজিদ নয়, বরং লোধি গার্ডেনের সবথেকে বড় আকর্ষণ হল সবুজ সবুজ সবুজ। সবুজ ঘাস। সবুজ গাছ। সবুজ লতাপাতা। সবুজ শাপলা ভাসছে সবুজ হ্রদে। সবুজ টিয়ার শব্দ এক মুহূর্ত নিস্তব্ধ হতে দেবে না চরাচরকে। ১০০ একর জমি জুড়ে বিস্তৃত লোধি গার্ডেনকে অনায়াসে মধ্য দিল্লির ফুসফুস বলা যাবে।
একদিকে খান মার্কেট। অন্যদিকে সফরদরজং টম্ব। এই হল লোধি রোড। ঠিক এসবের ভরকেন্দ্র হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে ওই যে লোধি গার্ডেন। মহম্মদ শাহ কিংবা সিকন্দর লোধিদের সমাধি অথবা স্মৃতিস্তম্ভ। ১৪৫১ থেকে ১৫২৬। এই সময়সীমায় যাঁরা ছিলেন দিল্লির শাসক। জহির উল দিন মহম্মদ বাবর নামক এক যোদ্ধাকে বেশ অবজ্ঞা করেছিলেন যাঁদের শেষতম শাসক ইব্রাহিম লোধি। এবং ভুল করেছিলেন। বাবরের আগ্নেয়াস্ত্র সম্পর্কে তাঁর ধারণাই ছিল না। সুতরাং প্রথম পাণিপথের যুদ্ধে লোধির ভাগ্যে কী ঘটেছিল সেকথা ইতিহাস আমাদের বলেছে। ১ লক্ষ সেনা নিয়ে ইব্রাহিম লোধিকে মাত্র আট হাজার সেনা থাকা বাবরের কাছে হেরে যেতে হল কেন? কারণ সেই আদি অকৃত্রিম বিশ্বাসঘাতকতা। পাঞ্জাবের দায়িত্ব লোধি দিয়েছিলেন এক যোদ্ধাকে। দৌলত খান। কিন্তু দৌলত খান ক্রমেই বুঝতে পারছিলেন যে, ইব্রাহিম লোধি আসলে কাউকে বিশ্বাসই করেন না। যেকোনও সময় তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হবে অথবা কোতল করবেন। তাই দৌলত খান গোপনে কাবুলে নিজের বিশ্বস্ত কয়েকজন চর পাঠিয়ে দিলেন। যারা বাবরের কানে পৌঁছে দিল কাঙ্ক্ষিত বার্তা। অর্থাৎ কোন পথে, কীভাবে এবং কোন পদ্ধতিতে ইব্রাহিমকে আক্রমণ করতে হবে। সেটা ১৫২২ সাল। অপেক্ষা করতে হল আরও কয়েক বছর। 
১৫২৬ সালে অবশেষে পাণিপথে দেখা হল। বাবরের দুর্ধর্ষ কামান এবং তুফাং নামক এক অত্যাধুনিক বন্দুকের সামনে ইব্রাহিম দাঁড়াতেই পারেননি। তাঁর ২০ হাজার সেনা প্রথম কয়েক ঘণ্টায় খতম। দিল্লি দখল করে বাবরের প্রথম গন্তব্য, নিজামউদ্দিন আউলিয়ার দরগায়। সেখানে চাদর চড়িয়ে বাবর প্রার্থনায় বললেন, হিন্দুস্তানে আমি থাকতে এসেছি। আমার এবং আমার বংশধরদের যাত্রা যেন বিঘ্নহীন হয়। সুতরাং ইব্রাহিম লোধি সেদিন হেরে গিয়ে পরবর্তী সাড়ে তিনশো বছরের এক সলতনাৎকে ভারতের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করে দিয়ে গিয়েছিলেন। 
সেই লোধিদের স্মৃতিচিহ্ন খুঁজতে হলে আসতে হবে লোধি গার্ডেনে। সকাল, দুপুর, বিকেল। দিল্লিবাসীর কাছে লোধি গার্ডেন এক জাদুকর, এক মনস্তত্ত্ববিদ এবং এক বন্ধু। কেন? কারণ, এখানে মানুষ আসে বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে। এখানে আসতে হয় প্রকৃতির সান্নিধ্য পেতে। ভারতের ব্যস্ততম রাজধানীর ভিড়, দূষণ এবং নির্মম পেশাদারিত্বের ঠিক কেন্দ্রস্থলে এরকম এক হৃদয়পুর আছে এ যেন অবিশ্বাস্য! 
তবে সবথেকে যে কারণে লোধি গার্ডেনে আসতে হয়, তা হল, নিজের সঙ্গে দেখা করা! 
5Months ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

পারিবারিক অশান্তির অবসানে গৃহ সুখ ও শান্তি বাড়বে। প্রেমের ক্ষেত্রে শুভ। কর্মে উন্নতি। উপার্জন বৃদ্ধি।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.২৬ টাকা৮৪.৩৫ টাকা
পাউন্ড১০৬.৪৬ টাকা১০৯.১২ টাকা
ইউরো৮৯.৭৬ টাকা৯২.২০ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা