গল্পের পাতা

খায়রুল মঞ্জিল

সমৃদ্ধ দত্ত: গায়িকা ও নর্তকী তো অনেক আছেন। কিন্তু রূপমতীর মতো কেউ নেই। তাই মালওয়ার সুলতান মিয়াঁ বায়াজিদ বাজ বাহাদুর খান রূপমতীর প্রেমে আকুল। শেষ শাহের অধীনে থাকা এক সুবেদারের পুত্র বাজ বাহাদুর নিজেও যথেষ্ট দক্ষ যোদ্ধা। তবে  হলে কী হবে! তাঁর ওসব যুদ্ধবিগ্রহে মন নেই। ফলে মাণ্ডু সহ রাজ্যপাট প্রায় অযত্নে ও অবহেলায় অরাজকতার মুখে। রূপমতীও মাঝেমেধ্যে গান শোনানো সমাপ্ত হলে অনুরোধ করেন যে, ‘আপনি কয়েকদিন আর জেনানানহলে আসবেন না।  প্রজারা রোজ এসে এসে ঘুরে যায়। দেখা পায় না আপনার। রাজ্যশাসনে মন দিন।’ হাসেন বাজ বাহাদুর। তারপর গতকাল রাতে রূপমতীকে নিয়ে তিনি যে নতুন কবিতাটা লিখেছেন, সেটা পড়া শুরু করেন। 
এভাবে এত বড় একটা মালওয়া অঞ্চলকে অপশাসনের মধ্যে ঠেলে দিয়ে আমরা চুপ করে বসে থাকব? মুঘল সম্রাট আকবরকে আমির ওমরাহেরা বলেছিলেন। মালওয়া দখল করে নেওয়া উচিত। এই পরামর্শের পরই দেখা গেল মুঘলদের অন্যতম এক সেনাপতি আদম খানের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী অগ্রসর হল মালওয়া। বাজ বাহাদুরকে শায়েস্তা করতে। কে এই আদম খান? তাঁর মায়ের নাম মেহাম আঙ্গা। আকবর সম্রাট হলেও এই নারীর ক্ষমতা ও সক্রিয়তা অপরিসীম। আকবরের ধাত্রী মাতা। জন্ম হওয়ার পর থেকে এই নারী আকবরের পালন করেছেন। 
হুমায়ুন যুদ্ধবিগ্রহ আর পাহাড় জঙ্গলে ব্যস্ত ছিলেন শের শাহের কাছে হারানো সাম্রাজ্য পুনরুদ্ধারের কাজে। ১৫৫৪ সালে হুমায়ুন এক অসমসাহসী লক্ষ্য স্থির করলেন। মাত্র ৩ হাজার সেনা নিয়ে তিনি হিন্দুস্তানে আসবেন শের শাহকে ক্ষমতাচ্যুত করতে। সঙ্গী ১২ বছরের আকবর। জালালাবাদ থেকে কাঠের নৌকায় চেপে পেশোয়ারের দিকে আসছিল এই বাহিনী। হুমায়ুন তাঁর জেনানা হারেমকে রেখে এসেছিলেন কাবুলে। সতর্কতা হিসেবে। কিন্তু একমাত্র যে নারী আকবরকে একা ছাড়তে রাজি হননি, তিনি হলেন মেহাম আঙ্গা। সদ্যোজাত অবস্থা থেকে মেহাম আঙ্গা এই বালককে পালন করছে। অতএব তিনি আকবরকে ছাড়বেন না এই মহাযুদ্ধে একাকী। হুমায়ুন বারণ করেননি। জানেন পুত্রকে যদি কেউ রক্ষা করে তিনি হলেন এই মেহাম আঙ্গাই। 
সুতরাং ১৫৫৬ সালে ১৪ বছরের আকবর যখন সিংহাসনে বসেছিলেন পিতার অকস্মাৎ মৃত্যুর পর, তখন সর্বাগ্রে দরবারের আড়ালে যে চরম ক্ষমতা দখলের দাবাখেলা শুরু হয়েছিল, তা হল, কে হবেন আকবরের প্রধান চালিকাশক্তি! শিক্ষক বৈরাম খান? নাকি ধাত্রী মাতা মেহাম আঙ্গা? ছিলেন আরও একজন। পালক পিতা শামসুদ্দিন আতাকা খান। তবে তিনি তেমন আগ্রাসীভাবে ক্ষমতালোভী নন। আকবরের ছিল তাঁর প্রতি এক বিশেষ শ্রদ্ধা ও দুর্বলতা। আর এটাই বৈরাম খানের পছন্দ নয়। আতাকা খানের সঙ্গে বৈরামের এই সংঘাতের গতিপ্রকৃতি কোনদিকে যায় সেটা দেখা দরকার। তারপর মেহাম আঙ্গা নিজের হাতের তাস দেখাবেন। 
১৫৬০ সালে ঠিক তাই হল। আকবর আগ্রায় বসে আছেন। আর বৈরাম খান দিল্লিতে নিজের মতো করে রাজ্য শাসন করছেন এবং আকবরের ঘনিষ্ঠ ও অনুগতদের একে একে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এই সংবাদ পেয়েই মেহাম আঙ্গা আকবরকে বললেন, এটাই সময়। এখনই বৈরামকে কিন্তু নিরস্ত করা দরকার। নয়তো আগামী দিনে কিন্তু তাঁর লক্ষ্য তোমার সিংহাসন। আকবর  আগ্রা থেকে, আতাকা খান পাঞ্জাব থেকে নিজেদের বাহিনী নিয়ে হাজির হলেন দিল্লিতে। বৈরামকে আকবর স্পষ্ট বুঝিয়ে দিলেন তাঁর সময় সমাপ্ত। এত বছর ধরে আপনি আমার জন্য অনেক পরিশ্রম করেছেন। এটাই প্রকৃষ্ট সময় বিশ্রাম নিন এবং মক্কায় যান! বৈরাম বুঝলেন ক্ষমতার হাতবদল হয়েছে। 
তিনি যে মুঘল সম্রাটের প্রধান উপদেষ্টা, এই প্রমাণ ইতিহাসে রেখে যাওয়া জরুরি। তাই মেহাম আঙ্গা একটি মসজিদ ও মাদ্রাসা নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিলেন। তাও আবার কোথায়? সম্রাট হুমায়ুনের নির্মিত দীনপনাহ দুর্গ একদিকে। যা আজ পুরনো কেল্লা নামে পরিচিত। অন্যদিকে শের শাহ নির্মিত বিখ্যাত লাল দরওয়াজা। 
৫০০ বছর আগের এক শক্তিশালী নারী মধ্যযুগেও নারীশক্তির আত্মগরিমা সম্ভবত প্রদর্শন করে যেতে চেয়েছিলেন ইতিহাসে। তাই সেই মসজিদগাত্রে লেখা হয়েছিল, ‘মেহাম বেগ, শুদ্ধতার রক্ষাকর্ত্রী, এই স্থাপত্য নির্মাণ করেছেন সমস্ত গুণী মানুষের জন্য’। এই হল খায়রুল মঞ্জিল।
শুধুই এইটুকু ইতিহাস? মোটেই নয়। বাজ বাহাদুরকে পরাস্ত করে মেহাম আঙ্গার পুত্র মালওয়া দখল করতে সক্ষম হয়ে আরও যেন ক্ষমতার দর্পে অন্ধ হয়ে যান। তিনি বাজ বাহাদুরের সমস্ত সম্পদ ও হারেমের নারী হরণ করে আত্মসাৎ করেন। যা দেওয়ার কথা ছিল সম্রাটকে। শুধু তাই নয়। চরম অত্যাচার করে প্রজাদের এবং হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে চলে গণহত্যা। 
একথা কানে যেতে দেরি হয়নি আকবরের। তিনি আগ্রা থেকে তৎক্ষণাৎ রওনা হন মালওয়া। এই গণহত্যা আর অনৈতিকতা তাঁর ভাবমূর্তিকে ক্ষুণ্ণ করবে। তাই আকবর নিজেই শাস্তি দেবেন আদম খানকে। আকবরের সেই অভিযানের অন্যতম সঙ্গী কে? মেহাম আঙ্গা। আদম খানের মা। তিনি পৌঁছেই আদম খানকে সতর্ক করে দিলেন যে, সমস্ত সম্পদ আকবরকে সমর্পণ করতে।  
মালওয়া থেকে আদম খানকে আগ্রায় পাঠিয়ে দেওয়া হলেও তাঁর আচরণের বদল ঘটল না। ক্ষমতার লোভে আকবরের সেই পালক পিতা শামসুদ্দিন আতাকা খানকে হত্যা করল আদম খান প্রাসাদের মধ্যেই। প্রবল হট্টগোল শুনে স্বয়ং আকবর বেরিয়ে এলেন অলিন্দে। আর আদম খান এই হত্যা করেছে জেনে নির্দেশ দিলেন সিঁড়ি থেকে ফেলে দিয়ে আদম খানকে হত্যা করা হোক। তাই হল। 
কিন্তু আকবর জানেন যে, আদম খানের এই মৃত্যুসংবাদ কতটা বেদনা দেবে মেহাম আঙ্গাকে। তাই আকবর নিজেই গেলেন মেহাম আঙ্গার কাছে। বললেন, আদম খান মহা অপরাধ করেছে। আমি তাকে শাস্তি দিয়েছি। সে মৃত। একটুও অধীর না হয়ে শান্ত কণ্ঠে মেহাম আঙ্গা বলেছিলেন, ‘তুমি ঠিকই করেছো। কিন্তু তারপর আর বেশি দিন বাঁচেননি মেহাম আঙ্গা।’ কিন্তু খায়রুল মঞ্জিলে ঘটে যাওয়া এক রহস্যের কিনারা আজও হল না। নিজাম উদ্দিন দরগা থেকে আসার সময় ঠিক খায়রুল মঞ্জিলের সামনে আকবর হঠাৎ তিরবিদ্ধ হন। এক বিদ্রোহী আফগান যুবক ধরাও পড়ল। তাকে হত্যার নির্দেশ দেওয়া হল। কিন্তু কে আকবরকে হত্যা করতে চেয়েছিল? রহস্য রয়েই গেল! 
6Months ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

পারিবারিক অশান্তির অবসানে গৃহ সুখ ও শান্তি বাড়বে। প্রেমের ক্ষেত্রে শুভ। কর্মে উন্নতি। উপার্জন বৃদ্ধি।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.২৬ টাকা৮৪.৩৫ টাকা
পাউন্ড১০৬.৪৬ টাকা১০৯.১২ টাকা
ইউরো৮৯.৭৬ টাকা৯২.২০ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা