বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
গল্পের পাতা
 

অযাচিত
সুদেষ্ণা বন্দ্যোপাধ্যায়

 

বাসস্ট্যান্ডে লাবণ্য যে কতক্ষণ দাঁড়িয়ে আছে, ভালো লাগছে না। চটির ডগায় একটা পাথরকুচি নাড়াচাড়া করছে। বাসের পাত্তা নেই। অনেকদিন পর বেরিয়েছে ও। এখন লাবণ্যর একটা নতুন পরিচয় হয়েছে সমাজে। বিধবা! শব্দটাতেই কেমন একটা সাদাটে-ফ্যাকাশে ভাব। নিরামিষ গন্ধ। বৈধব্য খানিকটা সমাজের অ্যানিমিয়ার মতন। লাল ছোঁয়াচ আর বাঁচবার ইচ্ছে কমে যাওয়া। নিঃসন্তান, বাঁঝার তকমার সঙ্গে এবার দোসর বিধবা শব্দটি! সবুজের মৃত্যুর পর, সরাসরি সন্তানহীনতার গঞ্জনা থেকে অব্যাহতি মিলেছে। ভিড় জমিয়েছে অন্যরকম কথা... একেবারে একলা থাকা যায়?— এই টাইপের প্রশ্ন। লাবণ্য সত্যিই একলা থাকার জীবনে ঢুকে পড়ল হুড়মুড়িয়ে! না থাকাটাই সবচেয়ে বেশি অস্তিত্বের হদিশ দেয়। নেই তো শুধু অবয়বে সবুজ। ও তো রং হয়ে গাছের পাতায়, ঘাসের গালিচায় জীবন পাবে বার বার এই পৃথিবীতে।
সবুজ চলে গিয়েছে আট মাস হল। সবুজ বসু। খ্যাতনামা বংশীবাদক। হঠাৎ করেই এল সেই অভিশপ্ত দিন... ম্যাসিভ অ্যাটাক। সময় দিল না। না ফেরার দেশের ছাড়পত্র পেল মাত্র দেড় দিনে! একটা অধ্যায়, সমগ্র বেঁচে থাকা অস্তিত্বের অবসান হয়ে গেল। বন্ধ ফ্ল্যাটের একাকিত্বে ভাঙাচোরা লাবণ্য রোজ রাতে ওষুধে ঘুম কেনে। এ যেন তলানিতে পৌঁছনো বেলাশেষের জীবন।
ছিপছিপে গড়নে পঞ্চাশ ছুঁই ছুঁই। এ বয়সে পুরুষ দৃষ্টি বর্জিত শ্রীহীনতাই মুখ্য ভূমিকা পালন করে। এ কম ব্যথাদায়ক নয়। যদিও লাবণ্য দারুণ মেন্টেন করেছে। চুলে পরিপাটি রঙের  মজবুত ঢালাই। ফর্সা কোঁচহীন ত্বক, চোখের কাজল রিমলেস বন্দি। মুখে কোথাও শুকনো নদীখাতের নিষ্প্রাণ বলিরেখার চিহ্নটুকু নেই। সদ্য কচি কলাপাতা রঙের শাড়ি। গাঢ় পাড়ের রংমিলান্তিতে কপালে ঘন সবুজ টিপ। থ্রি কোয়ার্টার লাইট ব্রাউন জ্যাকেট ব্লাউজ। হাতে রুলি বালা, ঘড়ি। সব মিলিয়ে রবীন্দ্রভারতীর পলিটিক্যাল সায়েন্সের লেকচারার লাবণ্য মানুষের থেকে অতিরিক্ত সম্ভ্রম আদায় করে নেয়।
গত আটমাসে লাবণ্য লাল রং আর আমিষ পদ ছেঁটে দিয়েছে নিজের আভা আর স্বাদ থেকে। মন খারাপ থেকেই! যেদিন আবার মনটা ভালো হবে, সেইদিন আবারও আপন করে নেবে আমিষপদ, লাল রং। শুধু বৈধব্যই নয়, যৌবন দেহ ছাড়ছে, এটা বোঝাতেই এ বয়সে পৃথিবীর সব রং ফুরিয়ে আনে মেয়েরা। ইচ্ছের সঙ্গে আপসের রঙে ঘি-চন্দন-ছাই-মাটি সার হয়! তবে রোদ লাগালে কাপড় ভালো থাকে। তাই লাবণ্যও তার রঙিন শাড়িগুলোয় রোদ ঝালায়। ঝালিয়ে নেয় হারানো দাম্পত্যও।
অবশেষে টানা দেড় ঘণ্টা পর বাস পেয়ে দোকানের সামনে এসে নামল লাবণ্য। মাথার ওপর মাছরাঙা নীল আকাশের দেশ, তুলট কোলাজ মেঘের ছন্নছাড়া দল। শরৎ আকাশ ছোঁ মেরে মন তুলে নেয় স্মৃতির ঠোঁটে। দোকানে ঢুকেই বেশ অবাক হল লাবণ্য। বছর বারোর এক কিশোরকে ওরা কাজে রেখেছে। শিশুশ্রম নিষিদ্ধ। তবুও?
হলুদ টি শার্ট আর ঘন নীল জিনসে আশ্চর্য সুন্দর লাগছে ছেলেটিকে। গোলপানা মুখশ্রী, উপর ঠোঁটের চামড়াটা রুক্ষ হচ্ছে। গোঁফ ওঠার পূর্ব মুহূর্ত। রাত শেষে ফিকে ভোরের নিস্তব্ধতা চাপা পড়ে আছে যেন। পরিপাটি আঁচড়ানো চুল। মায়াময় বড় বড় দু’চোখ টানটান। চকচকে কালচে চামড়া। নাম লাট্টু। সব মিলিয়ে ওর প্রতি অদ্ভুত একটা স্নেহ জন্মাচ্ছে লাবণ্যর। অপত্য স্নেহ? হবে হয়তো ওর তো জানা নেই।
বিকেল চারটে হতেই একছুটে নীচে নেমে যায় লাট্টু। দোকানে পুজোর ভিড়। লাট্টুর উদভ্রান্ত আচরণে আজ বেজায় চটেছে মালিক। ওকে আর কাজে রাখতে চায় না। ঝাঁঝালো গলায় বলে চলেছে, ‘পেটের টানে পায়ে ধরে ভিক্ষে করেছিল! কাজ দিয়েছি। চারটে বাজলেই রোজ কোথায় যায় ও? সারাদিন তো সাত চড়ে রা নেই। আজ ফিরুক। বিদেয় করে দেব একবারে। স্ট্রিট ডগের জাত তো! ঘি সহ্য হবে কেন। মোক্তার, (অন্য কর্মচারী) একবার দেখ তো... দেখতে পেলে মারতে মারতে আনবি হারামজাদাকে।’ দম নিচ্ছে রাগে লালমুখো মালিক। দোকান ছেড়ে লাবণ্যও বেরিয়ে আসে। হঠাৎ বিক্ষিপ্ত দৃষ্টির গোচরে জল ছাঁকা রূপোলি মাছের মতোই চকচক করে ওঠে এক অপূর্ব দৃশ্য। চওড়া রাস্তার ধারে বাঁধানো অশ্বত্থতলায় লাট্টু বাঁশি বাজাচ্ছে। বাহ্যিক জ্ঞানে নেই। রাস্তায় ছুটন্ত শহুরে ব্যস্ততা। পাশে এক বৃদ্ধ বাঁশিওয়ালা।
আহা... এগতে এগতে মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছে লাবণ্য। সুরের উপর কী ভীষণ গভীর দক্ষতা এতটুকু ছেলের। এ সুর লাবণ্য বহুদিন ধরে চেনে। এসে দাঁড়ায়। ফ্যাঁসফেঁসে ভাঙা গলায় বাঁশিওয়ালা জিজ্ঞেস করে, বাঁশি কিনবে? লাট্টু বাঁশি থামিয়ে তাকাতেই ভয়ে চমকে ওঠে। শাড়ি প্যালেসের ম্যাডাম। ওকে দেখে ফেলেছে। এবার কাজটা যাবে নির্ঘাত। ভাঙা গলায় ঢোক গিলে লাট্টু বলে, যা...আ...চ্ছি এক্ষুণি... শাড়ি দেখাতে। মানে... এ...এ যাচ্ছি তো...।
জানো ম্যাডাম, আমি না সুর তুললে বাঁশিদাদুর বিক্রি হয় না।! দাদু ছাড়া আমার যে আর কেউ নেই! ম্যাডাম তুমি যাও, আমি এখানে বাঁশি বাজাতে আসি ওদের বোলো না। কামাইয়ের টাকায়, আমাদের দুজনের দু’বেলা ডাল-ভাত জুটে যায়। বলতে বলতেই কেঁদে ফেলে হাউমাউ করে। কান্নার শব্দটা কেমন একলা আহত জন্তুর গোঙানির মতো শোনাচ্ছে। কেঁপে ওঠে লাবণ্য। পৃথিবীতে কতপ্রকার কষ্ট ছিটিয়ে রয়েছে। এই কঠিন শহরে শুরুর আগেই শেষ হয়ে যাচ্ছে ফুটপাতের এক সহজ পাঠের কিশলয় গল্প। ভীষণরকম শিল্পীসত্তা।
ছেলেটির বিপদ বুঝে, ঘন সর চায়ের আস্তরণ রঙা শতছিদ্র ময়লা পাঞ্জাবির কনুই গোটানো হাতা থেকে নীল শিরা ফুলে ওঠা দু’খানা হাত জোড় করে ওঠে, বয়স্ক মানুষটি। কুঁজো খয়াটে অবয়বে কপাল জোড়া ভাঁজে লুকিয়ে থাকা ভবঘুরে ক্লান্তি, হতাশা। এক মুখ পাকা খোঁচা দাড়ি সমেত বৃদ্ধটি গুনগুনিয়ে কেঁদে বলে, ওর দোষ নেই গো, বাচ্চা মানুষ। আমিই বিক্রির লোভে ওকে দিয়ে আশ্চর্য সুন্দর সব সুর বাজিয়ে নিই। আমি ওর রক্তের কেউ নয় গো। মায়া। খালি মায়া। আমারও তো ওর মতো নাতি আছে। মেয়ে, জামাই আমার সব নিয়ে তাড়িয়ে দিলে একদিন। পুরুলিয়ার বাড়ি ছেড়ে কলকাতা এলাম। পেটের টানে এই বাঁশি বাজাতে বাজাতেই লাট্টুবাবুর সঙ্গে আলাপ। খালপাড়ে বড় নালার ধারে বস্তা টাঙানো ঘর। লাট্টুর মা গত বছর ডেঙ্গুতে মরে গেল। চারদিনের জ্বরে। অনাথ ছেলে কী করে একলা ফেলে দিই কও? দিদিমণি, ওকে ক্ষমা করে দাও গো। ও বড় অন্যায় করছে। এভাবে আসা ঠিক না। বুঝাইছি। তবু শুনে না। আমার জন্য আসে। তারচেয়ে বড় কথা, সুর ওকে টেনে আনে। আসলে ও এত ভালো বাজায়, কিছু মানুষ বাজাতে না জানলেও অমন সুরে মজে কেনার আগ্রহ নিয়ে কিনে ফেলে। আমার বিক্রি বেড়ে যায়।
উড়ন্ত বাতাসটা বড্ড ভারী লাগছে। বিস্মিত, হতভম্ব লাবণ্য জিজ্ঞেস করল, এ বাঁশি তুই শিখলি কোথা থেকে? এ সুর কোনও বিক্রেতার কাছে নেই রে।
লাট্টু চোখ মুছে বলে, আমার গুরু সবুজ বসু। চমকায় লাবণ্য। 
লাট্টু বলতে শুরু করেছে, ওই যে নেতাজি স্ট্যাচুর পাশ দিয়ে এগিয়ে একটা বাড়িতে একজন মাস্টারমশাই আসত বাঁশি শেখাতে। নাম সবুজ বসু। আমার মা যে চায়ের দোকানে বাসন ধুতো, সেখান থেকেই আমি লাল চা দিতে যেতাম। ব্যস সেই শুরু।
লাবণ্য শুনতে পাচ্ছে, মনের ভিতরে সবুজের বাঁশির সুর। ভাবছে, যারা বাঁশি বাজায় বা বিক্রি করে সবাই কি হ্যামলিন? না সম্পর্কিত? এখানে উইসার নদী না থাক, ইঁদুরের দল না আসুক, শাড়ি প্যালেসের একঘেয়ে শাড়ির পরত খোলা আর বন্ধের জন্য কাজে আসা লাট্টুও তো শ্যামবাজারের হতদরিদ্র হ্যামিলন। ওর সুরের টান সবুজেরই মতো সকলকে মোহিত করছে। মনে মনে একবুক জীবনের সুর মেশে ওর বাঁশিতে। কিন্তু পৃথিবীতে ক’জন করবে এই কদর? কৈশোরের পকেটে অচল পয়সার মতো ভারী হয়ে পড়ে থাকবে লাট্টুর সুর?
লাট্টু বলেই চলেছে, আমি চা দিয়ে দরজার বাইরে বসে থাকতাম, বাঁশি শেখার লোভে। কী অদ্ভুত, সুন্দর সব সুর তুলত মাস্টারমশাই! আমি, বাইরে থেকে দেখে আর শুনে শিখেছি। তাই তো সবুজ বসু আমার গুরু। হঠাৎ শুনি, উনি নেই! মরে গেল মানুষটা। আমার আর শেখা হল না। একদিন ফেরার পথে বাঁশিদাদুকে দেখি। দরদাম করে আমি বাঁশি কিনতে চাইলে, দাদু আমায় নাতি বলে ডাকে। ফিরিতেই একটা বাঁশি দেয়। সেই শুরু। সবুজ স্যারের মতো ভালো বাঁশি বাজানোর চেষ্টা।
লাবণ্য লাট্টুর মাথায় হাত ছুঁইয়ে বলল, পৃথিবীজোড়া নাম হবে রে তোর। তবে দোকানের মালিক বলেছে আজ ফিরলে তোর কপালে কষ্ট আছে! লাট্টুর শান্ত উত্তর, জানি তো। হঠাৎ একদলা ছাইচাপা ইচ্ছে, কাশির জোরালো দমকের মতো লাবণ্যর গলা থেকে বেরিয়ে আসে, লাট্টু?... এই লাট্টু? আমার সঙ্গে যাবি? আমার কাছে ছেলে হয়ে থাকবি? আমারও তো কেউ নেই রে আর...। তোকে অনেক বড় বংশীবাদক হতে হবে। পড়াশোনা শিখতে হবে। পারবি না?
এই শেষ জীবনে এসে এমন সহজে মা হওয়ার লোভটা যে সামলাতে পারছি না রে! আমি যে তোর সবুজ স্যারের স্ত্রী। তোর মধ্যেও যে সবুজের সুর মিশে আছে। তোকে দেখে আমার যে এই বয়সে নতুন করে ‘মা’ শব্দের বন্ধনে জড়িয়ে পড়তে ইচ্ছে করছে রে...
লাট্টুর চোখ জোড়া বিস্ফারিত। কথারা থমকেছে। হাঁ করা দু’খানি ঠোঁটের ওপর অস্পষ্ট শব্দেরা গুঁতোগুঁতি করছে। কিছু বলতে চেয়েও পারছে না লাট্টু। ঝলমলে শরৎ বিকেলের রোদে ভেসে যাচ্ছে সামনের রাস্তা। আমি তো স্বপ্ন দেখি না। এ স্বপ্ন নয়তো? লাট্টু বিড়বিড় করছে। বাঁশিদাদু ভেজা গলায় কাঁপা শব্দে বলছে, তোমার মতো মানুষও হয়? কখনও দেখিনি তো। সাক্ষাৎ মা দুগ্গা তুমি। 
বহু কথায় অনেকটা সময় কেটে গিয়েছে। লাবণ্য বলল, দোকানের  কাজের আজকেই ইতি করে গুছিয়ে নে সব। কি রে যাবি না?
লাট্টু স্তব্ধতা খানখান করে বলে উঠল, চল ‘নতুন মা’। থতমত লাবণ্য মনে মনে বলে, কে বলে আমি সন্তানহীনা? আজ আমি সত্যি সত্যি মা হলাম। এতদিনের মনখারাপ এক লহমায় উধাও হয়ে যাচ্ছে। কেবল সবুজের না থাকাটাই হু হু করে কাঁদিয়ে দিচ্ছে ওকে।
দোকানে লাট্টু ঢুকতেই লালমুখো মালিক যাচ্ছেতাই করে বলল, তোর কাজের জমানো দু’হাজার টাকা নিয়ে এক্ষুণি দূর হ... আপদ কোথাকার...। অবিচলিত লাট্টু টাকাটা না নিয়ে পায়ে পায়ে এগিয়ে গেল জামদানির শোকেসের দিকে। উজ্জ্বল লাল আর টিয়া সবুজের সংমিশ্রণে সবচেয়ে জমকালো শাড়িটি নিল। একুশশো টাকার একশো টাকা ‘লেস’ করিয়ে, বকেয়ার পুরোটাই মিটিয়ে দিল। মালিক যতটা রাগল, অবাক হল আরও বেশি। তাচ্ছিল্য ভরে জিজ্ঞেস করল, বাব্বা... তোর দেখছি শখ মন্দ নয়? বদ ভিখিরি ছোঁড়া, এত দামি শাড়ি... কার জন্য রে? সে শুনে আপনার কী কাজ? আমার কাজ আজ শেষ বলে, লাট্টু বেরিয়ে আসে। বাইরে অপেক্ষা করছিল লাবণ্য। লাট্টু ছুট্টে এসে প্যাকেটটা লাবণ্যর দিকে এগিয়ে ধরে। লাবণ্যর জিজ্ঞাসা, এটা কী? আমি কিছু তো কিনিনি?
লাট্টু উদ্বিগ্ন, আমি এ  শাড়িটা তোমায় দিলাম। তুমি পরবে না?
বাকরুদ্ধ লাবণ্য... সন্ধে নামছে। মাথার উপর এক থালা চাঁদ। চিকচিকে চোখে শুধু ঘষা অবয়ব। শুনতে পাচ্ছে লাট্টুর কণ্ঠস্বর। চেনা রাস্তাগুলো অচেনা। বয়স্ক গাছের শরীরেও গাঢ় রং ধরছে। সবুজের আভা কমে যাবে আর একটু পর। ও কোনওদিনও এমন জ্যোৎস্নার নীলাভ-সাদার স্নেহময় স্পর্শ দেখেনি। লাট্টু বলতে থাকে, জানো... আমার মায়ের একটাও ভালো শাড়ি ছিল না। মা লাল শিমুল রঙা শাড়ি খুব পছন্দ করত। পথচলতি কারও শাড়িতে এ রং দেখলে আমায় ডেকে দেখাত আর বলত, তুই বড় হয়ে আমায় ঠিক অমন লাল একখানা শাড়ি কিনে দিবি বাবা? কোনওদিন তো পরিনি। আমায় মানাবে না, বল? তবুও পরব... বলতে বলতে হাউহাউ করে কাঁদছে লাট্টু। আমি মাকে দিতে পারিনি গো কিনে। মায়ের এতটুকু ইচ্ছেও মেটাতে পারিনি। মরে গেল গতবছরে আজকের দিনেই। আর দেখ, তোমাকেও পেলাম আজই! তুমি বোধহয় আমার গত জন্মের মা!
লাবণ্য মনের জোরটা আবার ফিরে পাচ্ছে। লাল-সবুজের আভায় নিজেকে সাজিয়ে যখন সবুজের ছবির সামনে ছেলে লাট্টুকে নিয়ে দাঁড়াবে, তখন সবুজ বড় খুশি হবে। লাবণ্য শাড়ির প্যাকেটটা বুকে টেনে বলে, যা, গুছিয়ে নে।
লাট্টু ছুট লাগায়। থাকার মধ্যে একটা পুটুলিতে কিছু জিনিসপত্র, মায়ের ছবিখানা, ক্যাঁচক্যাঁচে আওয়াজের একখানা স্যুটকেসে খেলনায় গোছানো ছোটবেলা, আর এই বাঁশিটা। খুব মনখারাপ করছে ওর। এখানেই ওর হাঁটতে শেখা। বেঁচে থাকা। এখানেই মায়ের গায়ের গন্ধ মিশে থাকবে চিরকাল। ও রোজ এইসময় আসবে বাঁশিদাদুর কাছে। সেইমতো ছাড়পত্র করিয়ে নিচ্ছে নতুন মায়ের কাছে। বাঁশিদাদুর মুখে ভেজা হাসি। লাট্টু ভাবল, এসব অযাচিত স্বপ্ন নয় তো? সজোরে চিমটি কাটল নিজের বাঁ হাতের উপর। উ...উ করে উঠল বাস্তবতা।
অঙ্কন : সোমনাথ পাল

21st     May,   2023
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ