বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
বিকিকিনি
 

ওপার বাংলায় নববর্ষ

বাংলাদেশে কেমন করে উদ্‌যাপিত হয় পয়লা বৈশাখ? ঘুরে এসে বর্ণনায় তাপস কাঁড়ার।

‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি...’ ঢাকায় পা দিয়ে যেন এই গানের কলিগুলো অবচেতনে কানে বেজে উঠল। সোনার বাংলার অপরূপ রূপের শোভা দেখা আমার বহুদিনের ইচ্ছে ছিল। বৈশাখের আহ্বানে মাতোয়ারা বাঙালির বর্ষযাপন উৎসবের সঙ্গী হতেই সেই বার ঢাকায় যাওয়া। 
বাংলা ভাষাভাষী মানুষের কাছে পয়লা বৈশাখ এক অন্য আবেগ। পৃথিবীর যে  প্রান্তেই বাঙালি থাকুক, এই বর্ষবরণের দিনটায় সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে ও শুভেচ্ছা বিনিময়ের আনন্দে তারা ভরিয়ে তোলে। এপার বাংলার পয়লা বৈশাখ তো আমাদের জানা। ওপার বাংলার বর্ষবরণ দেখার ইচ্ছায় উড়ে গিয়েছিলাম সেখানে। 
আগের রাত থেকেই উন্মাদনা ও উত্তেজনায়  মেতে ছিলেন সকলে। উৎসবের আবহ সারা ঢাকা জুড়ে। বন্ধুর আমন্ত্রণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে দেখি আলপনা থেকে মুখোশ তৈরির চূড়ান্ত ব্যস্ততা। রাত পোহালে নতুন বছরের শুরু।  বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর সেজে উঠেছিল রঙের সাজে। রকমারি মুখোশের পসরা। পয়লা বৈশাখের শোভাযাত্রায় রামধনু রঙে ঢেকে গিয়েছিল ঢাকার রাজপথ। আমাদের ভাষা এক। তবু নিজ দেশে পরবাসীর মতো ও দেশেও পর্যটক আমি। অদ্ভুত একটা আবেগ আমাকে মনে করিয়ে দিচ্ছিল আমরা সবাই  বাঙালি। উত্তেজনায় আগের রাতে ঘুম হয়নি। পদযাত্রার উন্মাদনায় ভোর থেকেই রাজপথে মানুষের ঢল নামতে শুরু করে। নতুন বছরকে আহ্বান জানাতে জনতার উচ্ছ্বাস আমাকে বিহ্বল করেছিল। বাঙালির এই আবেগ, আমাকে বাঙালি হিসেবে গর্বিত করে।
পয়লা বৈশাখের সেই ভোরে রাজপথে নেমে পায়ে পায়ে পৌঁছে গিয়েছিলাম রমনা উদ্যানে। সেজে ওঠা উদ্যান চত্বর জুড়ে তখন আট থেকে আশির উপস্থিতি। সকলের নতুন পোশাক, নতুন উদ্যম। বাংলাদেশের চারু ও কারু শিল্প প্রতিষ্ঠান চারুকলা-র শিল্পীদের উদ্যোগ ও  উদ্দীপনায় এই উৎসব আয়োজিত হয়। শিল্পীরা তাঁদের সৃজনশীল মননে এই উৎসবকে বর্ণময় করে তোলেন। 
১৯৬৭ সালে রমনার বটমূলে ছায়ানট যে আনুষ্ঠানিকতা দিয়ে বর্ষবরণ শুরু করেছিল, তা এখনও অমলিন। ১৯৮৯ সাল থেকে  মঙ্গলযাত্রার শুরু। রমনা উদ্যানে ছায়ানটের সঙ্গীত দিয়ে মঙ্গলযাত্রা ও নববর্ষ পালনের সূচনা হয়। অসংখ্য মানুষ যোগদান করেন এই শোভাযাত্রায়। তাঁদের হাতে রকমারি মুখোশের সমাহার। গানে গানে মুখরিত হয়ে ওঠে বৈশাখের তপ্ত আকাশ বাতাস। আনন্দ আবেগ মিলেমিশে একাকার। বর্ণময় শোভাযাত্রা এগয় ক্রমশ। একুশের  ভাষা শহিদ মিনারকে প্রদক্ষিণ করে আবারও  একই পথে ফেরা। 
সর্বধর্মের মানুষের সমবেত আবেগ ও ভালোবাসায় এই পদযাত্রা হয়ে ওঠে সর্বজনীন। ইউনেস্কো এই শোভাযাত্রাকে বিশ্ব ঐতিহ্যের তকমা দিয়ে গর্বিত করেছে বাঙালিকে। পয়লা বৈশাখের এই আয়োজন  সর্বস্তরের জনজীবনকে রঙিন করে তোলে।
নববর্ষের অনুষ্ঠান দেখাটাই মূল উদ্দেশ্য হলেও শহর  ঘুরে দেখার জন্য হাতে আরও কয়েকটা দিন রেখেছিলাম। সকালটা রেখেছিলাম ঢাকেশ্বরী মায়ের দর্শনের আশায়। ঢাকায় রিকশার একটা আন্তর্জাতিক পরিচিতি আছে। তাই অটো নয়, রিকশাতেই যাওয়া মনস্থ করলাম। উঠে বসলাম ইসমাইল চাচার অলংকৃত  রথে। নানা কথায় দু’জনের আলাপ বেশ জমে উঠেছিল। তার মাঝেই চাচা নামিয়ে দেন মন্দিরের কাছে। বাংলাদেশ তথা ঢাকার বিখ্যাত এই মন্দির ঢাকেশ্বরী মন্দির নামে পরিচিত। দেবী এখানে দুর্গা। বিখ্যাত এই সতীপীঠে সতীর মুকুটের মণি পড়েছিল বলে কথিত আছে। ধাতু নির্মিত মূর্তি। 
মন্দির দেখে ঢুঁ মারলাম ঢাকা রামকৃষ্ণ মিশনে। তারপর ধানমণ্ডিতে শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি বিজড়িত জাদুঘর, একুশের শহিদ মিনার, রমনা কালীমন্দির সবই দেখলাম একে একে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে আছে কাজী নজরুলের সমাধি।
এই সফরে ঢাকা থেকেই ফিরে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল। চোখে ও মনে একরাশ ভালো লাগা জড়িয়েছিল অজান্তেই। স্মৃতির ক্যানভাসে সেই ভালোলাগাগুলো আজীবনের সঙ্গী হয়ে  থেকে যাবে। 
কীভাবে যাবেন: সড়ক, ট্রেন  ও আকাশপথে যাওয়া যায় বাংলাদেশ। 

13th     April,   2024
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ