বিকিকিনি

ভিয়েতনামের হা-লং উপসাগরে

শরতের এক স্নিগ্ধ উজ্জ্বল অপরাহ্ণে ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয় শহরে পৌঁছে পরের দিন সকালেই বেরিয়ে পড়লাম শহর থেকে একশো পঁয়ষট্টি কিলোমিটার দূরে অবস্থিত হা-লং বে বা হা-লং উপসাগরের পথে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের নিরিখে যে অঞ্চলটির খ্যাতি আজ জগৎজোড়া। যার অকৃপণ সৌন্দর্যের টানে প্রতি বছরই এখানে ছুটে আসেন সারা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের হাজার হাজার ভ্রমণপিপাসু পর্যটক। উল্লেখ করা যেতে পারে ১৯৯৪ সালে ইউনেস্কো একে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ হিসেবে স্বীকৃতি দান করে।
জমজমাট হ্যানয় শহরটি থেকে হা-লং উপসাগর প্রায় তিন ঘণ্টার পথ। বাসে করে যেতে যেতেই তরুণ গাইডটি জানান, ছবির মতো সাজানো এই উপসাগরটিতে ছড়িয়ে রয়েছে প্রায় দু’হাজারের মতো একশিলা বিশিষ্ট পাথরের স্তম্ভ যার অধিকাংশই জনবসতিহীন। আর সামান্য যে কয়েকটিতে জনবসতি আছে তাদের বেশিরভাগই মৎস্যজীবী বা জেলে সম্প্রদায়ের।
উপসাগরের কাছে এসে বাস থেকে নামতেই সামনে পড়ে একটি মুক্তোর অলঙ্কার বিপণি। এটি আয়তনে যেমন বড়, তেমনই ঝাঁ চকচকে। এখানে সুন্দরী ভিয়েতনামি কন্যারা উপসাগর থেকে সংগ্রহ করে আনা জীবন্ত ঝিনুক থেকে মুক্তো বের করে কীভাবে সেই মুক্তো দিয়ে নানারকম অলঙ্কার তৈরি করা হয়, তা দেখান। পর্যটকরা ইচ্ছে করলে এখান থেকে মুক্তোর অলঙ্কার কিনতে পারেন। 
কিছুক্ষণ বিপণিটি ঘুরে দেখার পর আমরা সোজা চলে আসি জেটি ঘাটে। সেখানে তখন পর্যটকদের প্রমোদ ভ্রমণে নিয়ে যাওয়ার জন্য অপেক্ষায় রয়েছে সারি সারি লঞ্চ। গাইডের নির্দেশমতো একটিতে উঠে পড়ি। ভিতরে ঢুকতেই ওয়েলকাম ড্রিংক দিয়ে অভ্যর্থনা জানান এক তরুণী। ভিতরে সুন্দর আরামদায়ক বসার ব্যবস্থা। পর্যটকরা যাতে খেতে খেতেই এখানকার অতুলনীয় সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন, তাই প্রত্যেকের সামনেই সুদৃশ্য ডাইনিং টেবল।
খানিক বাদে খাবার আসে। সুস্বাদু চালের ভাত, সঙ্গে স্যালাড, দু’রকম সামুদ্রিক মাছ, চিকেন কষা, চাটনি, পাঁপড় ও ফল। লঞ্চ তখন ধীরে ধীরে চলতে শুরু করেছে।
আমরাও ততক্ষণে প্রকৃতির খেয়ালি সৌন্দর্যে ভরা হা-লং উপসাগরের অপরূপ রূপ দেখে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছি। উপসাগরের বুকে ভাসতে ভাসতে দেখি পুরো উপসাগর জুড়ে জলের উপর মাথা তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছে বড় বড় পাথরের চাঁই। এগুলির বেশ কয়েকটি বৃক্ষহীন হলেও বেশিরভাগ পাথরস্তম্ভের গায়েই সবুজের ছড়াছড়ি। আপনমনে পাখিদের ওড়াউড়ি দেখতে দেখতে স্তম্ভগুলির পাশ দিয়ে এগতে থাকি আমরা। আমাদের চোখের সামনে দেশ বিদেশের পর্যটকে বোঝাই আরও বেশ কয়েকটি লঞ্চ তখন ভেসে চলেছে উপসাগর জুড়ে।
হঠাৎ দূরে তাকাতেই দেখি একটা অঞ্চলে রংবেরঙের ছোট ছোট রবারের নৌকোয় একদল পর্যটক মেতে উঠেছেন কায়াকিংয়ে। আমার সহযাত্রীদের কেউই কায়াকিংয়ে আগ্রহী না হওয়ায় লঞ্চ চলল এগিয়ে। বেশ খানিকক্ষণ চলার পর এসে থামল একটা বড় দ্বীপের সামনে। এখানেই রয়েছে একটি বিখ্যাত চুনাপাথরের গুহা। এটি আয়তনে এত বড় যে একসঙ্গে একহাজার পর্যটকও দাঁড়াতে পারেন অনায়াসে।
শুনলাম, ১৯০১ সালে ভিয়েতনাম যখন ফরাসি অধিকারে ছিল, সেই সময় তারাই দীর্ঘদিন লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকা এই গুহাটি আবিষ্কার করে এবং এটির নাম দেয় ‘সারপ্রাইজিং কেভ’। যদিও হা-লং উপসাগরের একপ্রান্তে অবস্থিত এই প্রাকৃতিক গুহাটিকে সাজিয়ে-গুছিয়ে দর্শন উপযোগী করা হয় ১৯৯৩ সালে। তারপর থেকে পর্যটকরা এখানে প্রবেশের সুযোগ পান ।
টিকিট কেটে ভিতরে ঢুকি আমরাও। আমাদের বিস্মিত চোখের সামনে তখন প্রকৃতির আপন খেয়ালে গড়ে ওঠা অনির্বচনীয় এক শিল্পসুষমা। প্রায় তিরিশ মিটার উচ্চতার এই গুহাটির চারপাশে অপরূপ ভাস্কর্যের ছড়াছড়ি। দেখে মনে হয় যেন রামকিঙ্করের মতো কোনও নিপুণ জীবনশিল্পী তাঁর অনুপম জাদু হাতের ছোঁয়ায় ছেনি-হাতুড়ির ঘায়ে ফুটিয়ে তুলেছেন অপরূপ শিল্পকর্মগুলি। 
বেশ খানিকক্ষণ গুহাটির ভিতরে কাটিয়ে বেরিয়ে আসি বাইরে। যেদিকে তাকাই সেদিকেই চোখে পড়ে উপসাগরের ভিতরে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে থাকা ছোট-বড় পাথরের সারি। আর সেগুলির পাশ দিয়ে এঁকেবেঁকে এগিয়ে চলতে থাকে পর্যটকদের লঞ্চ। সত্যিই সে এক অনির্বচনীয় দৃশ্য। দেখে মনে হয় দিগন্তজোড়া এই স্বর্গীয় সুষমার জন্যই হা-লং বে অনন্য।
আপন মনেই এই বিশ্বের একপ্রান্তে ছড়িয়ে থাকা এক অপরূপ সৌন্দর্য ভাণ্ডারের দিকে অপলকে চেয়ে থাকি। চমক ভাঙে গাইডের ডাকে। এবার আমাদের ফিরতে হবে। অস্তগামী সূর্যের শেষ রশ্মিটুকু তখন ছড়িয়ে পড়েছে হা-লং উপসাগরের জলে, শিলাস্তম্ভের মাথায় মাথায়।  
ফিরতি পথে লঞ্চ ছাড়ে। পাথরস্তম্ভগুলির পাশ দিয়ে এগতে এগতে হঠাৎ শুনি লঞ্চের একপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আমার এক সহযাত্রী বন্ধু আপন মনে গাইছেন, ‘মধুর তোমার শেষ যে না পাই, প্রহর হল শেষ/ ভুবন জুড়ে রইল লেগে আনন্দ আবেশ/ দিনান্তের এই এক কোনাতে সন্ধ্যা মেঘের শেষ সোনাতে/মন যে আমার গুঞ্জরিছে কোথায় নিরুদ্দেশ।’ 
কীভাবে যাবেন: কলকাতা থেকে ভিয়েতনামের সরাসরি বিমান পরিষেবা রয়েছে। বিমানবন্দর থেকে গাড়ি ভাড়া করে, ট্যাক্সিতে বা বিভিন্ন রুটের বাসে ঘোরা সম্ভব।  
ছবি: লেখক
5Months ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

পারিবারিক অশান্তির অবসানে গৃহ সুখ ও শান্তি বাড়বে। প্রেমের ক্ষেত্রে শুভ। কর্মে উন্নতি। উপার্জন বৃদ্ধি।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.২৬ টাকা৮৪.৩৫ টাকা
পাউন্ড১০৬.৪৬ টাকা১০৯.১২ টাকা
ইউরো৮৯.৭৬ টাকা৯২.২০ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা