বিকিকিনি

কারলা গুহা আর একবীরা মন্দির

সবুজ অরণ্যে ঢাকা কারলা গুহা। প্রকৃতি সেখানে মনোরম। তার বিপরীতে আবার একবীরা মাতার মন্দির। দুইয়ে মিলে অন্যরকম নিসর্গ। তারই বর্ণনায় মালতী ভট্টাচার্য।

পুনে থেকে লোনাভেলা যাওয়ার পথেই পড়বে  কারলা গুহার প্রবেশপথ। প্রায় ৩৬৫টি   সিঁড়ি ভেঙে  যেতে হবে কারলা গুহার কাছাকাছি সুবিশাল চত্বরে। আর এই গুহামুখের অপরদিকে একবীরা মাতার মন্দির। পুনে থেকে আমরা স্বামী-স্ত্রী এবং দাদা-বৌদির জুটি চলে এসেছি, দেবী দর্শন করে কারলা গুহা দেখব বলে। পায়ের ব্যথায় কাবু আমি। হাতের লাঠিটিই ভরসা। প্রথমে খানিক দমে গেলেও এগিয়ে চললাম । মানুষ চলতে চলতে পাথরের ধাপগুলিকেও চলার উপযোগী মসৃণ করে দিয়েছে। রোদ পড়ে রীতিমতো চকচক করছে তা। চারদিকের অপরূপা প্রকৃতি নজরে পড়ছে চলার পথে। দূরে সবুজ অরণ্যে ঢাকা পাহাড়ের সঙ্গে লুকোচুরি খেলায় মেতেছে সাদা মেঘের দল! আকাশের নীল রং চুঁইয়ে পড়েছে মেঘের গায়ে। স্বপ্নের মতো এক আবহাওয়া সৃষ্টি হয়েছে। ইতিউতি ঝরনার জল  ক্ষীণ ধারায় বয়ে যাচ্ছে। বর্ষায় এইসব ঝরনার জলধারা দুরন্ত গতিতে নেমে আসে পাহাড় থেকে। আমরা ততটা না দেখলেও যা দেখলাম তাতেই বিভোর হয়ে পৌঁছে গেলাম কারলা গুহা চত্বরে। 
প্রথমেই দেবী দর্শন। একবীরা মাতার মন্দির। যার অন্য পরিচয় বিষ্ণুর দশম অবতার পরশুরামের মা হিসেবে।  একবীরা মাতা বা রেণুকা দেবীর মন্দির রয়েছে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে।  পুরাণ অনুযায়ী, অজ্ঞাতবাস পর্বে পাণ্ডবদের দ্বারা নির্মিত হয়েছিল এই মন্দিরটি। দেখে মনে হল, সাম্প্রতিক কালে নতুন করে গড়ে তোলা হয়েছে এই মন্দিরটি।  নবরাত্রি ও চৈত্র নবরাত্রিতে প্রচুর ভক্তের সমাগম হয় মন্দির প্রাঙ্গণে। সাধারণ দিনেও ভিড় যে খুব কম থাকে তা কিন্তু নয়। আমরাই তো বেশ বড় লাইন ঠেলে দেবী দর্শন করতে পেরেছিলাম। ছড়ানো মন্দির চত্বরে একদল লোক, একটি বছর চারেকের শিশুকে পালকির মতো দোলনায় করে নিয়ে বাজনা বাজিয়ে নাচ গানে মেতে রয়েছে। শিশুটির গলায় গাঁদা ফুলের মালা। আশ্চর্য ব্যাপার, শিশুটি একেবার চুপচাপ! অবাক হলেও বাচ্চাটির এই চুপ করে থাকা স্বাভাবিক কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন করতে রুচিতে বাধল। মনকে স্তোক দিলাম, কী জানি, হয়তো সে এই উৎসব উপভোগ করছে!  
লাইন চলতে চলতে ভক্তদের কথাও এগতে থাকে। নানা তথ্য জানা যায় সেই কথোপকথন থেকে। যেমন আমরা জানলাম, এখানে এখনও পশুবলির চল রয়েছে।  ছাগবলি দেওয়া হয় উৎসবে-অনুষ্ঠানে। শিশুর দীর্ঘায়ু কামনা করে এই মন্দিরে মায়ের পুজো দেন অনেকেই। লাইন ধরে এগিয়ে যাওয়ার সময় নজরে পড়ল, কাছা দিয়ে শাড়ি পরা এক  মহিলা মুখে সাপের মতো হিসহিস শব্দ তুলে লাইনের সবাইকে টপকে চলে গেল সামনের দিকে। মাথার ওপর ধরা ঝুড়িতে দেবীর  জন্য শাড়ি, সিঁদুর, আলতা। হয়তো ভিড় এড়ানোর জন্য এই   কৌশল অবলম্বন করেছেন তিনি! অবশেষে একেবারে দেবীর সমুখে চলে এলাম। পেতলের দেবীমূর্তির সামনে ভক্তরা রুপোর রেকাবিতে সুপারি দিয়ে, দেবীর সদর্থক উত্তরের অপেক্ষায় থাকেন। ডান দিকে পড়লে হ্যাঁ বাচক, বামে পড়লে না বাচক উত্তর হিসেবে ধরা হয়। বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলাচলে থেকে, দেবী দর্শন সাঙ্গ করে আমরা চলে এলাম কারলা গুহার প্রবেশদ্বারে।   বলা হয়, যিশুখ্রিস্টের জন্মেরও বেশ কিছু আগে তৈরি বৌদ্ধ গুহা কারলা। যা প্রসিদ্ধি পেয়েছে হীনযান বৌদ্ধ গুহা হিসেবে। বিশাল হলঘরের মতো গুহার ভেতরের দেওয়ালে কারুকার্য অপূর্ব! ভারতের যতগুলো চৈত্য গুহা রয়েছে, তার মধ্যে বৃহত্তম এই কারলা  গুহা। প্রবেশপথের সমুখে একটি স্তম্ভের উপর তিনটি সিংহের  অপরূপ মূর্তি নজরে পড়ল যার শিল্প সুষমার  জুড়ি মেলা ভার। গুহার অন্দরে ৩৭টি স্তম্ভ। সেগুলির মাথায় নতজানু হয়ে রয়েছে হাতি, নারী পুরুষের যুগল মূর্তি ইত্যাদি। নর্তক নর্তকী, মানব মানবীর অপরূপ শৈল্পিক আবেদন দেখে মুগ্ধ আমরা। পঞ্চম শতকের বুদ্ধমূর্তি বিরাজ করছে গুহার হল ঘরটিতে।  সেগুন কাঠে গড়ে তোলা অপূর্ব ছাদ দেখেও বিস্মিত হলাম।  অশ্বক্ষুরাকৃতি জানালা দিয়ে সূর্যালোক প্রতিফলনের ব্যবস্থা। সব দেখছি আর অবাক লাগছে।  গুহার ভিতরে ছবি তোলা বারণ। কিন্তু তোরণের কাছে ছবি তোলার নিষেধ নেই। দ্বারে প্রহরী যিনি ছিলেন, তিনিই এগিয়ে এসে ফোটো তুলে দিলেন। কারলা গুহাতে আরও দশটি বিহারধর্মী গুহা রয়েছে। তার অনেকগুলি নষ্টও হয়ে গিয়েছে। প্রবেশপথেই সেকথা লেখা আছে। দোতলা এবং তিনতলায় উঠে কিছু অংশ  দেখে নিলাম। মহারাষ্ট্র পর্যটন দপ্তরের উদ্যোগে ‘রক ক্লাইম্বিং কোর্স’ শিক্ষার আসরের আয়োজন করা হয় এখানে। লাগোয়া রিসর্টের কাছে অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদে জল বিহারের ব্যবস্থাও গড়ে তোলা হয়েছে। মনের মণিকোঠায় এই কারলা গুহার স্মৃতি সঞ্চিত রেখে ফিরে চলার পালা আমাদের।     
কীভাবে যাবেন: কলকাতা থেকে মুম্বই বিমান বা ট্রেনে পৌঁছে সেখান থেকে গাড়ি বা সরকারি বাসে চড়ে কারলা গুহা যেতে পারেন। সরকারি বাস নিলে ভাড়া মোটামুটি ৮৫০ টাকা থেকে ১২৫০ টাকার মধ্যে। সময় লাগবে সাড়ে চার ঘণ্টা। গাড়িতে গেলে ঘণ্টা দুয়েক সময় লাগবে। ভাড়া মোটামুটি ২৫০০ টাকা। এছাড়া কলকাতা থেকে পুনে পৌঁছে সেখান থেকেও বাস বা গাড়িতে যেতে পারেন। বাসের ভাড়া মোটামুটি ৭৫০ থেকে ১১০০ টাকা। গাড়ি ভাড়া ১৬০০ 
টাকা থেকে শুরু।    
ছবি: ট্রিপঅ্যাডভাইসরের সৌজন্যে
6Months ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

পারিবারিক অশান্তির অবসানে গৃহ সুখ ও শান্তি বাড়বে। প্রেমের ক্ষেত্রে শুভ। কর্মে উন্নতি। উপার্জন বৃদ্ধি।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.২৬ টাকা৮৪.৩৫ টাকা
পাউন্ড১০৬.৪৬ টাকা১০৯.১২ টাকা
ইউরো৮৯.৭৬ টাকা৯২.২০ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা