বিকিকিনি

চলুন যাই চকদিঘি

এ যেন অচেনা এক গ্রাম। চকদিঘি গ্রামের সিংহ রায় পরিবারের পুজোর জমক আজও অটুট। সেই গল্প শোনালেন তাপস কাঁড়ার।

আজ সপ্তমী। গোটা শহর জুড়ে আলোর রোশনাই। মাইকে গান বাজছে। বাচ্চা বুড়ো সকলেই সেজেগুজে পুজোমণ্ডপে হাজির। এমন দিনে শহরের গতানুগতিক চিত্রে যদি মন না ভরে তাহলে একটু গ্রামের পথে বেরিয়ে পড়ুন। যেখানে প্রকৃতি আর পুজো দুটোই বেশ রোমান্টিক। কোনও এক অচীন গাঁয়ে  সারাদিন ঘোরাঘুরি করে আবার শহরের আলো ঝলমলে ব্যস্ততায় ফিরে আসবেন না হয় সন্ধেবেলা।  দেখবেন মন ফুরফুরে হবে। দল বেঁধে গাড়ি নিয়ে বা ট্রেনে চড়ে বেড়ানোর এমনই এক ঠিকানা চকদিঘি। পূর্ব বর্ধমানের সবুজে মোড়া এক গ্রাম। পথের দু’পাশে সবুজ খেতের মাঝে থোকা থোকা সাদা কাশ বাতাসে দুলছে অবিরাম। কোনও বাড়ির মাটির দাওয়ায় টুপটাপ ঝরে পড়ছে কমলা টিপের মতো শিউলি। দূরে কোনও গাছে হয়তো অবিরাম ডেকে চলেছে চোখ গেল।  মাথার উপর নীল আকাশ, সাদা মেঘের ভেলা সাজিয়ে শরতের আদর্শ ব্যাকড্রপ আঁকবে। আর পুজোর আবেশ ছড়িয়ে পড়বে আপনার মনে।
এই চকদিঘিতেই আছে সিংহ রায় পরিবারের বাগানবাড়ি। যেখানে শহরের চাকচিক্য নেই, কিন্তু  বনেদিয়ানা  অতীতের আভিজাত্যকে বুকে ধরে আজও দাঁড়িয়ে। বর্ধমানের জামালপুর-তারকেশ্বর লাইনে এই বাগানবাড়ি। গাছগাছালিতে ঘেরা  একটা ভাঙা পাঁচিল আর গেটের দুইপাশে দু’টি স্তম্ভ— এই নিয়েই জমিদার বাড়ির প্রবেশ পথ। কিন্তু গেট দিয়ে ঢুকে মেঠো পথ ধরে একটু এগিয়ে গেলেই অপেক্ষা করে আছে বিস্ময়। চকমেলানো বড় গাড়ি বারান্দা-সহ বাগানবাড়ি। বাড়ির সামনে অষ্টকোণ ফোয়ারা। চারপাশে যত দূর চোখ যায় শুধু সবুজ আর সবুজ। তার মাঝে পুজোর আয়োজন। ঢাকের বাদ্যিতে গমগম করছে চারদিক। 
যত দূর জানা যায় প্রায় সাড়ে তিনশো বছর আগে এই রাজবংশের সূচনা হয়েছিল। একশো বিঘা জমির উপর তাদের বসত বাড়িটি তৈরি হয়েছিল। সেখানেই আজ বাগানবাড়ি ও সেই সংলগ্ন এলাকায় দুর্গাপুজোর আয়োজন করা হয়। 
সবুজ মাঠের উপর প্রথম  নজর কাড়ে বাগানবাড়িটি। এখন যেখানে বাগানবাড়ির অবস্থান জমিদারি আমলে সেখানেই ছিল সিংহ রায় পরিবারের বৈঠকখানা। ফরাসি স্থপতি দ্বারা নির্মিত  বিশাল এই বাড়ির গাড়ি বারান্দাটিকে ধরে রেখেছে ছটি দীর্ঘ স্তম্ভ। প্রথম দর্শনেই ভালো লেগে যায়। এই বাড়ির সঙ্গে অনেক স্বনামধন্য মানুষের স্মৃতি জড়িয়ে আছে। লর্ড কার্জন, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, সত্যজিৎ রায়, সলমন রুশদি সহ আরও অনেকেরই পায়ের ধুলো পড়েছে সিংহ রায়দের জমিদার বাড়িতে। অনেক সিনেমার শ্যুটিংও হয়েছে এখানে।  
বাগানবাড়ির আঙিনা ছাড়িয়ে পায়ে পায়ে এগিয়ে চলুন অন্দরমহলের দিকে। বাঁ দিকে একটা বাড়ির ধ্বংসাবশেষ চোখে পড়বে। ভিতরে প্রবেশ করতে দ্বিধা হবে। সাপখোপ নেই তো? ভিতরে ভাঙাচোরা দেওয়াল। তাই বলে উপেক্ষা করবেন না, ওই ভাঙা ইটের গায়েই বহু গুণিজনের হাতের ছোঁয়া লেগে রয়েছে। পুকুরের ধারে এই বাড়িটির নাম ছিল জলমহল। সিংহ রায়দের বাড়ি এসে বিদ্যাসাগর এই জলমহলে থাকতেন বলে শোনা যায়। এই বাড়িটির নীচে ছিল  লাইব্রেরি। বিদ্যাসাগর মহাশয়ের নাকি অনেক রাত সেই লাইব্রেরিতেই কেটেছে। জলমহল থেকে পায়ে পায়ে খানিক এগিয়ে পাবেন ঠাকুরদালান ও বিশাল আটচালা। পুজোর সময় জমজমাট হয়ে ওঠে  সিংহ রায় বাড়ির এই ঠাকুরদালানটি। ঠাকুরদালানের সামনে লম্বা লম্বা থামের উপর টিনের চাল দেওয়া আটচালা। এক সময় এই আটচালায় মোষ ও ছাগ বলি হতো। হাঁড়িকাঠ বসানোর  সেই জায়গা সেদিনের স্মৃতি নিয়ে আজও বর্তমান। আটচালার দুই পাশে ছিল ভাঁড়ার, ভিয়েন বসানো হতো সেখানে। তারপরেই খাবার জায়গা। আটচালা থেকে বেরিয়ে পাবেন শিব মন্দিরের চত্বর। এই চত্বরের মধ্যে আছে আটটি শিব ও নারায়ণ মন্দির। মন্দিরগুলি টেরাকোটা কাজে সাজানো ছিল। এখন অবশ্য সেভাবে কোনও কাজই দেখা যায় না। একটা শিব মন্দিরেই  শুধু টেরাকোটার কাজের নিদর্শন চোখে পড়ে। আর নারায়ণ মন্দিরে প্রভু নেই।  পাঁচিল তুলে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে গর্ভগৃহ। দুই বাড়ির পুজো নিয়ে স্থানীয় মানুষদের উৎসাহের শেষ নেই। জাতি ধর্ম  ভুলে সকলেই মেতে ওঠে পুজোর আনন্দে। এই  গ্রামের পুজোর রূপ রস গন্ধ মেখে সারাটা দিন কাটিয়ে আবার ফিরে চলা শহরের কোলাহলে। পুজোর অন্য রোশনাইয়ের হাতছানি।
কীভাবে যাবেন: কলকাতা থেকে গাড়িতে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে ধরে চলে আসতে পারেন চকদিঘি। ট্রেনে তারকেশ্বর, মশা গ্রাম বা মেমারি নেমে বাসেও চলে আসা যায় চকদিঘি।                      ছবি: লেখক 
9Months ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

পারিবারিক অশান্তির অবসানে গৃহ সুখ ও শান্তি বাড়বে। প্রেমের ক্ষেত্রে শুভ। কর্মে উন্নতি। উপার্জন বৃদ্ধি।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.২৬ টাকা৮৪.৩৫ টাকা
পাউন্ড১০৬.৪৬ টাকা১০৯.১২ টাকা
ইউরো৮৯.৭৬ টাকা৯২.২০ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা