বিকিকিনি

টেরাকোটার গ্রাম আঁটপুর

সে       কোন কালের কথা। ঠাকুর শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব, মা সারদা ও স্বামী বিবেকানন্দ পদার্পণ করেছিলেন এই গ্রামে। যদিও শত শত বছরের পুরনো টেরাকোটায় সমৃদ্ধ গ্রামটি পর্যটন-মানচিত্রে একরকম উপেক্ষিতই— হুগলি জেলার হরিপাল ব্লকের অন্তর্গত আঁটপুরের কথা বলছি। এখানে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা বেশ অন্যরকম।
 আশপাশে কোনও হোটেল নেই। তাই যাওয়ার আগের দিনই মিশনের মহারাজকে ফোন করে ভোগান্ন গ্রহণের ব্যবস্থা করে রেখেছিলাম। আগের রাতে বেশ খানিকটা বৃষ্টি হওয়ায় আবহাওয়া ভ্রমণের পক্ষে আরও বেশি করে অনুকূল হয়ে উঠল। প্রথমেই এসে পৌঁছলাম আঁটপুর সংলগ্ন দ্বারহাট্টা গ্রামে। আমাদের গাড়ি এসে দাঁড়াল রাজরাজেশ্বর মন্দিরের সামনে। ১৭২৮ খ্রিস্টাব্দে অপূর্বমোহন সিংহরায় টেরাকোটা ভাস্কর্যে শোভিত এই মন্দির নির্মাণ করেন। পোড়ামাটির ফলকে রাম-রাবণের যুদ্ধ, কৃষ্ণের নৌকাবিলাসের কারুকাজ দেখে আপনার মন মুগ্ধ হতে বাধ্য। কাছেই ১১২৬ বঙ্গাব্দে নির্মিত মাতা দ্বারিকাচণ্ডী মন্দির। মাতা দ্বারিকাচণ্ডী চতুর্ভুজা দুর্গা।
এরপর আমরা চলে এলাম পার্শ্ববর্তী আঁটপুর গ্রামে। ইসলামি আমলে জমিদার আটুর খাঁয়ের জমিদারি ছিল এখানে। তাঁর নাম থেকেই গ্রামের নাম আঁটপুর। আমরা রামকৃষ্ণ-প্রেমানন্দ আশ্রম প্রাঙ্গণে গেলাম। গাছগাছালি ঘেরা শান্ত, নিরিবিলি গ্রাম্য পরিবেশ মঠপ্রাঙ্গণে নিয়ে এসেছে অপার্থিব অনুভূতি। প্রথমেই চোখে পড়ল পবিত্র ধুনিমণ্ডপ, যা শ্রীরামকৃষ্ণ সংঘের ইতিহাসে এক মাইলফলক রচনা করেছে। ১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দের ২৪ ডিসেম্বর  নরেন্দ্রনাথ সহ শ্রীরামকৃষ্ণর অন্যান্য সন্তান ধুনি জ্বালিয়ে ধ্যানান্তে অগ্নিশিখাকে সাক্ষী রেখে সংসারত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন। ধুনিমণ্ডপের অন্য পাশে ঐতিহ্যমণ্ডিত দুর্গামণ্ডপ। মায়ের পুজো একসময় বন্ধ হয়ে গেলেও বাবুরাম মহারাজের মা দেবীর স্বপ্নাদৃষ্টা হয়ে সারদা মায়ের অনুমতিক্রমে ১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দে পুনরায় পূজার্চনা শুরু করেন, যা আজ পর্যন্ত রামকৃষ্ণ মঠ কর্তৃক মহাসমারোহে অনুষ্ঠিত হয়ে চলেছে। দুর্গামণ্ডপের ঠিক বিপরীতে বাবুরাম মহারাজের বংশের গৃহদেবতা শ্রীশ্রী লক্ষ্মী-নারায়ণ মন্দির। বাবুরাম মহারাজের পৈতৃক বসতবাড়ির দোতলায় উঠে ঠিক বাঁ দিকের ঘরটিই স্বামী বিবেকানন্দর শয়নকক্ষ। মঠ কর্তৃপক্ষর দেওয়া তথ্যানুযায়ী স্বামীজী তিনবার আঁটপুরে পদার্পণ করেন। তখন তিনি ওই শয়নকক্ষে অবস্থান করেন। অপূর্ব ধ্যানগম্ভীর এক পরিবেশ। একটু এগিয়েই মা সারদামণির শয়নকক্ষ। এখানে মায়ের অধিষ্ঠান হয়েছিল দু’বার। শ্রীরামকৃষ্ণর অন্যতম লীলা পার্ষদ স্বামী প্রেমানন্দ মহারাজ অর্থাৎ বাবুরাম ঘোষের বাটী দর্শন করে গ্রাম্য সুরম্য প্রাকৃতিক পরিবেশকে সঙ্গী করে আমরা চলে এলাম স্বামী প্রেমানন্দ মহারাজের জন্মস্থানের উপর নির্মিত রামকৃষ্ণ মঠের মূল গর্ভগৃহ মন্দিরে। এখানে রামকৃষ্ণদেব, মা সারদা ও বিবেকানন্দ নিত্য পূজিত হন। অনতিদূরে সুবিস্তৃত ‘নরেন্দ্র সরোবর’। স্বামী বিবেকানন্দ এখানে স্নান করতেন, তাই এরূপ নামকরণ।
শহুরে কোলাহলবর্জিত পল্লিগ্রামে কেবলই সবুজের সমারোহ। রৌদ্রছায়ার লুকোচুরি খেলা দেখতে দেখতে চলে এলাম সন্নিকটবর্তী মিত্র কমপ্লেক্সে। স্থানীয় এক গ্রামবাসী বাঘ (মতান্তরে সিংহ) দরজা ঘেরা এই প্রাঙ্গণ নির্দেশ করে জানালেন যে তৎকালীন সময়ে মিত্রবংশীয় মহিলারা যখন এই প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতেন, তখন সেখানে বাইরের কোনও ব্যক্তির প্রবেশাধিকার ছিল না। তাই এই চৌহদ্দি করা হয়েছিল। এই প্রাঙ্গণে ১৭৫১ থেকে ১৭৭৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত নির্মিত টেরাকোটার কারুকার্যখচিত পঞ্চশিবের মন্দির— গঙ্গাধর, বাণেশ্বর, ফুলেশ্বর, জলেশ্বর ও রামেশ্বর। তবে মন্দিরগুলির ভগ্নদশা মনকে বড়ই ব্যথিত করে তুলল। মহাদেবের মন্দিরের পাশেই এই প্রাঙ্গণে সেই আমলে স্থাপিত দোলমঞ্চ ও রাসমঞ্চ স্বমহিমায় বিরাজমান।
এরপর আমরা শ্রীশ্রীরাধাগোবিন্দ জিউয়ের মন্দিরে প্রবেশ করলাম। এটি পশ্চিমবঙ্গের দ্বিতীয় বৃহত্তম ও উচ্চতম টেরাকোটার মন্দির। মন্দিরের টেরাকোটা শিল্পে ভগ্নদশার কারণে সবসময় প্রবেশের অনুমতি পাওয়া যায় না। লেখালেখির ব্যাপারে ছাড়পত্র থাকায় ভিতরে প্রবেশের ছাড়পত্র পেয়েছিলাম। ১৭৮৬ খ্রিস্টাব্দে বর্ধমান রাজার দেওয়ান ও স্থানীয় জমিদার কৃষ্ণরাম মিত্র নির্মিত এই দেবালয় বাংলাদেশের বিশিষ্ট আটচালা রীতিতে তৈরি।  প্রবেশপথের থামে ও দেওয়ালে পোড়ামাটির ফলকে কৃষ্ণলীলা, রাসলীলা, ভীষ্মের শরশয্যা, পর্তুগিজ জাহাজের দৃশ্য আজও পর্যটকদের বিমোহিত করে। গর্ভগৃহের বেদিতে কারুকার্যখচিত ধাতুনির্মিত সিংহাসনের উপর শ্রীরাধা, শ্রীগোবিন্দ ও নাড়ুগোপালের সুন্দর বিগ্রহ। মন্দিরপ্রাঙ্গণে তৎকালীন নীরব ইতিহাসের সাক্ষী নহবতখানা আর খাজাঞ্চিখানা।
রাধাগোবিন্দ জিউয়ের মন্দিরের ফটকের বাইরে প্রায় পাঁচ শতাব্দী প্রাচীন বকুল গাছ। কথিত আছে যে, এই বৃক্ষতলে বসেই রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব ‘যত মত তত পথ’ মতের প্রবর্তন করেন।
একটু দূরেই প্রায় তিনশো বছরের অধিক পুরনো কাঁঠাল কাঠ ও খড় দিয়ে তৈরি চণ্ডীমণ্ডপ। ওল্টানো নৌকার আকারে  প্রায় এক লক্ষ টাকা ব্যয়ে নির্মিত দু’টি চণ্ডীমণ্ডপের একটি পরবর্তীকালে ঝড়ের আঘাতে ধুলিসাৎ হয়ে যায়। এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে, এটি এশিয়ার বৃহত্তম ও পশ্চিমবঙ্গের দারুশিল্পের অর্থাৎ খড় ও কাঠের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নিদর্শন। দুঃখের বিষয় যেটা কেবলই মনে হচ্ছিল, আন্তর্জাতিক মানের অপূর্ব টেরাকোটা শিল্পশৈলীতে সম্বৃদ্ধ মন্দিরগুলি ও চণ্ডীমণ্ডপ যথাযথভাবে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে একদিন হয়তো স্থান নেবে ইতিহাসের পাতায়।
সময় থাকলে অবশ্যই শ্যামের পাঠ ও রাজবলহাটে রাজবল্লভী মাতার মন্দির দর্শন করতে পারেন। সঙ্গে কবি হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্মভিটে অবশ্য দ্রষ্টব্য।
কীভাবে যাবেন: হাওড়া থেকে ট্রেনে হরিপাল স্টেশনে নেমে সেখান থেকে অটোতে বা গাড়ি রিজার্ভ করে দর্শনীয় স্থানগুলি ঘুরে নিন।
কোথায় থাকবেন: থাকার জন্য রামকৃষ্ণমঠের অতিথি নিবাস সবচেয়ে ভালো জায়গা। তবে এক্ষেত্রে অগ্রিম বুকিং বাঞ্ছনীয়।
ফাইল চিত্র
14Months ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

পারিবারিক অশান্তির অবসানে গৃহ সুখ ও শান্তি বাড়বে। প্রেমের ক্ষেত্রে শুভ। কর্মে উন্নতি। উপার্জন বৃদ্ধি।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.২৬ টাকা৮৪.৩৫ টাকা
পাউন্ড১০৬.৪৬ টাকা১০৯.১২ টাকা
ইউরো৮৯.৭৬ টাকা৯২.২০ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা