বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
বিকিকিনি
 

ভ্রমণে ভোজনে ইষ্টিকুটুম

হ্যামিলটনগঞ্জে ইষ্টিকুটুম ফার্ম হাউস। অনবদ্য অভিজ্ঞতা লিখছেন জগন্নাথ ঘোষ

শীত ভোরের কুয়াশা রিসর্টের ফুল-ফল বসত-বাগিচা সব একান্নবর্তী করে তুলেছিল। সঙ্গে ভোরের শিফটে কোয়েল-দোয়েল ছাতারে চন্দনার অর্কেস্ট্রা ফ্রি গিফট। সেই কুয়াশার সিঁদ কেটে চলেছি অভ্র আর আমি। জানি, সামনেই কালজানি। যদিও নদীকে তখনও দেখিনি। অল্প আলো ফুটল। রোদ লুটিয়ে পড়ল মেটে পথে। নদী এসে ধরা দিল সামনে। নদীর ওপিঠে পাতলা জনপদ শেষে মেন্দাবাড়ির গভীর বনাঞ্চল। একঝাঁক বাচকা পাখি তার বুকে মালা দুলিয়ে উড়ে গেল। 
পঞ্চাশ বিঘার উপরে খামার বাড়ি এটি। কর্ণধার সুব্রত কুণ্ডুর এই খামারটি গড়ার আগে ধারণায় ছিল ভোজন যোগে ফুড ট্যুরিজম, ভ্রমণযোগে ছুট ট্যুরিজম। অর্থাৎ আহারবিহারকে সমান্তরালে চলমান রাখা। কুণ্ডুবাবুকে প্রশ্ন— ইষ্টিকুটুম এই মিষ্টি নাম পেলেন কোথায়?
—বিহঙ্গকুল ডেকে ডেকে বলে যাচ্ছে শোনেননি? 
সুব্রত একদমে খামারচরিত বলতে থাকেন। ব্যবস্থা খুব সরল। খামারজাত আনাজ ছিঁড়ে কুটে রান্নায় জুড়লে ভোজনটা জুতসই হল। জৈব চাষের চাল থেকে চালকুমড়ো, মাচার লাউ, খাঁচার পাখি, মাঠের ডিংলা, পালং, মুলো, চিচিঙ্গা, উচ্ছে, কাঁকরোল, ঢ্যাঁড়শ, ঝিঙে, পটল থেকে ওলকপি, ফুলকপি, শুঁটি, গাজর, বিট, আদা, স্কোয়াশ, লঙ্কা, লেবু তিন কিসিমের— গন্ধ, পাতি, কাগজি। লেটুস, পুদিনা, ধনিয়া— আনাজ গাড়ি চলতেই থাকবে। ঘুরতে গিয়ে চোখে পড়ল চা বাগানটি। শীতে চা গাছে ফুল এলে বিকেলে চায়ের পাতে চা ফুলের চপ বিশেষ পদ।
—এরকম বিশেষ আইটেম আর কী কী আছে? জানা গেল ভাতের পাতে, চায়ের পাতে, আড্ডার পাতে পড়তে পারে বকফুল ফ্রাই, চালকুমড়োর পকোড়া, বাঁশের কোঁড়ের ব্যাম্বু চপ অথবা কচি বাঁশকারি। আরও এক উপাদেয়— বেসনের চাদরে জড়িয়ে ব্রকোলির ক্রাঞ্চি ফ্রাই। শীত-শরৎ-বসন্তে ‘উড়ান ভোজ’- মোরগা কষা, নরম লুচি, সঙ্গে হোমমেড পিঠা কাস্টডাঙ্গা, মালপোয়া আর স্থানীয় মিঠাই ক্ষীরমালাই। দেখুন পরিচ্ছন্ন খাদ্যের পিঠে অবিচ্ছিন্ন প্রকৃতি। তোর্সা পারের টাওয়ারে বসে খুলুন লাঞ্চ বক্স। ওপারে জলদাপাড়া, এপারে গভীর বন।
ফার্ম হাউসের কুদরত দেখতে থাকি। একদিকে টিম্বার ফরেস্টে আছে কানাইডিঙা, হরীতকী, বহেড়া, শাল নিম, ময়না, গামার, জারুল, সেগুন পানিয়াল। পানিয়ালকে পেঁচিয়ে উঠেছে গোলমরিচ, লতা। তার পর্বসন্ধিতে কচি ফলের গুচ্ছ। বাগানে আম-জাম-নাশপাতি, গোলাপজাম, জামরুল, বেল, তাল, কাঁঠাল, কমলা, কামরাঙা, করমচা, জলপাই, আমড়া, আমলকী। সবই কুটুমের সেবার্থে। এখানে হার্বাল বেডের ধারণাটা দিয়ে যাই— বাসক ঘৃতকুমারী ওলটকম্বল, কালমেঘ, কালোচিতা, হাতিশুঁড়, আরও চলবে। ফুলের কেয়ারিতেও দিশি-বিদেশি পুষ্পশোভা।
সুব্রত বলেন ভ্রমণে ভোজন জুড়লে দুইয়েরই ওজন বাড়ে। গাছপাকা গন্ধরাজ দিয়ে শুরু। তারপর রসুনি শাক, ঢেঁকি সরষে কিংবা রাই শাক— যখন যেমন। ভাতের চুড়োয় ঘরোয়া ঘি। বকফুল ফ্রাই মরশুমে। পঞ্চরত্ন সব্জি, নবরত্ন ডাল। ঝিলা মাছের ঝাল। শটি কিংবা খুঁট্টি মাছের পাতুড়ি। ফালাকাটা আড়তের সাপ্লাই লাইন সাবলীল থাকলে রূপচাঁদা মাছের কালিয়া। পেঁপের চাটনি, পটকাপাড়ার বুঁদিয়া লাড্ডু, আলিপুরের (দুয়ার) ক্ষীরদই। ঋতু মেনে ফর্দ পাল্টাবে। উত্তরে কচুর কদর দুরন্ত— দুধকচু, ঘটকচু। শোলা, মান, ওলকচু, দ্বিমুখী, পাঁচমুখী। ডুয়ার্সের ২৮ বস্তির পঞ্চমুখী সেরা প্রোডাক্ট। ছিরকা রোটির সঙ্গে ছোলার ডালে চিংড়ি মাছের পাউডার ছড়িয়ে দিলে পাঁচতারা খানা। এ ছুট শীতে হলেই শুভ। কালচিনি বাজারে রেলগেট পেরলেই দু’-চার চা বাগান লাফিয়ে এসে রাধারানি বাগান ঘেঁষে পানা নদীতে নেমে কতক নির্জলা নদী— বসরা, পানা, গাঙ্গুটিয়া, রায়মাটাং। খুঁটি করুন শেষোক্ত নদী বেডে। সামনে গিরি প্রাচীর, ভাঁজে ভাঁজে বন। চোরা পথে চেরা নদী। এবারে লাঞ্চের ম্যাজিক বক্স খুলে পেলাম সরু দাঁত নুনিয়ার ভাত, পোরো নদীর কালো কাঁকড়ার কারি। কালজানির গোল্ডেন ট্যাংরা কষা, বানিয়ার মঞ্জরী বোরোলি বেসনের চাদর জড়িয়ে ফ্রাই। শেষ পাতে অভিনব উপহার জংলি পান। মেজাজে একটু চড়া হলেও স্বাদে খাসা। ইষ্টিকুটুম ফার্ম হাউসে যেতে হলে নামবেন হ্যামিলটনগঞ্জে। যোগাযোগ নম্বর ৮৩৭২০০৬৫৫২।   

25th     March,   2023
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ