বিশেষ নিবন্ধ

সংবিধানের উপর চূড়ান্ত হামলা
পি চিদম্বরম

সতর্কতার চিহ্নটি ছিল স্পষ্ট। আগামী দিনে কী আসছে, তা আঁচ করেছিল বিরোধী দলগুলি। কিন্তু তুচ্ছ জিনিসকে বিরাট করে দেখাতে ওস্তাদ উপদেষ্টারা দলীয় নেতাদের ভড়কে রেখেছেন বলেই মনে হচ্ছে। তামিলনাড়ু ছাড়া অন্য কোথাও যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত সৈন্যদের যুদ্ধক্ষেত্রে দ্রুত পাঠানো হয়নি। বিরোধীদের মহাজোট ‘ইন্ডিয়া’ পশ্চিমবঙ্গে গর্ভে মৃত শিশুর মতোই ভূমিষ্ঠ (স্টিল-বর্ন) হয়েছে। অন্যদিকে, নীতীশ কুমার তাঁর মার্কামারা ডিগবাজি দিয়ে বিহারে ‘ইন্ডিয়া’কে বেলাইন করতে চেয়েছিলেন প্রস্তুতি পর্বেই, কিন্তু তাতে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। মহারাষ্ট্রে দেখা যাচ্ছে, বন্ধু দলগুলি যখন আসন নিয়ে খেয়োখেয়িতে ব্যস্ত তখন বিজেপি মত্ত বিরোধী শিবিরের নেতা শিকারে।  উত্তরপ্রদেশে সমাজবাদী পার্টি এবং কংগ্রেস ঐক্যবদ্ধ হলেও তারা এখনও যুদ্ধে যোগ দিয়েছে বলে মনে হচ্ছে না। দিল্লি এবং ঝাড়খণ্ডে যখন সেনাবাহিনী যুদ্ধে নামতে প্রস্তুত, তখন তাদের জেনারেলরা জেলবন্দি। একমাত্র তামিলনাড়ুতেই ‘ইন্ডিয়া’ এবং বিরোধী দলগুলির মধ্যে সত্যিকার লড়াই ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে। এটি সেই প্রবাদটি মনে করিয়ে দিচ্ছে যে, ‘সুন্দর শুরু মানেই জয়ের অর্ধেকটা হাসিল’।
২৯টি রাজ্যের মধ্যে সাতটিতে কংগ্রেস এবং বিজেপির মধ্যে লড়াই এবার সরাসরি। এই প্রধান রণক্ষেত্রগুলি হল—কর্ণাটক, তেলেঙ্গানা, গুজরাত, রাজস্থান, হরিয়ানা, মধ্যপ্রদেশ ও ছত্তিশগড়। উল্টোদিকে, ওড়িশা এবং অন্ধ্রপ্রদেশে যা মঞ্চস্থ হতে যাচ্ছে তা বোধ করি লিখিত চিত্রনাট্য মেনেই, এই দুই রাজ্য প্রকৃত রণক্ষেত্র নয়।
অস্ত্রাগার
বিজেপি তার সম্পূর্ণ অস্ত্রাগার খুলে দিয়েছে। এর উপরে রয়েছে অসাংবিধানিক ইলেক্টোরাল বন্ডের (ইবি) মাধ্যমে সংগৃহীত বিশাল টাকার পাহাড়। ইবি সম্পর্কে সত্যটা এখন প্রকাশ্যে চলে এসেছে—এটাকে আমি ‘বৈধ ঘুষ’ হিসেবেই দেখিয়েছি। বেশকিছু কেসে ইবি হানা দিয়েছিল কিংবা অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। পরে তারা বন্ড কিনেছিল। সেসব ভাঙিয়েও নেওয়া হয়েছে। বন্ড ভাঙিয়ে নেওয়া এবং দানধ্যান হতেই সংশ্লিষ্ট কেসগুলি কবরে ঢুকে গিয়েছে। লাইসেন্স প্রদান ও চুক্তির মতো ক্ষেত্রে ‘ফেভার’ করার দৃষ্টান্তও এসেছে সামনে। দিনগুলি কাহিনি বলে দেবে। একটি সাধারণ সরল রেখা বিন্দুগুলিকে সংযুক্ত করবে। ‘যুদ্ধের জন্য জমানো বিশাল সঞ্চয়’ উজাড় হচ্ছে খবরকাগজ, টিভি ও বিলবোর্ড মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দেওয়ার জন্য। বিজেপি একটি পক্ষপাতদুষ্ট পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে খেলতে নেমেছে।
পরবর্তী পদক্ষেপের নাম ‘অপারেশন লোটাস’। এই খেলায় বিজেপির একেবারে পেটেন্ট নেওয়া রয়েছে। কিছু বিরোধী নেতাকে তারা দলত্যাগে ইন্ধন জোগায় এবং ওই দলত্যাগীদের টিকিট দেয়। আমার কাছে খবর রয়েছে যে, বিজেপি চারশোর কিছু বেশি লোককে এই ভোটে মনোনয়ন দেবে। ওই প্রার্থীদের মধ্যে  ৫০ জন পর্যন্ত থাকবেন দলত্যাগী।
রাজ্য সরকারগুলিকে অস্থির করা
অস্ত্রাগারে একটি প্রাণঘাতী অস্ত্র হল ‘গ্রেপ্তার এবং আটক’। এমন টার্গেটের মধ্যে রয়েছেন দুই মুখ্যমন্ত্রী, একজন উপ মুখ্যমন্ত্রী, একাধিক রাজ্যের মন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রীর পরিবারের সদস্য ও অন্যান্য নেতা এবং একাধিক বিরোধী রাজনৈতিক দলের কিছু নেতৃত্ব। বর্তমানে সংসদের উভয় কক্ষে বিজেপির এমপি ৩৮৩ জন। বিভিন্ন রাজ্যে বিজেপির বিধায়ক এবং বিধান পরিষদের সদস্য সংখ্যা যথাক্রমে ১৪৮১ এবং ১৬৩। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন প্রাক্তন অবিজেপি নেতারাও, যাঁরা দৈত্যাকার লন্ড্রি মেশিনে ‘হোয়াইটওয়াশ’-এর মাধ্যমে খাঁটি ও কলঙ্কমুক্ত হয়েছেন। আমি জানি না, উপরে যে ২০২৭ জন গেরুয়া জনপ্রতিনিধির কথা বলা হল, তাঁদের একজনেরও বিরুদ্ধে একটি ‘লাইভ অ্যান্ড কারেন্ট’ ইনভেস্টিগেশন চালু আছে কি না। যদি এমন কোনও জিনিস থেকে থাকে, তবে সেটি অবশ্যই বিরল ব্যতিক্রম এবং অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গেই তা চলছে।
রাজ্য সরকারের কাজকর্ম ব্যাহত করতে রাজ্যপালদের ব্যবহার করা হচ্ছে। তামিলনাড়ু রাজ্য সরকারের তৈরি করে দেওয়া ভাষণটি বিধানসভায় পড়তে অস্বীকার করেন সেখানকার রাজ্যপাল। একটি ঘটনায়, কার্যক্রম ফেলে রেখে তিনি বিধানসভা থেকে ‘ওয়াকআউট’ করেন রাজ্যপাল। মুখ্যমন্ত্রীর ‘সাহায্য ও পরামর্শ’ সত্ত্বেও এক ব্যক্তিকে মন্ত্রীর শপথবাক্য পাঠ করাতে তিনি অস্বীকার করেন। কেরল, তামিলনাড়ু এবং পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপালরা বারংবার মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে মৌখিক বিবাদে জড়িয়ে পড়েন। তেলেঙ্গানার রাজ্যপাল তথা পুদুচেরির লেফটেন্যান্ট গভর্নর কার্যত বেশ কয়েকমাস তামিলনাড়ুতে ছিলেন। লোকসভা নির্বাচনের নির্ঘণ্ট ঘোষণার দিন তিনি তড়িঘড়ি তাঁর পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে কোনও কুণ্ঠা ছাড়াই জানান যে, বিজেপির টিকিটে ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চলেছেন! বিলগুলিতে তাঁদের সম্মতি অনির্দিষ্টকালের জন্য প্রত্যাখ্যান করেছেন রাজ্যপালরা অথবা সেগুলি আটকে রেখেছেন তাঁরা। অথচ বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলিতে এই ধরনের অসাংবিধানিক কাণ্ড ঘটে না।
সংবিধানের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা
আর-একটি অস্ত্র হল রাজ্য সরকারগুলির স্থিতিশীলতা নষ্ট করে দেওয়া। এনসিটি দিল্লির সরকারকে পঙ্গু করে দিতে অল ইন্ডিয়া সার্ভিস অফিসারদের উপর ফরমান জারি করা হয়েছে যে তাঁরা সেখানকার মন্ত্রী এবং এমনকী মুখ্যমন্ত্রীরও নির্দেশ মানবেন না! কেরল এবং পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্য সরকারগুলির প্রাপ্য তহবিল নানা অজুহাতে আটকে রাখা হয়েছে। অবিজেপি রাজ্য সরকারগুলির তরফে ঋণগ্রহণের ঊর্ধ্বসীমা একাধিক শর্ত লঙ্ঘনের অজুহাতে কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। তামিলনাড়ুর জন্য দুর্যোগের ত্রাণ সহায়তা খারিজ করা হয়েছে নির্দিষ্ট কারণ না জানিয়েই।
রাজ্যের পুলিসের ডিজি নিয়োগে ইউপিএসসি’র তরফে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণের ইন্ধন জোগায় কেন্দ্রীয় সরকার। রাজ্যপাল এবং ইউজিসির মাঝে পড়ে, রাজ্যের অর্থে পরিচালিত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ প্রক্রিয়ায় রাজ্য সরকারের কর্তৃত্ব খর্ব হচ্ছে। ফলে, কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি আনুগত্যের কারণে, ক্ষমতার কেন্দ্রগুলি রাজ্য সরকারের কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করছে। ক্রমাগত অবক্ষয় ঘটছে রাজ্যগুলির স্বায়ত্তশাসনের।
আরএসএস-বিজেপি একটি এজেন্ডা নিয়ে চলে। আরএসএস নেতারা মনে করেন, এই এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য তাঁরা যথেষ্ট অপেক্ষা করেছেন। এবারের লোকসভা নির্বাচনে জয়লাভই হবে তাঁদের এজেন্ডা সম্পূর্ণ করার ‘লঞ্চ প্যাড’। এই এজেন্ডায় রয়েছে—ওয়ান নেশন ওয়ান ইলেকশন (এক দেশ এক নির্বাচন), অভিন্ন দেওয়ানি বিধি (ইউসিসি), নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ), ভূমি অধিগ্রহণ আইনের সংশোধনী, কৃষি আইন এবং প্রার্থনার স্থান আইন (প্লেসেস অফ ওয়ারশিপ অ্যাক্ট) বাতিল করা। এরপর বিজেপির নির্বাচনী ইস্তাহারে আরও কিছু খোলসা হতে পারে। এটাই হতে চলেছে চূড়ান্ত হামলা। 
• লেখক সাংসদ ও ভারতের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী। মতামত ব্যক্তিগত
3Months ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

পারিবারিক অশান্তির অবসানে গৃহ সুখ ও শান্তি বাড়বে। প্রেমের ক্ষেত্রে শুভ। কর্মে উন্নতি। উপার্জন বৃদ্ধি।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.২৬ টাকা৮৪.৩৫ টাকা
পাউন্ড১০৬.৪৬ টাকা১০৯.১২ টাকা
ইউরো৮৯.৭৬ টাকা৯২.২০ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা