বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
বিশেষ নিবন্ধ

আবেগের নাম ২১ জুলাই
হিমাংশু সিংহ

একুশে জুলাইয়ের বয়স তৃণমূলের চেয়ে পাঁচ বছর বেশি। কিন্তু বয়সে কী আসে যায়। দেখতে দেখতে স্বাধীনতা-উত্তর বাংলায় রাজনীতির প্রধান চালিকাশক্তিতে পরিণত আজকের শহিদ দিবসটি। ২১ জুলাই শুনলেই সুন্দরবন থেকে পাহাড়, কাকদ্বীপ থেকে কোচবিহারের মানুষ আছড়ে পড়ে কলকাতার রাজপথে। রক্ত ছলাৎ ছলাৎ করে ওঠে। আজ রবিবার অপরাহ্নে যখন লালবাজারের পোড়খাওয়া পুলিসকর্তা থেকে তাবৎ সংবাদমাধ্যম ধর্মতলার রাজপথে কত লোক হয়েছে, ৪...৫...১০ লাখ নাকি তারও বেশি! —এই গবেষণায় ব্যস্ত হয়ে পড়বে, তখন এক নেত্রীর আকাশের দিকে উদ্যত মুষ্টিবদ্ধ হাত জানান দেবে চার দশক পেরিয়েও তিনি অপ্রতিদ্বন্দ্বী, অপ্রতিরোধ্য। স্ট্রিট ফাইটার বিরোধী নেত্রী থেকে তাঁর সুশাসক মুখ্যমন্ত্রীতে উত্তরণের পরও তাঁর রথ ছুটছে। পেরিয়ে যাচ্ছে একের পর এক মাইলস্টোন। সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম, নেতাই, নানুর, চমকাইতলা, হাজরা মোড়ে তাঁর বাড়ির অদূরে হত্যার চক্রান্ত, কিছুই থামাতে পারেনি। শত নির্যাতন লাঞ্ছনা উপেক্ষা করেও অক্লান্ত সৈনিক। বামেদের বিদায় দিয়েও যে লড়াই থামেনি এতটুকুও, বরং আজ তা আরও সঙ্ঘবদ্ধ। 
শাসক হিসেবে টানা তেরো বছর পার করেও প্রতিষ্ঠান বিরোধিতাকে হারিয়ে তাঁর ডাকে এই স্বতঃস্ফূর্ত জনজোয়ার তারই প্রমাণ। লোকসভা ভোটে অভূতপূর্ব সাফল্যের পর আজ তিনি শুধু বিরোধীদেরই শাসন করেন না, নিজের দলের ছোটবড় নেতার বিচ্যুতি দেখলেও নিমেষে খড়্গহস্ত। একের পর এক নির্বাচনী সাফল্য রাজধর্ম পালনে পুলিসকে ফ্রিহ্যান্ড দিয়েছেন বলেই জোড়াফুলের নাম ভাঙিয়ে পাড়ার ছোট মাঝারি মস্তানরাও আর পার পাচ্ছেন না। বেআইনি বাড়ি ভাঙা শুরু হয়েছে। বুলডোজার নেমেছে। বিরোধীদের হুঁশিয়ারি দেওয়ার পাশাপাশি আজ কড়া ভাষায় মঞ্চ থেকে নিজের দলকেও সেই বার্তাই দেবেন নেত্রী। বলবেন, অন্যায় বরদাস্ত করা হবে না। অপরাধ দমনে কোনও রং দেখবে না তাঁর পুলিস ও প্রশাসন। বুঝিয়ে দেবেন, নিজের হাতে গড়া সংগঠনের বেনোজল দূর করাই এখন তাঁর পাখির চোখ। সেই রাজধর্ম পালনেই ব্রতী তিনি। ‘বঙ্গেশ্বর’ জ্যোতি বসুকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে যে অসামান্য লড়াকু নেত্রীর রাজনৈতিক অভিযাত্রা শুরু, দুঁদে ব্যারিস্টার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়কে হারিয়ে সংসদীয় রাজনীতিতে হাতেখড়ি, কালের নিয়মে বামেদের হটিয়ে এই বঙ্গে অপ্রত্যাশিত পালাবদলের কাণ্ডারী তিনিই। নিন্দুকেরা ভ্রু কোঁচকালেও বাংলার ইতিহাসে ছিয়াত্তরের মন্বন্তর, ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গের পাশে ২০১১ সালের পালাবদলও তাই জায়গা করে নেয় অবলীলায়। ফি বছর শ্রাবণ মাস পড়তেই আসে ২১ জুলাই। এবছর লোকসভা ভোটের সাফল্যের পর আজ নেত্রী কী বার্তা দেন সেদিকেই অধীর আগ্রহে তাকিয়ে সবাই।
গত দশ বছর ছলেবলে গেরুয়া শিবির বাংলা দখলের প্রাণপণ চেষ্টা করেও ব্যর্থ। দলবদলুরা চূড়ান্ত হতাশ। ষোলো সালের বিধানসভা ভোটের পর থেকে বাম-কংগ্রেস নিজেদের তৈরি করা চক্রব্যূহে ফেঁসে প্রায় নিশ্চিহ্ন। আর উনিশ ও চব্বিশ সালের লোকসভা ভোট এবং একুশ সালের বিধানসভা দখলের লড়াইয়ে হেরে বঙ্গ বিজেপিও ছত্রভঙ্গ। প্রতিবারই নির্বাচন এলে বাঁধাগতে মোদিজি ডেলি প্যাসেঞ্জারিতে নামেন। পিছন পিছন আসেন আরও মন্ত্রী-সান্ত্রিরা। কোটি কোটি টাকার বিমান, কপ্টার নিয়ে বাংলার উত্তর থেকে দক্ষিণ চষে ফেলেন। টাকা ও ক্ষমতার লোভ দেখিয়ে নেতা, উপনেতা কেনার ঢালাও ‘ভোট শপিং’ শুরু হয়। উত্তেজনা বাড়ে, কিন্তু ফল বেরতেই দেখা যায় সবই বিফলে গিয়েছে। নিছক পণ্ডশ্রম। কেন্দ্রের নির্দেশে ইডি, সিবিআই সব কাজ ছেড়ে এরাজ্যে আদাজল খেয়ে পড়ে থেকেছে কালীঘাটের সাধারণ ঘরের মেয়েটাকে জব্দ করতে। কিন্তু এঁটে উঠতে পারেনি। কখনও ভাঙা পায়ে ‘খেলা হবে’ স্লোগান, আবার কখনও লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, কন্যাশ্রী, সবুজসাথী, স্বাস্থ্যসাথীর আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তা অঙ্কুরেই বিনাশ করেছে দলবদলুদের স্বপ্নকে। দু’বছর বাদে ছাব্বিশের বিধানসভা ভোটেও যে পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক মানচিত্রের খুব একটা পরিবর্তনের আশা নেই, তা নিয়ে কারও আজ আর সংশয় নেই। সর্বভারতীয় বিজেপি ভেবেছিল তৃণমূল ভেঙে বাংলায় ডালপালা বিস্তার করবে। আজও সেই মরীচিকার ভ্রান্তিবিলাসেই আটকে মুরলীধর সেন লেনের বাসিন্দারা। তবে ৪ জুনের পর তাঁরা বেশ বুঝতে পারছেন, দু-চারজন নেতা-মন্ত্রীকে গারদে পুরে কিংবা দলবদল করিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পর্যুদস্ত করা অসম্ভব। তিনি অন্য ধাতুতে গড়া। বাংলার মানুষের কাছে এখনও তাঁর বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নাতীত। এই রসায়নের তল পায় না কোনও এক্সিট পোল সংস্থাও। বারেবারে তাই ফেল করে নিজেদের হাসির খোরাক করে সি ভোটার, অ্যাক্সিস থেকে তাবৎ সমীক্ষক সংস্থার ভোট পণ্ডিতরা। আসলে হাওয়ায় না ভেসে প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে একা মেরুদণ্ড সোজা রেখে রুখে দাঁড়ানোর ক্ষমতাই মমতার সারা জীবনের ইউএসপি।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আগুন-ঝরা আন্দোলন সংগ্রামের বীজ বপন করা হয়েছিল এই দিনেই, যা ধীরে ধীরে টর্নেডোয় পরিণত হয়ে সিপিএম নামক জাহাজটাকে মাঝ দরিয়ায় ডুবিয়ে দিয়েছে। অনেক চেষ্টা করেও সেই জাহাজের সন্ধান পাননি আলিমুদ্দিনের কর্তারা। এবছর ২১ জুলাইয়ের তিন দশক উত্তীর্ণ হয়ে ৩১ বছরে পা। এই দীর্ঘ সময়ে বাংলার রাজনীতি উত্তর থেকে দক্ষিণ, পূর্ব থেকে পশ্চিম আবর্তিত হয়েছে এক অসাধারণ নারীর আন্দোলন ও সংগ্রামকে আশ্রয় করে। সেই বিচারে ১৯৯৩ সালের ২১ জুলাই ও জ্যোতি বসুর পুলিসের গুলি চালনার বিরুদ্ধে গণপ্রতিবাদই প্রথমবার বামফ্রন্টের ভিত নড়িয়ে দিয়েছিল। পুলিসের নির্বিচারে গুলি, এক ভয়-না-পাওয়া নেত্রীর প্রতিরোধ এবং ১৩ তাজা প্রাণের শহিদ হওয়া। সবটাই আজ ইতিহাস। কিন্তু সেই শহিদদের স্মরণ করতেই প্রতি বছর ২১ জুলাইয়ের মহতী সমাবেশের আয়োজন। সাহাগঞ্জের অসীম দাস, পূর্ব মেদিনীপুরের আব্দুল খালেক, উত্তর কলকাতার বন্দনা দাস, বরানগরের বিশ্বনাথ রায়, উত্তর ২৪ পরগনার কেশব বৈরাগী, সোনারপুরের রতন মণ্ডল, গা‌ইঘাটার রঞ্জিত দাস, হরিদেবপুরের দিলীপ দাস, বিজয়গড়ের কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় কিংবা দক্ষিণ কলকাতার প্রদীপ রায়, যাদবপুরের শ্রীকান্ত শর্মা, পাতিপুকুরের মুরারী চক্রবর্তীরা নিশ্চয় উপর থেকে দেখছেন তাঁদের আত্মত্যাগ বৃথা যায়নি। তাঁদের বিশ্বাসের যোগ্য মর্যাদা দিয়েছেন নেত্রী।
সেদিন ছিল বামেদের অত্যাচার ও একাধিপত্য থেকে বাংলাকে দ্বিতীয়বার স্বাধীন করার সংগ্রাম। তারপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি। গত দশ বছরে বারেবারে বিজেপির ঔদ্ধত্য আর অহঙ্কারের কোমর ভেঙে দিয়েছে বাংলা। আর্থিক বঞ্চনা, হকের টাকা আটকানো আর বৈষম্যের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছে পাহাড় থেকে সাগর। নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে যে দল দেশে একনায়কতন্ত্র কায়েম করতে চেয়েছিল, ছলেবলে যারা চেয়েছিল বাংলাকে দখল করতে, তারা বারংবার এক জননেত্রীর সামনে পরাজিত। মেরুকরণ, বঞ্চনা-বৈষম্য ও মিথ্যাচারের জবাব এমনই হয়। হিটলারি স্টাইলে ‘অব কি বার ৪০০’ পার’ বা ‘মোদি হ্যায় তো মুমকিন হ্যায়’ স্লোগান আজ অস্তমিত। একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে লোকসভায় ২৭২ আসনের ম্যাজিক ফিগারই ছুঁতে পারেনি বিজেপি। আর বাংলায়? মাত্র ১২টি আসন জিতেই থেমে গিয়েছে গেরুয়া রথ। ২৯ আসনে জিতেছে তৃণমূল। সদ্যসমাপ্ত উপ নির্বাচনে ফল হয়েছে ৪-০। রায়গঞ্জ, বাগদা এবং রানাঘাট দক্ষিণেও জয়জয়কার জোড়াফুলের। নরেন্দ্র মোদির দম্ভের প্রত্যাখ্যান শুরু হয়েছে বাংলার মাটি থেকেই। তৃতীয়বারের জন্য প্রধানমন্ত্রীর গদি টিকিয়ে রাখতে মোদিজি আজ চন্দ্রবাবু নাইডু এবং নীতীশ কুমারের মুখাপেক্ষী। দু’দিকে দুটি ক্রাচ, মানে পদে পদে আপস, সমঝোতা। কয়েক মাস আগে তেলুগু দেশম প্রধানকে ‘ভ্রষ্টাচারী’ আখ্যা দিয়ে ইডি, সিবিআই আর আয়কর লেলিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এখন গদি বাঁচাতে সেই চন্দ্রবাবুর ১৬ জন সাংসদকে জামাই আদর করা শুরু হয়েছে। মানুষ বুঝিয়ে দিয়েছে, দেশের রাজনীতিতে কোনও ‘একনায়ক’এর ঠাঁই নেই! কেউ অপরিহার্য নয়! 
সবশেষে বলি, আমরা কেউই থাকব না একদিন। কিন্তু যতদিন পশ্চিমবঙ্গ থাকবে, বাংলা ও বাঙালির অস্মিতা বেঁচে থাকবে, ততদিন ২১ জুলাই থাকবে জ্বলন্ত প্রতিবাদের সাক্ষী হয়ে। বাঙালির আবেগের অপর নাম ২১ জুলাই। একুশ মানে সবুজ, একুশ মানে নতুন উদ্যমে যৌবনের পথচলা এবং সব প্রতিবন্ধকতাকে মাড়িয়ে দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলা। ‘আধমরাদের ঘা মেরে বাঁচানো’র কাজটাই মমতা অক্লান্ত নিষ্ঠায় করে যাচ্ছেন চার দশক ধরে, একের পর এক অচলায়তন ভেঙে দিয়ে।
6Months ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

পেশাগত উচ্চশিক্ষায় দিনটি বিশেষ শুভ। ধৈর্য ধরে মনোযোগ দিয়ে কাজ করুন সাফল্য পাবেন। অর্থ ও...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৫.৪৮ টাকা৮৭.২২ টাকা
পাউন্ড১০৫.০৯ টাকা১০৮.৮১ টাকা
ইউরো৮৮.৪৭ টাকা৯১.৮৫ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
25th     January,   2025
দিন পঞ্জিকা