বিশেষ নিবন্ধ

বাংলায় একই প্রোডাক্ট কতবার লঞ্চ করবেন মোদিজি!
হিমাংশু সিংহ

আবার চর্চাটা পাকছে। ভোট এলেই এমনটা হয়। অযোধ্যার উচ্চকিত মন্দির রাজনীতি, কৌশলী ভারতরত্ন প্রদান না লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের ডাবল ভাতা, কার পক্ষে যাবে জনগণের রায় এই বাংলায়? নির্মলার বাজেটে কানাকড়িও নেই গরিবের হাতে, সব তোলা ২০৪৭ সালের স্বপ্ন দেখার মৌতাতের জন্য। আর বাংলায় সীমিত ক্ষমতায় রাজ্য সরকার উদারহস্ত। জনগণের হাতে টাকা দেওয়া হচ্ছে তেইশ বছর পর নয়, টাটকা এই চব্বিশ সালেই। 
আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় তৃণমূল ক’টা পাবে রে, সান্ধ্য আলাপচারিতায় কেউ প্রশ্নটা ছুড়ে দেয়। এ ধরনের কথাবার্তা নির্বাচনী মরশুমে বড্ড চেনা, যত ধাঁধা শুধু ওই উত্তরটাতেই। ইদানীং ফ্ল্যাট কালচারে রক, যত্রতত্র মাঠ, গেরস্থের ছোট্ট জানলা দিয়ে উঁকি মারা এক চিলতে আকাশ, নিকনো উঠান সবই প্রায় অবলুপ্ত। মোবাইলে চোখ রাখতে রাখতে ক্রমাগত সঙ্কুচিত জমিয়ে বসে আড্ডার পরিসরও। গোটা ভুবনটাই আষ্টেপৃষ্ঠে ধরা মুঠোফোনের সাড়ে ৬ ইঞ্চি স্ক্রিনে। বারান্দায় মুখোমুখি নয়, বাঙালির বড্ড প্রিয় পরনিন্দা আর পরচর্চার অবলম্বনও হোয়াটসঅ্যাপ। অনাবিল আড্ডা বদলে গিয়েছে অচেনা পার্টিতে। আর পরিবার? সর্বসাকুল্যে আড়াইজনের। তবু ক্রমে বাঙালির ছোট হয়ে আসা, ভেঙে যাওয়া পরিসরেও এমন উৎসুক রাজনীতির আলোচনা ভেসে আসে কান পাতলেই। দোসর মেঠো উত্তাপ মাখা ফিসফিসানি। একুশের বিধানসভা ভোটে জল্পনাটা গাছে উঠেছিল। কে না জানে রাজনীতি হাজারো সম্ভাবনারই আঁকিবুকি শিল্প। দল আর জোটের পারমিউটেশন কম্বিনেশন। ভাঙাগড়া চলতেই থাকে। ইন্ডিয়া জোট ২৬ দল দিয়ে শুরু করে ২৮’- এ পৌঁছে আবার কলেবরে কমছে প্রতিদিন। একুশে দেখেছি, দিল্লি থেকে সকাল বিকেল উড়ে এসে ডেলি প্যাসেঞ্জারি এবং শাহি মেজাজে অমিতবিক্রম হুঙ্কার গেরুয়া বাহিনীর। তৃণমূল ভাঙার ছক। মোদিজি বাংলার দখল চান! সেই খোয়াইশ পূরণে বহিরাগতদের দাপাদাপি, টাকা ছড়ানো, একুশের ঐতিহাসিক বিধানসভা নির্বাচনে কম কিছু দেখেনি রাজ্যের মানুষ। মোদির জেনারেল দু’শো আসন জেতার খুড়োর কল ঝুলিয়েছিলেন বঙ্গের গেরুয়া নেতৃত্বের সামনে। পরীক্ষাটা ছিল ২৯৪ আসনে। নেতা বাড়ন্ত, তাই করোনার প্রকোপ একটু কমতেই তৃণমূল ভাঙিয়ে ‘লঞ্চ’ করা হয়েছিল দক্ষিণবঙ্গের এক দলবদলুকে। তাঁর বেড়ে ওঠা, সামান্য একজন জেলার নেতা থেকে মন্ত্রী, হোমরাচোমরা মায় সমাজের কেউকেটা হওয়া তৃণমূল থুড়ি কালীঘাটেরই সৌজন্যে। শুধু তাঁর বললে ভুল হবে। দলবদলুর মহামান্য পিতৃদেব সহ গোটা পরিবারেরই উন্নতির অনুঘটক ছিলেন জোড়াফুল ও একমেবাদ্বিতীয়ম্‌ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভাতিজার কথা জানি না, তবে দলবদলুর ভাইদের উন্নতির সোপানও তো কালীঘাটের আটপৌরে ওই মহিলাই! সে যাত্রায় দলবদলুর আহ্বানে তৃণমূল থেকে বেরিয়ে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিলেন অনেকে। তাতে আশ্বস্তও হয়েছিলেন দীনদয়াল উপাধ্যায় মার্গের কেষ্টবিষ্টুরা। ফল বেরতে বিফল মনোরথ হয়ে তাঁরা অধিকাংশই ফিরে গিয়েছেন পুরনো জায়গায়। একটা মহল তৈরির চেষ্টা হয়েছিল, জোড়াফুলের দিন শেষ, আমরাই আসছি। ফল বেরলে পিন পতন নীরবতা গ্রাস করেছিল বাংলার সীমা ছাড়িয়ে গেরুয়া দলের দিল্লির সদর দপ্তরকে। লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের গুঁতোয় গেরুয়া স্বপ্ন খানখান। অগত্যা স্বাস্থ্যসাথীর কার্ডে জখমদের চিকিৎসা। দলবদলুর লম্বা চওড়া কথায় বিশ্বাস করে গেরুয়া রথ সেই যাত্রায় গোত্তা খেয়ে একশোও পেরয়নি। সব সমীক্ষাকে মিথ্যা প্রমাণ করে রেকর্ড ২১৩ আসন জিতে তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসীন হয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপর গঙ্গা দিয়ে অনেক জল গড়িয়ে গিয়েছে। জেতা ৭৭ জন বিধায়ককেও ধরে রাখতে পারেনি বিজেপি। প্রতিদিন সংখ্যাটা কমছেই। পরাজয়ের সেই ক্ষত সরিয়ে আবার ময়দানে আগের বারের ব্যর্থ দলবদলুকেই ‘রি-লঞ্চ’ করার প্রক্রিয়া চলছে চব্বিশে, একেবারে কংগ্রেসের যুবরাজের স্টাইলে। প্রশ্ন একটাই, রাহুল গান্ধীকে নিয়ে প্রায়শই মোদিজি কটাক্ষ করেন। সংসদ থেকে প্রকাশ্য সড়কে। বলেন, একই প্রোডাক্ট কংগ্রেস কতবার ভোটরঙ্গে সামনে আনবে। অথচ তিনিই বাংলায় একই কাণ্ড ঘটাচ্ছেন। মাত্র ৭৭ জন বিধায়ককেও ধরে রাখতে না পারা দলের নেতাকে ভোট ময়দানে রি-লঞ্চ করে। নরেন্দ্র মোদির আশীর্বাদধন্য এহেন তৃণমূলের ঘরে খেয়ে বড় হওয়া নেতাকে আর কতবার মুখ করবে দীনদয়াল উপাধ্যায় ভবনের নেতারা। এবারও ব্যর্থ হলে আগামী বিধানসভা ভোটের আগে কি মুখ বদলাবে, না কংগ্রেসের মতো থোড় বড়ি খাড়া, আর খাড়া বড়ি থোড়ই চলবে অনন্তকাল! অসন্তোষ চাপা নেই বঙ্গ বিজেপির অন্দরে। কংগ্রেস অসহায় আর কাউকে না পেয়ে অগত্যা রাহুলকেই প্রোজেক্ট করতে হচ্ছে বারবার। কিন্তু দশ বছর কেন্দ্রে সরকার চালিয়েও বাংলায় মোদি, অমিত শাহের বিজেপির এই করুণ দশা কেন?
এবার আবার বাংলায় ৪২ আসনের লোকসভার খেলা। ইতিমধ্যেই নিদান হেঁকেছে বিজেপির গোমস্তারা, ৩৫ আসন চাই। যেন হাতের মোয়া। দশ বারোটা পাওয়াও যে কঠিন, তা বাজারি আলোচনা আর নেতানেত্রীদের ভাষণেই স্পষ্ট। এবার গেরুয়া দলের বুথ সংগঠনের অবস্থা গতবারের চেয়েও খারাপ। বিষয়টা দিল্লির নেতাদের অজানা নয়। পথসভায়, টকশোয় মুখে খই ফুটলেও অধিকাংশ বুথে বসানোর লোক যে মিলবে না তা দলবদলু থেকে আগমার্কা বঙ্গীয় আরএসএস কর্তারা বিলক্ষণ জানেন। আবার ডাবল লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, ৫০ দিনের কাজ, ৫ লক্ষ চাকরি আর ডিএ বৃদ্ধির গুঁতোতেই বাংলায় না চাকা বসে যায় গেরুয়া রথের! 
একথা অস্বীকার করার উপায় নেই তৃণমূলের পক্ষেও পরিস্থিতি একেবারে ‘কেক ওয়াক’ হবে না। সওয়া এক লক্ষ কোটি টাকা পাওনা মেটায়নি কেন্দ্র। টানা দু’বছর একশো দিনের কাজ, আবাসের টাকা আসা বন্ধ। মাথায় বাম আমল থেকে পড়ে পাওয়া চোদ্দো আনা বিশাল দেনা, যা এখন কলেবরে আরও বেড়েছে। কেন্দ্রের এই সীমাহীন অসহযোগিতা ও বঞ্চনার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পদে পদে এজেন্সি দিয়ে মন্ত্রী ও নেতানেত্রীদের হেনস্তা। বেডরুমে পর্যন্ত কাকভোর থেকে নানা অছিলায় হানা। একাধিক মন্ত্রী নেতা জেলে। এত দুর্নীতির অভিযোগ, আর্থিক সঙ্কট। এই অবস্থায় সওয়া দু’কোটি মহিলাকে ১ হাজার টাকা করে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, খুব সহজ কাজ নয়। তবু তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেই এতবড় চ্যালেঞ্জ নিতে পারেন। রাজনৈতিক জীবনের শুরু থেকেই প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই করে দাঁতে দাঁত চেপে এতটা পথ পেরিয়ে এসেছেন। মার, আঘাত, লাঞ্ছনা সহ্য করে জয় করেছেন একটার পর একটা বাধা। এবারও তিন বছর আগের বিধানসভা ভোটের ‘খেলা হবে’র স্টাইলে ময়দানে। বর্গীদের হাত থেকে বাংলাকে বাঁচাতে পারেন যে একমাত্র তিনিই।
তিনি ছবি আঁকেন, অনাবিল গান করেন, কবিতা লেখেন আর বাঙালির পালসটা বোঝেন মারাত্মক। দু’পাতা ইংরেজি পড়ে, দু’কলি রবীন্দ্রসঙ্গীত গেয়ে যাঁরা তাঁর শিল্পকর্মের ভুল ধরতে যান, তাঁরা শেষে ক্লিন বোল্ড হয়ে বাড়ি ফেরেন। আমি তাঁর শিল্পীসত্তার মূল্যায়ন করার কেউ নই, ওটা আমার কাজও নয়, তবে একটা জিনিসের তারিফ না করে পারি না, এত চাপের মধ্যেও তিনি সতেজ সবুজ শিল্পী মনটাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন কী করে! কোনও নেগেটিভ প্রচার তাঁর মনটাকে পেড়ে ফেলতে পারে না বলেই একের পর এক নির্বাচনে নতুন শক্তি নিয়ে তিনি ঝাঁপাতে পারেন অনায়াসে।  
এই লড়াইয়ে তাঁর শক্তির উৎস, ৬৭টি জনমুখী প্রকল্প, যার সঙ্গে গরিব জনগণের আত্মার যোগ। লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের ভাতা দ্বিগুণ হয়েছে। পাবেন ২ কোটি ১১ লক্ষ মা-বোন। অর্থাৎ উপকৃত হবে সমসংখ্যক পরিবার। প্রত্যক্ষভাবে উপকৃত রাজ্যের ৮ কোটি মানুষ। অনেক পরিবারে মা বার্ধক্য ভাতা পান আর মেয়ে পান লক্ষ্মীর ভাণ্ডার। অর্থাৎ দু’হাজার টাকা। গ্রামে একটা পরিবারের খরচ চলে যায় ওই টাকায়। আর এত আন্দোলন করেও এখনও পিএফের ৮০ শতাংশ শ্রমিক হাজার টাকা পেনশনের মুখ দেখল না। এখানেই কেন্দ্রের সরকারের সঙ্গে মমতার পার্থক্য। এই জোরেই সাধারণ বাঙালির ঘরে এখনও তিনি জনপ্রিয়তা শিখরে। রাজ্যের নারীশক্তির উত্তরণ সম্ভব হয়েছে তাঁর হাত ধরেই। স্বাস্থ্যসাথীর কার্ডও পরিবারের মহিলার নামে। সম্ভবত মহিলাদের জন্য এতটা গভীরভাবে আর কোনও মুখ্যমন্ত্রী আগে ভেবেছেন বলে মনে হয় না। বছরে দু’মাস কোনও কাজ থাকে না মৎস্যজীবীদের। তাদের জন্য দু’মাস ৫ হাজার টাকা করে আর্থিক সাহায্যও দেওয়া হয়েছে। রাজ্য কর্মীদের ডিএ বাড়ানো হয়েছে ৪ শতাংশ। জানুয়ারি থেকে সবে একদফা বৃদ্ধি কার্যকর হয়েছে। তার উপর আবার ৪ শতাংশ। বেতন বাড়ছে সিভিক ভলান্টিয়ারদেরও। করোনার সময় থেকে তিনি এভাবেই রাজ্যবাসীর হাতে টাকা তুলে দিচ্ছেন সীমিত ক্ষমতার মধ্যেও। 
লড়াই করেই তাঁর উত্থান। সেদিন অর্থবল ছিল না, আজকের মতো শক্তিশালী সংগঠনও ছিল না, শুধু ছিল সাহস আর বুকভর্তি আন্দোলনের আগুন। তাকে পাথেয় করেই বামেদের একের পর এক দুর্গ ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছেন। বামেরা আজ শূন্য, প্রায় অস্তিত্বহীন কংগ্রেসও। কেন্দ্রে ক্ষমতায় থাকার সুবাদে এবং কংগ্রেসের ধারাবাহিক ব্যর্থতার সুযোগে এরাজ্যেও ক্রমাগত আগ্রাসী মোদি অমিত শাহের বিজেপি। গত একুশ সালের বিধানসভা ভোটে তার চূড়ান্ত রূপ দেখেছে বাংলার মানুষ। তবু হারাতে পারেনি অগ্নিকন্যাকে। এবার লোকসভা নির্বাচন দুয়ারে কড়া নাড়ছে। একুশে প্রধানমন্ত্রীর ডেলি প্যাসেঞ্জারি রুখে দিতে পেরেছেন। এবার? যাঁর জীবনটাই লড়াই তাঁকে থামানো কঠিন। এই চব্বিশের ভোটের ফল তাই বাংলা ও বাঙালির রাজনীতির জন্য অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী বার্তাই বয়ে আনতে চলেছে।
5Months ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

পারিবারিক অশান্তির অবসানে গৃহ সুখ ও শান্তি বাড়বে। প্রেমের ক্ষেত্রে শুভ। কর্মে উন্নতি। উপার্জন বৃদ্ধি।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.২৬ টাকা৮৪.৩৫ টাকা
পাউন্ড১০৬.৪৬ টাকা১০৯.১২ টাকা
ইউরো৮৯.৭৬ টাকা৯২.২০ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা