বিশেষ নিবন্ধ

ব্যুমেরাং হচ্ছে মোদিজির সার্জিক্যাল স্ট্রাইক
সন্দীপন বিশ্বাস

মোদি সরকারের কফিনে প্রথম পেরেকটি মেরে দিল কর্ণাটক। দক্ষিণের এই রাজ্যটি চূর্ণ বিচূর্ণ করে দিল মোদি ম্যাজিকের শূন্যগর্ভ অহঙ্কার। সেই সঙ্গে দক্ষিণ ভারতে সাফ হয়ে গেল বিজেপি। এভাবেই একে একে শূন্যতায় ভরে উঠছে প্রধানমন্ত্রীর সাধের স্বপ্ন। ভেবেছিলেন হিন্দুত্বের মৌলবাদী শক্তি দিয়ে সারা ভারতে উড়িয়ে দেবেন গেরুয়া নিশান। কিন্তু এখন মাত্র কয়েকটা রাজ্যেই টিকে রয়েছে বিজেপি। তাই গেল গেল রব উঠেছে অন্দরে। ঝোড়ো হাওয়ায় মোদিজি পপাত ধরণীতল হওয়ার আশঙ্কার প্রহর গুনছেন। হাতে আর বেশি সময় নেই। ঘাড়ের কাছে এসে নিঃশ্বাস ফেলছে ২৪-এর ভোট। ছত্রখান শিবিরের মধ্যে বসে তাই নতুন করে ঘুঁটি সাজানোর পরিকল্পনা শুরু করেছেন মোদিজি অ্যান্ড কোম্পানি। তারই প্রথম পদক্ষেপ হল কিরেন রিজিজুকে সরিয়ে দেওয়া। আগামী দিনে দেশের অর্থনীতির ভেঙে পড়ার দায়ভার নির্মলা সীতারামনের ঘাড়ে চাপিয়ে তাঁকেও সরিয়ে দেওয়া হতে পারে। ২০২৪-এর আগে মোদিজি শুদ্ধকরণ ব্রত পালন করতে শুরু করেছেন। এই ব্রতের লক্ষ্য হল, বাকিরা সব দোষী, আমি ক্লিন। বিজেপি বিশ্বাস করে, মোদিজির এই ক্লিন ভাবটাকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে না পারলে, বিজেপি হারবেই। তাই একে একে দলের নেতাদের শূলে চড়ানোর প্ল্যান চলছে। 
তবে কোনও প্ল্যানই কাজ করবে বলে মনে হয় না। কেননা, বিজেপির বাক্সে ভোট আসে একমাত্র মোদিজির মুখ দেখে, সেই মুখের মাহাত্ম্যই যদি  নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে প্রোপাগান্ডা করে কোনও লাভ হবে বলে মনে হয় না। কেননা ব্যুমেরাং হচ্ছে মোদিজির সার্জিক্যাল স্ট্রাইক!
সাহিত্যিক সাদাত হাসান মান্টো সেই কবে বলে গিয়েছেন, ‘খালি পেট কা মজহব রোটি হোতা হ্যায়।’ অর্থাৎ ভুখা পেটের একমাত্র ধর্ম হল রুটি। সেই রুটির বদলে মোদিজি ক্ষুধার্ত মানুষের পাতে মন্দির, রাম, হনুমান চালিশা, ঘৃণা, জাতপাত এইসব দিতে চাইলেন। বিজেপি নিজেদের ব্যর্থতাকে জাতিবিদ্বেষের উস্কানি দিয়ে ঢাকতে চাইল। কিন্তু তা হতে পারে না। মানুষ এইসব পলিসিকে প্রত্যাখ্যান করবেনই। সেই প্রত্যাখানের প্রথম প্রহর চলছে। কেননা হিন্দুরাও এই ধর্মবিদ্বেষটা পছন্দ করছেন না। সেটা বুঝিয়ে দিয়েছে হিমাচল প্রদেশ ও কর্ণাটক। আর এখানেই মোদিজির ভয়টা একলাফে অনেকখানি বেড়ে গিয়েছে। হিমাচল প্রদেশে হিন্দু জনসংখ্যা কত? পঁচানব্বই শতাংশ। কর্ণাটকে হিন্দু জনসংখ্যা কত? চুরাশি শতাংশ। তাও বিজেপিকে হারতে হল। হিন্দুত্বের ইস্যু঩কেই ছিঁড়ে ফেলে দিলেন হিন্দুরা। কুশিক্ষার অন্ধ তামসিকতায় ভারতকে ঢেকে ফেলার চক্রান্তকে গণতান্ত্রিক উপায়ে বাতিল করে দেওয়ার এই প্রচেষ্টাকে কুর্নিশ জানাতেই হয়। 
আরও একটা সত্যকেও নির্মমভাবে বুঝিয়ে দিয়েছে এই নির্বাচন। সেটা হল কর্ণাটক রাজ্যের মানুষ বিশ্বাস করেছেন, সিবিআই, ইডি দিয়ে বিরোধীদের মৃগয়া করার খেলা মোদির পক্ষে অত সহজ হবে না। কেন? তার উত্তর ডি কে শিবকুমার। এবারে কর্ণাটকে কংগ্রেসের বিজয় পতাকা ওড়ানোর অন্যতম কাণ্ডারী তিনি। বিজেপির ড্রামাবাজিটা একটু দেখা যাক। ২০১৭ সালের ২ আগস্ট সাতসকালে শিবকুমারের বাড়িতে ঝাঁপিয়ে পড়লেন আয়কর দপ্তরের অফিসাররা। রাজ্যের ৬৭টি বাড়িতে ৮০ ঘণ্টা ধরে তল্লাশি চালালেন ৩০০ জন অফিসার। অফিসাররা সব মিলিয়ে হিসাব বহির্ভূত ৩০০ কোটি টাকা উদ্ধার করলেন। ২০১৯ সালের ৩ সেপ্টেম্বর শিবকুমারকে হিসাব বহির্ভূত অর্থ সংগ্রহ এবং কর ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হল। তিহার জেলে ৫০ দিন কাটানোর পর জামিন পেয়ে বেরিয়ে এসেছিলেন শিবকুমার। মোদি সরকার ভেবেছিল, দুর্নীতির কাদা ছিটিয়ে শক্তিশালী বিরোধী মুখকে লড়াইয়ের ময়দান থেকে বাইরে ছুঁড়ে ফেলে দেবেন। কিন্তু তা হয়নি। উল্টে শিবকুমার, সিদ্ধারামাইয়ার তাণ্ডবে বিজেপিই মাঠের বাইরে। গেরুয়া বাহিনীর ৩০ জন প্রার্থীর জামানতই বাজেয়াপ্ত হয়েছে। তাহলে ধ্রুবসত্যটা কী দাঁড়াল? রাজ্যের মানুষ বিশ্বাস করেছিলেন, শিবকুমারের গ্রেপ্তার ছিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। ক্ষমতার সুযোগে মোদি সরকার বিরোধীদের পিছনে ইডি, সিবিআই লেলিয়ে অপদস্থ করতে চাইছে, কলঙ্কিত করতে চাইছে। তাই ভোটের বাক্সে মানুষ যোগ্য জবাব দিয়েছেন। ২০১৮-র ভোটে কনকপুরা কেন্দ্রে শিবকুমার জয়ী হয়েছিলেন ৮০ হাজার ভোটে। এবার তিনি জিতেছেন ১ লক্ষ 
২২ হাজার ভোটে। বিজেপি প্রার্থী দ্বিতীয় স্থানে থাকলেও তিনি ভোট পেয়েছেন মাত্র ৯.৩ শতাংশ। গণতন্ত্রে এর থেকে যোগ্য ও উপযুক্ত জবাব আর কিছু হতে পারে না। সমস্ত হিংসা, ঘৃণা, উস্কানি, 
ধর্মান্ধতা, বেরোজগারির বিরুদ্ধে আগামী ২০২৪-এ একটাই জবাব হতে পারে, সেটা হল কেন্দ্রে সরকার বদলের শপথ। দেশ বাঁচানোটাই এখন দেশবাসীর কাছে বড় পরীক্ষা। 
সুতরাং ‘দাবাং’ নেতা মোদির এটাও ভয় যে, বিরোধী শিবিরে সিবিআই, ইডির ঝড় তুলে জনমত আদায় করা যাচ্ছে না। উল্টে পাল্টা প্রতিক্রিয়া হিসাবে বিজেপির প্রতি বিদ্বেষ বাড়ছে জনগণের। এটা ঠিক, মানুষ বুঝতে পারছেন, এই খেলা একটা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার জাল বিছানো ছাড়া আর কিছুই নয়। সব রাজ্যেই বিরোধীদের পিছনে দৌড় করানো হচ্ছে ইডি, সিবিআইকে। এই খেলা পশ্চিমবঙ্গেও বিজেপির আরও ক্ষতি করবে। বিজেপি যত বেড়ে খেলবে, ততই তার পায়ের নীচ থেকে মাটি সরে যাবে। কেননা, মানুষ বুঝে গিয়েছেন, কার অঙ্গুলিহেলনে সংস্থাগুলি কাজ করে, কার নির্দেশে চরিতার্থ হয় এইসব খেলা। আসলে ওই সংস্থাগুলি যেন সরকারের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার অস্ত্র মাত্র। মোদিজি নিজেও বুঝছেন, সার্জিক্যাল স্ট্রাইক ব্যুমেরাং হচ্ছে।  
এবার আসা যাক কিরেন রিজিজু প্রসঙ্গে। কতবড় ধাক্কা খেয়ে রিজেজুকে সরাতে বাধ্য হলেন প্রধানমন্ত্রী? যে কারণে তাঁকে মোদি আইনমন্ত্রী করেছিলেন, সেই কাজে তিনি সফল হননি। আইনমন্ত্রী নিজেই সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে সংঘাতে চলে গিয়েছিলেন। বারবার তাঁর ঔদ্ধত্যমূলক মন্তব্য বুঝিয়ে দিচ্ছিল, তিনি দেশের প্রধান বিচারপতিরও যেন ওপরে। বেশ কয়েকটি ইস্যুতে সেই সংঘাত প্রকাশ্যে এসে গিয়েছিল। মোদির সবুজ সঙ্কেত ছাড়া যে রিজিজু এসব বলেছেন, তা মনে হয় না। কিন্তু তাতে হিতে বিপরীত হয়েছে। বিশেষ করে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায় সরকারের বিরুদ্ধে গিয়েছে। ‘কাঠপুতলি’ নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের ক্ষমতা একচেটিয়া মোদির হাত থেকে সরে গিয়েছে। ২০২৪-এর আগে বিজেপির কাছে এটা একটা বিরাট ধাক্কা। তাই সরকারের সঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের সম্পর্ক আরও তলিয়ে যাক, সেটা চাননি মোদিজি। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের মেয়াদ আগামী বছরের নভেম্বর পর্যন্ত। নির্বাচনের সময় তিনিই থাকবেন প্রধান বিচারপতি পদে। তাই অনেকটা ডিফেন্সিভ খেলে মোদি রিজিজুকে সরিয়ে ‘ভাবিজি পাঁপড়’ খ্যাত মেঘাওয়ালকে নিয়ে এলেন। 
সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক কিছু রায় কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধেই গিয়েছে। অনেকগুলি রায়ে মুখ পুড়েছে মোদি সরকারের। কেজরিওয়ালের ক্ষমতা কাড়তে মোদিজি অর্ডিন্যান্স জারি করেছিলেন, দিল্লিতে শেষ কথা বলবেন রাজ্যপাল। সেই অর্ডিন্যান্সকে খরিজ করে দিয়েছিল প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চ। একাধিক মামলায় চন্দ্রচূড়ের রায় সরকারের বিপক্ষে যাওয়ায় আতঙ্ক সৃষ্টি হয় বিজেপির অন্দরে। তাই রিজিজুকে ‘বলি’ দিয়ে চন্দ্রচূড়ের সঙ্গে সখ্যের বার্তা দিলেন প্রধানমন্ত্রী। কেননা খেলা তাঁর হাতে বাইরে। 
আর একটা খেলার দিকে নজর দেওয়া যাক। সামনেই আরও কয়েকটি বিধানসভার ভোট। সেখানেও কোথাও কোথাও পরাজয় নিশ্চিত বুঝেই মোদিজি অন্য চাল দিতে শুরু করেছেন। সেই চালের একটি অঙ্গ হল দু’হাজার টাকার নোট বাতিল। একদিন কালাধন নির্মূল করতে পাঁচশো, হাজার টাকা বাতিল করে দু’হাজার টাকার নোট চালু করেছিলেন মোদিজি। আবার কালাধন নির্মূল করার যুক্তি দেখিয়ে দু’হাজার টাকার নোট বাতিল করলেন। সহজ প্রশ্ন হল, পাঁচশো, হাজার টাকার নোটে যদি কালাধন তৈরি হয়, তাহলে কি দু’হাজারি নোটে কালাধন হতে পারে না? অর্থনীতিবিদরা বলছেন, আরও বেশি হতে পারে। তখন মানুষকে ভুল বোঝাতে বলা হয়েছিল, এই নোটে চিপ লাগানো আছে। ভক্তরা বলেছেন, মাটির নীচে পুঁতে রাখলেও ঠিক জানতে পারবে সরকার, ইডি। আজ তো এই নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত স্পষ্ট করে দিল, সেদিনের পুরো খেলাটাই একটা চিপ গেম ছিল। এখন তদন্ত করে দেখা দরকার, সেদিন হঠাৎ করে দু’হাজার টাকা চালু করায় লাভ কার হয়েছিল? নাকি সবটাই মোদিজির ভুল সিদ্ধান্তের নতিজা? মোদিজি পঞ্চাশ দিন চেয়েছিলেন। বলেছিলেন, অর্থনীতি বদলে দেবেন। পারেননি। ছাতি চাপড়ে বলা একটা প্রতিশ্রুতিও তিনি রাখতে পারেননি।  
কিন্তু মোদি ভক্তরা এসব মানতে রাজি নন। তাঁরা বারবার মানুষকে বিভ্রান্ত করতে গলা ফুঁড়ে চিৎকার করে বলে যাচ্ছেন, ২০১৬ সালের মতোই এবার ২০০০ টাকার নোট বাতিল করে মোদিজি ফের সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করেছেন। ভক্তরা জানেন না, পুরোপুরি অসত্যের উপর সাজানো বিজেপির এই সৌধ ২০২৪-এর আসল সার্জিকাল স্ট্রাইকেই ধূলিসাৎ হবে।
14Months ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

পারিবারিক অশান্তির অবসানে গৃহ সুখ ও শান্তি বাড়বে। প্রেমের ক্ষেত্রে শুভ। কর্মে উন্নতি। উপার্জন বৃদ্ধি।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.২৬ টাকা৮৪.৩৫ টাকা
পাউন্ড১০৬.৪৬ টাকা১০৯.১২ টাকা
ইউরো৮৯.৭৬ টাকা৯২.২০ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা