বিশেষ নিবন্ধ

রাজ্য কংগ্রেসের নীতি স্থির করা দরকার
সমৃদ্ধ দত্ত

রাজ্যসভায় পশ্চিমবঙ্গ থেকে কংগ্রেসের এমপি কতজন? দুজন। রাজ্যসভায় পশ্চিমবঙ্গ থেকে নির্বাচিত হতে গেলে একজন প্রার্থীকে ৪৯ জন বিধায়কের সমর্থন প্রয়োজন হয়। এই দুজনের মধ্যে একজন নির্বাচিত হয়েছেন ২০১৭ সালে। এরাজ্যের কংগ্রেস নেতা প্রদীপ ভট্টাচার্য। আর অন্যজন নির্বাচিত হয়েছেন ২০১৮ সালে। জাতীয় স্তরের কংগ্রেস নেতা অভিষেক মনু সিংভি। ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে কংগ্রেসের সঙ্গে বামফ্রন্টের জোট হয়েছিল। তারা জোট করে তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল। সেই ভোটে কংগ্রেস এককভাবে ৪৯ টি আসন পায়নি। কম আসন পেয়েছিল। তাহলে ঠিক পরের বছর তাঁদের প্রার্থী জয়ী হলেন কীভাবে রাজ্যসভায়? দরকার তো ৪৯ বিধায়কের ভোট? কারণ, তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়করা সমর্থন করেছিলেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন, তাঁর দলের ৫ জন প্রার্থী 
জয়ী হবেন সংখ্যার জোরে। ষষ্ঠ আসনের জন্য 
তিনি কংগ্রেস প্রার্থীকে সমর্থন দিতে রাজি আছেন। সেটাই হয়েছিল। কংগ্রেস খুশি হয়েছিল। ধন্যবাদ জানিয়েছিল তৃণমূলকে। 
একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি তার পরবর্তী বছরেও। অর্থাৎ ২০১৮ সালে। অভিষেক মনু সিংভিও জয়ী হয়েছিলেন তৃণমূলের দেওয়া সমর্থনের জেরে। 
১১ মার্চ ২০১৮ সালে বিধানসভায় অভিষেক মনু সিংভি বলেছিলেন, আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ জানাই আমাকে সমর্থন করার জন্য। 
বাংলা থেকে নির্বাচিত হতে পেরে আমি গর্বিত। এই সমর্থন নিয়ে নিজেদের দুই এমপিকে রাজ্যসভায় পাঠানোর পরও কংগ্রেস ২০২১ সালে বামফ্রন্টের সঙ্গেই জোট করেছিল। 
রাজ্য কংগ্রেসের এক মুখপাত্র সম্প্রতি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণ করার লক্ষ্যে ব্যক্তিগত এবং অশালীন মন্তব্য করেছেন। কংগ্রেস বারংবার বলে তৃণমূল একটি নীতিহীন দল।  কংগ্রেস এই রাজ্যের অন্যতম বিরোধী দল। তারা শাসক দলকে পরাস্ত করার জন্য যে কোনও নীতি গ্রহণ করতেই পারে। সেটা রাজনীতির অঙ্গ। সেই বিরুদ্ধতার ভাষা তারাই নির্ধারণ করবে। সেই ভাষা প্রয়োগের জেরে তাদের দলীয় ভাবমূর্তি খুব উজ্জ্বল হল অথবা কালিমালিপ্ত হচ্ছে কি না, সেই চিন্তা তাদেরই। তারা যথেষ্ট বুদ্ধিমান ও প্রাচীন ঐতিহ্যের একটি দল। আর তার দীর্ঘমেয়াদি ইতিবাচক অথবা নেতিবাচক পরিণামের জন্যও তৈরি থাকতে হবে। অর্থাৎ জনমানসে তাদের সম্পর্কে কী ধারণা তৈরি হচ্ছে। বিজেপি এবং সিপিএমের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। সর্বাত্মকভাবে বিরোধীরা চাইবে যাতে শাসক দল যে কোনও নির্বাচনে পর্যুদস্ত হোক। আর সেই লক্ষ্যপূরণ করার জন্য রাজনৈতিকভাবে যা যা পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন সেটাই সচরাচর নিয়ে থাকে যে কোনও বিরোধী। 
তৃণমূলের বিরুদ্ধে আপসহীন লড়াই করতেই পারে সিপিএম। তৃণমূলকে ক্ষমতাচ্যুত করতে মরিয়া হয়ে ধর্ম থেকে জাতি যে কোনও ভোটব্যাঙ্ককে কাছে টানার চেষ্টা করবে বিজেপি, এটাই প্রত্যাশিত। সেই পদক্ষেপগুলি যদি অরাজনৈতিক হয় অথবা সামাজিকভাবে ক্ষতিকর হয় কিংবা শালীনতার গণ্ডি ছাড়িয়ে যায়, সেক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ অবশ্যই প্রত্যাখ্যান করবে। করেওছে এই রাজ্যে বহুবার। সাধারণ মানুষের মধ্যে দুটি অংশ থাকে। একটি সরব। তারা প্রকাশ্যে বুঝিয়ে দেয় বেশি বেশি কথা বলার মাধ্যমে যে, তারা কোন দলকে সমর্থন করে কিংবা কোন দলের বিরুদ্ধে তাদের কী কী অভিমত। আর একটি শ্রেণি থাকে। তারা নীরব। ট্রেনে, বাসে, অফিসে, কোর্টে, বাজারে, ফেসবুকে এই অংশটি নিজের অভিমত উচ্চগ্রামে বলে না, শোনে বেশি। এই দলটি রহস্যময়। এদের বোঝা যায় না। যারা সরব, তাদের কথা শুনে অথবা তাদের দেখেই আমাদের অনেক সময় ভ্রান্ত ধারণা হয়, রাজনীতির জল বুঝি ওই দিকেই গড়াচ্ছে। তারপর ভোটে আমাদের বিস্ময় হয় অন্যরকম ফলাফল দেখে। তাই সমাজের নীরব শ্রেণির মনোভাব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।  
এই যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ব্যক্তিগতভাবে অশালীন আক্রমণ করা চলে এবং তৃণমূলকে নীতিহীন দল হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়, এসব বিরোধী দল হিসেবে কংগ্রেস সঠিক মনে করে বলেই করেছে। সেটা নিয়ে প্রশ্ন নেই। কংগ্রেসের অবস্থান স্পষ্ট। তৃণমূল খারাপ। তাই পরিত্যাজ্য। তৃণমূলকে মানুষ যেন সমর্থন না করে। এই হল কংগ্রেসের স্পষ্ট তত্ত্ব। 
সাধারণ মানুষ আজ যদি  প্রশ্ন করে, ১)  ২০১৬ সালে কংগ্রেস বামফ্রন্টের সঙ্গে জোট করে তৃণমূলকে পরাস্ত করার জন্য ঝাঁপিয়েছিল। খুব স্বাভাবিক পদক্ষেপ। হতেই পারে। কিন্তু তার এক বছরের মধ্যে রাজ্যসভা ভোটে সেই তৃণমূলের সমর্থন গ্রহণ করতে রাজি হয়ে গেল কেন কংগ্রেস। তৃণমূল তো খারাপ দল ছিল? আবার পরবর্তী বছরেও একই দাতা গ্রহীতার সম্পর্ক স্থাপন করা হল কেন? ২০১৮ সালে যাদের সমর্থনে আমাদের দুজন এমপি রাজ্যসভায় গেলেন, ২০২১ সালে আবার তাদের পরাস্ত করতে বামফ্রন্টের সঙ্গে জোট করলাম কেন? মানুষকে কী বার্তা দিলাম? 
২) তৃণমূলকে লাগাতার নীতিহীন মনে করে এবং মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত অশালীন আক্রমণগুলি করার আগে রাজ্য কংগ্রেস তৃণমূলের সমর্থনে রাজ্যসভায় যাওয়া তাদের দুই এমপিকে পদত্যাগ করতে বলে না কেন? সেটাই তো সবথেকে বড় এক সিদ্ধান্ত হতো যে, নীতির জন্য আমরা কোনও 
আপস করি না। আমাদের কাছে রাজ্যসভায় দুজন এমপির শক্তির থেকেও স্বচ্ছ নীতি এবং নীতিহীনদের বিরুদ্ধে লড়াইই প্রধান টার্গেট! কই সেটা তো হচ্ছে 
না! কেন? কংগ্রেস এই নীতিহীনতার বোঝা মাথায় নিয়ে চলেছে কেন?
৩) রাজ্য কংগ্রেস এখন থেকেই অফিসিয়ালি কেন ঘোষণা করছে না যে, ২০২৪ সালের ভোটে দিল্লির হাইকমান্ড যদি বিরোধী জোটে তূণমূলকে স্থান দেয়, তাহলে তারা বিদ্রোহ করবে!  প্রদেশ কংগ্রেস আনুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তাব গ্রহণ করে সেই রেজোলিউশন কেন রাহুল গান্ধী, সোনিয়া গান্ধী, মল্লিকার্জুন খাড়্গেদের পাঠিয়ে দিচ্ছে না যে, আমাদের পক্ষ থেকে সম্পূর্ণ আপত্তি জানানো রইল। ওরকম দিল্লিতে দোস্তি আর রাজ্যে কুস্তির মতো হাস্যকর ভাবমূর্তি নিয়ে আমরা সাধারণ মানুষকে বোঝাতে পারব না যে ওসব সিপিএমের কালচার। তারা কেরলে কুস্তি করে। আবার সুবিধা মতো বাংলা বা ত্রিপুরায় দোস্তি 
করে কংগ্রেসের সঙ্গে। সিপিএম অবশ্য খুবই ইন্টারেস্টিং পার্টি। সাগরদিঘিতে কংগ্রেসের জয়ে যেভাবে সিপিএম প্রবল উচ্ছ্বাসে বিজয়োৎসব পালন করেছে, সেই দৃশ্যটি দেখে কাশীপুর বরানগর দমদম গণহত্যায় নিহত সিপিএম কর্মীদের আত্মা যারপরনাই আহ্লাদিত হচ্ছে নিশ্চয়ই! 
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত কুৎসার এই রাজনীতি বিরোধীরা গ্রহণ করতেই পারে। এটা তাদের সিদ্ধান্ত। কিন্তু এখানে একটি আশঙ্কা লুকিয়ে আছে। সেটি হল, তাহলে কি বিরোধীরা ধরেই নিয়েছে শুধুই রাজনৈতিকভাবে আক্রমণ করে, অসংখ্য প্রশাসনিক ও বিভাগীয় অনিয়মের অভিযোগে আন্দোলন বিক্ষোভ করেও আর তৃণমূলকে পরাস্ত করা যাবে না? বহু চেষ্টা করেও বিগত ১১ বছরে কোনও ইস্যুতেই পরাস্ত করা যায়নি? এখন তৃণমূলের বিরুদ্ধে তো অসংখ্য অভিযোগে সর্বদাই সরব বিরোধীরা। রাস্তায় নেমে আন্দোলন, বিক্ষোভ সবই চলছে। যা রাজনীতিরই অঙ্গ। এই যেমন সাগরদিঘিতে নির্বাচনে পরাস্ত করল তৃণমূলকে। এটাই তো পথ হওয়া উচিত ছিল! 
কিন্তু প্রশ্ন হল, তাহলে এই ব্যক্তিগত কুৎসা আর  অশালীন আক্রমণগুলির প্রয়োজন পড়ছে কেন? বিশেষ করে রাজনীতির ইতিহাসচেতন বঙ্গবাসীর কাছে পীড়াদায়ক হল, কোন দলকে এটা করতে হচ্ছে? ভারতের জাতীয় কংগ্রেস! যাদের ঐতিহ্য নিছক প্রাচীনত্বে নয়। এই দল বাংলা এবং জাতীয় স্তরকে অসামান্য সব বাগ্মী উপহার দিয়েছে। আজও সর্বভারতীয় রাজনীতিতে তীক্ষ্ণতম বুদ্ধি ও শিক্ষার রাজনৈতিক ভাষ্য পাওয়া যায় কংগ্রেসের বহু নেতার মাধ্যমে। সব দলের কিন্তু অতীত ইতিহাস ও ঐতিহ্য থাকে না! তাই যাদের থাকে, তাদের অনেক সংযত, সংহত ও ইমেজ রক্ষায় সতর্ক থাকতে হয়। পারিপার্শ্বে আমরা যতই উচ্চকিত অশালীনতা দেখি না কেন, সাধারণ মানুষের সমাজে আজও কিন্তু  শিষ্টাচারের একটি বিশেষ আবেদন আছে! ওই যে বললাম নীরব শ্রেণি। তারা সব নজরে রাখে! রাখছেও! 
16Months ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

পারিবারিক অশান্তির অবসানে গৃহ সুখ ও শান্তি বাড়বে। প্রেমের ক্ষেত্রে শুভ। কর্মে উন্নতি। উপার্জন বৃদ্ধি।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.২৬ টাকা৮৪.৩৫ টাকা
পাউন্ড১০৬.৪৬ টাকা১০৯.১২ টাকা
ইউরো৮৯.৭৬ টাকা৯২.২০ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা