বিশেষ নিবন্ধ

বিজেপি মাছরাঙারই একটি নগণ্য প্রজাতি
হারাধন চৌধুরী

‘কঠিন লড়াইয়ের মধ্যে আমাদের কার্যকর্তারা তাঁদের সেরাটাই দেন। তবে, এবারের ব্যাপারটার সঙ্গে অন্যবারের তুলনা চলে না। তাই জয়ী হওয়ার মতো ভোট পাওয়ার পক্ষে যা দরকার সেটাই আমাদের করতে হবে।’ —গুজরাত রাজ্য বিধানসভা ভোটগ্রহণের একসপ্তাহ আগে এটাই বলেছেন হর্ষদ প্যাটেল। প্যাটেল ভারতীয় রাজনীতিতে একটি চেনা মুখ। তিনি একাধারে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের দীর্ঘদিনের ইলেকশন এজেন্ট, অন্যদিকে সবরমতী বিধানসভা কেন্দ্রের প্রার্থীও। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে হর্ষদ এই মন্তব্য করার দিনকয়েক বাদে, শনিবার প্রকাশিত হয় বিজেপির ‘গুজরাত সঙ্কল্পপত্র ২০২২’। এই নির্বাচনী ইস্তাহারেই পরিষ্কার, প্যাটেলের বক্তব্যের মধ্যে আত্মবিশ্বাসের বদলে আতঙ্কই বেশি। আতঙ্কটা তাঁর একার নয়, মোদি, শাহসহ গোটা গেরুয়া পরিবারের। সঙ্কল্পপত্রজুড়ে ওই আতঙ্কেরই কাতর ছায়া। 
এই সেদিনও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলির ‘রেউড়ি সংস্কৃতি’-র মুণ্ডপাত করে হাততালি কুড়িয়েছেন। অথচ, শনিবার প্রকাশিত সঙ্কল্পপত্রে যে ৪০ দফা প্রতিশ্রুতি গেরুয়া শিবির থেকে দেওয়া হয়েছে তার বেশিরভাগই ভোটের উপহার। বিজেপির পক্ষে আরও দুর্ভাগ্য এই যে এগুলির বেশিরভাগই কংগ্রেস অথবা আম আদমি পার্টির (আপ) টুকলি! আর আছে বাংলার নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দুয়ারে রেশন, কন্যাশ্রী এবং সবুজসাথীর অক্ষম অনুকরণ। অর্থাৎ বাজারে যত ছেঁড়া ফাটা জুতো রাস্তার পাশে পড়ে রয়েছে, কুড়িয়ে বাড়িয়ে সেসবেই পা গলিয়ে দিয়েছে সঙ্ঘ পরিবারের সবচেয়ে আদুরে ছানাটি। 
১২ নভেম্বর প্রকাশিত কংগ্রেসের ইস্তাহারে সব মেয়েকে নিখরচায় উচ্চশিক্ষা অব্দি পড়াবার কথা বলা হয়েছে। সংবিধান দিবসে প্রকাশিত বিজেপির ইস্তাহারে বলা হয়েছে, মেয়েদের কেজি টু পিজি পড়তে কোনও খরচ লাগবে না। ওইসঙ্গে যোগ করা হয়েছে, কলেজ-পড়ুয়া মেধাবী কন্যাদের একটি করে স্কুটার উপহার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি। মেয়েদের জন্য এই গেরুয়া প্রতিশ্রুতির স্বচ্ছতা নিয়েই প্রশ্ন ওঠে। কারণ, মেধাবী ছাত্রীর মাপকাঠি কী হবে? এই প্রসঙ্গে আরও বলা দরকার, ভারতের মতো জনবহুল দেশে তীব্র প্রতিযোগিতা সবক্ষেত্রে। সব শ্রেণির মেধাবীরা এই প্রশ্নে দু-চার ধাপ এগিয়েই থাকে। অর্থাৎ বহু সুযোগ এমনিতেই উন্মুক্ত থাকে তাদের জন্য। বরং যারা নিম্ন, এমনকী মধ্যমেধারও তাদের সমস্যাটা চিরকালের। নানাভাবে সহায়তা ও উৎসাহ দিয়ে তাদের দু-একধাপ এগিয়ে নিয়ে যেতে না-পারলে তারা যথার্থ প্রতিযোগী হয়ে উঠতে পারে না। সেক্ষেত্রে প্রতিযোগিতাগুলি ঘুরিয়ে শুধু মেধাবীদের জন্যই সংরক্ষিত হয়ে যায়। সপ্তমবার ক্ষমতায় ফিরতে মরিয়া মোদিরা এই প্রতিশ্রুতি কি ভেবেচিন্তে দিয়েছেন? এই ব্যবস্থাটি পিছিয়ে পড়া মেয়েদের আরও পিছিয়ে রাখারই অপচেষ্টা বইকি!  
রান্নার গ্যাস, চিকিৎসা বিমা ও পশুপালন বিষয়ক বিজেপির প্রতিশ্রুতিগুলি কংগ্রেস এবং আপ-এর সঙ্গে অসুস্থ প্রতিযোগিতার ঊর্ধ্বে উঠতে পারেনি। আদিবাসী সম্প্রদায় নিয়েও অনেক লম্বা-চওড়া ভাষণ মিলেছে বিজেপির ইস্তাহারে। চাকরি এবং রাজ্যের আর্থিক শ্রীবৃদ্ধির প্রশ্নে মোদির পার্টির সঙ্কল্প শুনে অতীতের একাধিক অসত্য প্রলাপের স্মৃতি ফিরে আসতে বাধ্য। বিজেপির দাবি: আগামী পাঁচবছরে গুজরাত এক ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি পাবে। ২০ লক্ষ নতুন চাকরিও হবে ছেলেমেয়েদের। তার মধ্যে মেয়েদের চাকরি হবে লক্ষাধিক। (পাঁচ ট্রিলিয়ন ডলারের ভারত নির্মাণ এবং বছরে দু’কোটি চাকরির কথা মনে পড়ছে না কি?) 
পরিষ্কার বোঝা যায়, চাকরি সংক্রান্ত প্রতিশ্রুতি কংগ্রেস এবং আপ-এর রামগুঁতোর ফল। কারণ এই দুই প্রধান বিরোধী দল বলেছে, সরকারি দপ্তর এবং রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলির দশ লক্ষ শূন্যপদ তারা পূরণ করবে। তারা এখানেই থেমে থাকেনি, এরপরও যারা বেকার রয়ে যাবেন তাঁদের যন্ত্রণা দূর করতে দেবে বেকার ভাতা। তারা ফেরাবে ওল্ড পেনশন স্কিম (ওপিএস)। সরকারি চাকরির পরীক্ষায় দুর্নীতির সঙ্গে যুক্তদেরও শেষ দেখে ছাড়বে। 
গুছিয়ে প্ল্যান সাজাবার পরেও বিজেপির ভীতি 
যে কাটেনি সেটা তাদের প্রার্থী নির্বাচন এবং প্রচার কৌশলেই মালুম হয়। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এবং উপমুখ্যমন্ত্রীসহ মোট ৪২ জন সিটিং এমএলএ-কে ছেঁটে ফেলা হয়েছে। গতবার পথের কাঁটা ছিলেন 
এমন কয়েকজনকে এবার প্রিয় ফুলের মতোই পরম আদরে হাতে তুলে নিয়েছে বিজেপি। যেমন অল্পেশ ঠাকুর ও হার্দিক প্যাটেল। গেরুয়া শিবিরের হয়ে 
ব্যাট ধরেছেন আরও অন্তত জনা পনেরো কংগ্রেস বিধায়ক। তবু পথ ছাড়ে না আতঙ্ক। গতবার গোহারা হওয়া সমস্ত কেন্দ্রের প্রচারের সভামুখ্য আদি ও অকৃত্রিম নরেন্দ্র মোদি!
রাজনৈতিক মহলের খবর, এবারের ভোটে যে-হারে প্রতিশ্রুতি এবং টাকা/উপঢৌকন উড়ছে তার কাছে অতীতের সব রেকর্ডই নাকি ম্লান হয়ে গিয়েছে। এজন্যই কি পশ্চিমাঞ্চলের এই রাজ্যে অর্থনৈতিক অপরাধ বৃদ্ধি নিয়ে স্পিকটি নট নাড্ডা সাহেবের সঙ্কল্পপত্র?     
৮ ডিসেম্বর, যেকোনও একটি দল বা জোট অবশ্যই বিজয়ীর হাসি হাসবে। প্রতিবার যেমন হয়। তাই সঙ্গত প্রশ্ন ওঠে, কমবেশি প্রতিটি রাজ্যের এবং সামগ্রিকভাবে সারা দেশের এই বেহাল দশা কেন? আসলে কোনও দল বা জোটই কথা রাখায় বিশ্বাস রাখে না। শুধু গোলেমালে ক’টা কঠিন দিন পার করার জন্য যা করার তা-ই করা হয়। এজন্য ‘অমৃতকাল’-এ প্রবেশ করেও বিলোতে হচ্ছে গুচ্ছ গুচ্ছ অসার আশ্বাস। একজন বোকা মানুষের চোখেও তা বমাল ধরা পড়ে যাচ্ছে। 
গুজরাতের রাজনীতি আরও দেখিয়ে দিল, তারা নারীকে কোনওভাবেই ভয় পায় না। ১৮২ আসনের বিধানসভার ভোটে সব দল এবং নির্দল মিলিয়ে প্রার্থী ১,৬২১ জন। তাঁদের মধ্যে মহিলা মাত্র ১৩৯! বিজেপি ১৮, কংগ্রেস ১৪, বিএসপি ১৩, আপ ৬, এআইএমআইএম ২, সিপিএম ১।  ভাবুন, 
যেখানে মোট ভোটদাতার অর্ধেকই মহিলা সেখানে তাঁদের প্রতিনিধিত্বের উপর কোনও দলই গুরুত্ব দেয়নি। এটাই পরিতাপের পরম্পরা! বিজেপির ভাবখানা এই যে, আদিবাসী সম্প্রদায়ের এক নেত্রীকে রাষ্ট্রপতি পদে বসিয়ে তারা মাথা কিনে নিয়েছে! অতএব নারীকল্যাণ নিয়ে অধিক ভাবনার আর কী আছে? এমনকী আইনসভার ৩৩ শতাংশ আসন সংরক্ষণেরও বিরোধী শাসক দল। গুজরাত রাজ্য বিজেপি মহিলা শাখার প্রধান দীপিকাবেন সর্বদার পরিষ্কার বক্তব্য, এমন সংরক্ষণ নিষ্প্রয়োজন। কেন? দলীয় কর্মীদের মধ্যে পুরুষই সর্বাধিক। তাই তাঁদেরই উপযুক্ত সুযোগ দেওয়া কর্তব্য। 
বিজেপি বুঝিয়ে দিয়েছে, ‘পার্টি উইথ আ ডিফারেন্স’ বলে বাস্তবে কিছুই নেই। সব পাখিই মাছ খায়, তাই পাখিমাত্রেই মাছরাঙা। বিজেপি মাছরাঙারই একটি নগণ্য প্রজাতি।    
এই অবাঞ্ছিত আবহে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত যে হচ্ছে তার নাম সমাজ। সমাজের চোখে—ধাপ্পাবাজি এবং বৈষম্যের বিস্তার ক্রমে রাজনীতির সমার্থক হয়ে উঠেছে। রাজনীতি হল নেতৃত্ব প্রদানে যোগ্যতর ব্যক্তিত্বের উত্থানের পরিসর। অথচ সেই জায়গাটিকেই নোংরা করে দিচ্ছে কিছু রাজনৈতিক দল। মানুষ দ্রুত রাজনীতি-বিমুখ হচ্ছে। যুব শ্রেণির উজ্জ্বল অংশটি রাজনীতির আকর্ষণ খুঁজে পাচ্ছে না কোনওভাবেই। এমনকী, প্রশাসনিক চাকরিতে যোগদানের উৎসাহও হারিয়ে ফেলছে তাদের একটি বড় অংশ। কারণ, তারা ধরে নিচ্ছে, নষ্ট রাজনীতির ভিতর থেকে উঠে আসা কিছু লোকই দণ্ডমুণ্ডের কর্তা হচ্ছেন। আইএএস, আইপিএস হয়ে টিকে থাকতে শেষমেশ তাঁদেরই হুকুম তালিম করতে হবে! হায়, উৎসাহিত এবং চূড়ান্তভাবে লাভবান হচ্ছে দুর্বৃত্ত বা লুম্পেন শ্রেণিটা। 
20Months ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

পারিবারিক অশান্তির অবসানে গৃহ সুখ ও শান্তি বাড়বে। প্রেমের ক্ষেত্রে শুভ। কর্মে উন্নতি। উপার্জন বৃদ্ধি।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.২৬ টাকা৮৪.৩৫ টাকা
পাউন্ড১০৬.৪৬ টাকা১০৯.১২ টাকা
ইউরো৮৯.৭৬ টাকা৯২.২০ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা