বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
অমৃতকথা
 

জীবন

মিলারেপার অমিত যোগশক্তি, অসীম করুণা, অলৌকিক জীবন যে কেবল নিষ্ঠা ও প্রচেষ্টার ফল, একথা শিষ্যেরা নিঃসংশয়ে মেনে নিতে পারতেন না, কারণ তাঁদের মনে এই ধারণাই বদ্ধমূল হয়ে গিয়েছিল যে এই লোকোত্তর পুরুষের দেবদুর্লভ জীবন কখনোই একটি জীবনের তপস্যার ফলে সম্ভব হয় নি। তাঁদের মনে হতো, এ কোন ছদ্মবেশী দৈবশক্তি— স্বয়ং তথাগত বুদ্ধের সাক্ষাৎ অবতার। তাঁদের ভাব বুঝে মিলা বলতেন, ‘তোমাদের কথার প্রতিবাদ করতে চাই না। কার অবতার আমি, সে সংবাদ আমি রাখি না— রাখার প্রয়োজনও বোধ করি না। তোমাদের বিশ্বাসে হস্তক্ষেপ করে, আমি তোমাদের ভাব ভঙ্গ করতে চাই না। আমি জানি, যে অবতারই আমি হই, আমার এই সুদীর্ঘ জীবনের তপস্যার পূর্বে আমি বদ্ধ জীব ছাড়া আর কিছুই ছিলাম না। আমার প্রতি প্রীতি ও বিশ্বাসে, যদি তপস্যাকে খর্ব করে অবতারত্বের মহিমাকে বাড়িয়ে দেখো—তা হলে ধর্মের প্রতি তোমাদের বিষম অবিচার করা হবে। আমার সম্বন্ধে যা বিশ্বাস করো তাতে তোমাদের বা আমার কোন রকম ক্ষতিবৃদ্ধি নেই, কারণ বিশ্বাস যদি আন্তরিক হয়, তাতে বিশ্বাসের অনুরূপ লাভই তোমাদের হবে। কিন্তু সেই বিশ্বাসে যদি তপস্যাকে অবহেলা করো, তাহলে প্রার্থিত বস্তু লাভ করা সহজ হবে না। আধ্যাত্মিক অগ্রগতির পথে লোকে যখন অকারণে অথবা সামান্য কারণে, নির্বিচারে নিজেকে অবতারের আসনে সমারূঢ় করে তোলে, তখনই সে বুদ্ধির দোষে ও আত্মাভিমানে অবনতির পথটি বেছে নেয়। আমি তোমাদের বারংবার বলেছি, এখনও বলছি—এ পথে কোনরকম অহঙ্কারেরই স্থান নেই। এ পথের একমাত্র সম্বল জ্বলন্ত বিশ্বাস, প্রাণবন্ত নিষ্ঠা, অনমনীয় দৃঢ়তা—এবং অনলস তপস্যা। পূর্ববর্তী মহামানবদের জীবনধারা অনুসরণ করো, বিচার করে দেখো তাঁরা কিভাবে মোহময় সংসারকে সবলে প্রত্যাখ্যান করে কঠিন তপস্যায় আত্মনিয়োগ করেছিলেন, সর্বদা স্মরণে রাখো যে মাথার উপরে মৃত্যুর করাল ছায়া উদ্যত হয়ে আছে, এবং এই ভাবে তপস্যায় লেগে থাকো। এ ছাড়া আর অন্য কোন পথ নেই— কারণ সর্বস্ব ত্যাগ না করলে সর্বস্ব লাভ করা যায় না। যা কিছু আমি পেয়েছি যা কিছু আমি হয়েছি—সব এই ভাবেই সম্ভব হয়েছে; অন্য কোন সহজ পন্থার কথা আমি জানি না, সে রকম কোন পথ আছে বলেও মানি না।’ ‘তপস্যা-তপস্যা-তপস্যা’ শুনতে শুনতে শিষ্যেরা হাঁপিয়ে উঠেছিলেন। তাঁরা সবিনয়ে নিবেদন করলেন, ‘প্রভু, আপনার এই অত্যাশ্চর্য তপস্যাময় জীবনের অভিজ্ঞতায়, কঠোর কৃচ্ছ্র সাধনের নিরবচ্ছিন্ন অধ্যায় ছাড়া আর কিছুই কি নেই?’ মিলা সহাস্যে বললেন, ‘কেন আমার প্রথম জীবনের মূঢ়তায় কি তোমরা হাস্যরসের খোরাক কিছুই পাও নি?’ শিষ্যেরা বললেন, ‘তা হয়তো আছে, কিন্তু হাসি-কান্নার পার্থক্য সেখানে এত কম যে হাসতে গিয়েও আমরা সে সব কাহিনী শুনতে শুনতে কেঁদে ফেলেছি। তাই আমাদের মাঝে মাঝে ইচ্ছা করে, নিছক হাসির কথা আপনার মুখ থেকে কিছু কিছু শুনি।’ মিলা বললেন, ‘তপস্যাকে যতক্ষণ বাইরে থেকে দেখো, ততক্ষণ তাকে কঠিন বলেই মনে হয় বটে; কিন্তু তার অভ্যন্তরে যে আনন্দের স্বতঃস্ফূর্ত প্রস্রবণ, তাকে দেখতে হলে সদর ছেড়ে একটু অন্দরের দিকে পা বাড়াতে হয়। তারপরে সকল তপস্যার অবসানে যখন মুক্তিপথের সন্ধান মেলে, এবং সেই বহু দুঃখের আবিষ্কৃত পথ ধরে যখন অগণিত পথহারা দুঃখজয়ের পথে দলে দলে এগিয়ে চলে— এতটুকু জীবনে সে আনন্দ রাখবার স্থান কোথায়?
বিভূপদ কীর্ত্তির ‘মিলারেপা তিব্বতের প্রাণপুরুষ’ থেকে

11th     January,   2023
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ